আইএস সংগঠনটি দ্বারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে কারা? কারাই বা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ?
আইএস কে যদি ইসলামী সংগঠন বলা হয়, তাহলে “ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম” নাস্তিকদের এই দাবীটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যায়। মূলত ইসলামকে যারা সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তারাই আইএস কে ইসলামী সংগঠন দাবি করে। যদিও আইএসের অধিকাংশ কর্মকান্ডই ইসলামসম্মত নয়, তবুও অনেক অসচেতন মুসলিম না বুঝে কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে তাদেরকে সমর্থন দেয়। অথচ আইএস যে ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায় সেটা কুরআন-সুন্নাহ সম্মত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা নয়, বরং তাদের মনগড়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্রব্যবস্থা।
যেমন- ইসলামী রাষ্ট্রে বিধর্মীদের নিরাপদে বসবাস করার অধিকার থাকে, কিন্তু আইএসের সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে সেই ব্যবস্থা নেই। সাধারন নিরীহ অমুসলিমদের ক্ষতিসাধন করা ইসলামে নিষিদ্ধ হলেও, আইএসের মগের মুল্লুকে কোন অমুসলিমের বেঁচে থাকার অধিকারই নেই! এমনকি কারনে-অকারনে মুসলিমদের ক্ষতিসাধন করতেও পিছপা নয় সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শত্রুরাষ্ট্র ইসরাঈল কিংবা আমেরিকার ন্যুনতম ক্ষতিসাধন করতে পারেনি আইএস, উল্টো মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এতে কি প্রমান হয় না- তারা ইসলাম রক্ষা করা নয় বরং ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ধ্বংস করার কাজে নিয়োজিত? সিরিয়ার লক্ষ লক্ষ মুসলিমের দেশান্তরী হওয়ার পেছনে আইএসের ভূমিকা ভূলে গেলে চলবে না। আশ্রয়ের জন্য এসব মুসলিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ধর্ণা দিয়েছে, আয়লানের মত অসংখ্য মুসলিম শিশুর মৃত্যূর দায় শুধু আমেরিকা কিংবা ইজরাইলের নয়- আইএসের ঘাড়েও বর্তায়। আইএসের উগ্র কর্মকান্ডের কারনে সারা বিশ্বজুড়ে সাধারন মুসলমানরা অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছে। অমুসলিম রাষ্ট্রে মুসলিমদেরকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে, নিগৃহীত ও অপমানিত করা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে বাধ্য- এ কেমন জিহাদী সংগঠন, যাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে সাধারন মুসলিমরা পর্যন্ত নিরাপদ না? এ কেমন ইসলামী সংগঠন যাদের হামলার লক্ষবস্তু থেকে বাদ পড়ছে না মসজিদ পর্যন্ত? ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে ইসলামকে বিতর্কিত ও সমালোচিত করছে আইএস। ফলে অমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা পাচ্ছে এবং ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহও হারাচ্ছে। অন্যদিকে দূর্বল ঈমানের মুসলিমরা জঙ্গীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য ইসলামকে দায়ী মনে করে ধর্মের উপর থেকে বিশ্বাস হারাচ্ছে। ইসলামকে ঘৃণা করে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারনে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের প্রবণতাও এজন্য কমে যাচ্ছে। যদিও এখনো বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল ধর্ম হল ইসলাম, কিন্তু এই হারটা আরো অনেক বেশি হত যদি না আইএসের মত সন্ত্রাসবাদীরা ইসলামকে বিতর্কিত করত।
আমার প্রশ্ন হল-
১। আইএস যেভাবে চলছে, সেভাবে কি তারা কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?
২। আইএসের কর্মকান্ড কি ইসলাম কিংবা মুসলমানদের কোন উপকারে আসছে?
৩। নাকি মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংস করার জন্য আমেরিকাকে সুযোগ করে দিচ্ছে তারা?
৪। আইএসের উগ্রপন্থী কর্মকান্ডে কি ইসলামের প্রচার কিংবা প্রসার হচ্ছে?
৫। নাকি ইসলামের শত্রুদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর ব্যবস্থা দিচ্ছে তারা?
৬। তাদের কর্মকান্ডের কারনে আমেরিকা/ইসরাইলের বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নাকি মুসলিমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে?
একটু ভাবলেই আমরা এ সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব। আমরা এটাও অনুধাবন করতে পারব- আইএস মূলত আমেরিকা সাজানো একটি সংগঠন ছাড়া কিছুই নয়। যাদের উদ্দেশ্য-
১। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করে মুসলিম জাতিকে পঙ্গু করে দেয়া
২। মুসলিম দেশগুলোর খনিজ সম্পদ হস্তগত করা
৩। মুসলিমদের ঐক্য নষ্ট করা এবং তাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দল ও বিভেদ সৃষ্টি করা
৪। ইজরাইলের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা
৫। সারা বিশ্বে ইসলামকে বিতর্কিত ও সমালোচিত করার মাধ্যমে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস করা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন