মাযহাব কি এবং কেন?

মাযহাব কি রাসূল,সাহাবী এবং তাবেঈ কারো মানার
দলীল আছে?
জবাব:
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
মাযহাব কি
মুজতাহিদ হল কুরআন সুন্নাহ, সাহাবাদের ফাতওয়া, কুরআন
সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ঐক্যমত্বে
এবং যুক্তির নিরিখে কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা
বেরকারী গবেষক দলের নাম। যারা নিষ্ঠার সাথে
বিভিন্ন মূলনীতি নির্ধারণ করে কুরআন সুন্নাহর বাহ্যিক
বিপরীতমুখী মাসআলার মাঝে সামাঞ্জস্যতা
এনেছেন। কুরআন সুন্নাহর একাধিক অর্থবোধক
শব্দের নির্ধারিত পালনীয় অর্থকে নির্ধারিত করে
দিয়েছেন। নতুন উদ্ভূত মাসআলার শরয়ী মূলনীতির
আলোকে সমাধান বরে করেছেন। সেই সাথে
নতুন নতুন মাসআলার কোন মূলনীতির আলোকে
হুকুম আরোপিত হবে যার বিধান সরাসরি কুরআন
সুন্নাহে বর্ণিত নেই, সেই মূলনীতিও নির্ধারিত
করেছেন। মূলত সেই গবেষক দলের নাম হল
মুজতাহিদ। আর তাদের উদ্ভাবিত মূলনীতির
আলোকে বের হওয়া মাসআলার নাম মাযহাব।
এবং কেন?
মাযহাব পালনের কথা এই জন্য বলা হয় যে, যেহেতু
কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে আলেম খুবই নগণ্য। যারাও
আছে তারা কুরআনে কারীমের কোন আয়াতের
হুকুম রহিত হয়ে গেছে, কোন আয়াতের হুকুম
বহাল আছে, কোন আয়াত কোন প্রেক্ষিতে
নাজিল হয়েছে, কোন আয়াত কাদের উদ্দেশ্য
করে নাজিল হয়েছে। কোন আয়াতাংশের প্রকৃত
অর্থ কি? আরবী ব্যাকরণের কোন নীতিতে
পড়েছে এই বাক্যটি? এই আয়াত বা হাদীসে কী
কী অলংকারশাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? ইত্যাদী
সম্পর্কে বিজ্ঞ হন না। সেই সাথে কোনটি
সহীহ হাদীস কোনটি দুর্বল হাদীস? কোন
হাদীস কি কারণে দুর্বল? কোন হাদীস কী
কারণে শক্তিশালী? হাদীসের বর্ণনাকারীদের
জীবনী একদম নখদর্পনে থাকা আলেম এখন
নাই। অথচ হাদীসের বর্ণনাকারী শক্তিশালী না
হলে তার দ্বারা শরয়ী হুকুম প্রমাণিত হয়না।
এই সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি পাওয়া যাওয়া দুস্কর।
একেতু অধিকাংশ মানুষই আলেম না। আর মুষ্টিমেয় যারা
আলেম তারাও উল্লেখিত সকল বিষয় সম্পর্কে
প্রাজ্ঞ নয়। তাই আমাদের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ
থেকে সঠিক মাসআলা বের করা অসম্ভব।
একটি উদাহরণ
এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ﺍﻗﻴﻤﻮﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ তথা
সালাত কায়েম কর। আরেক আয়াতে বলেছেন- ﺇِﻥَّ
ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻣَﻼﺋِﻜَﺘَﻪُ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ তথা নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এবং
ফেরেস্তারা নবীজীর উপর সালাত পড়ে। এই
আয়াতের শেষাংশে এসেছে- ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺻَﻠُّﻮﺍ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ তথা হে মুমিনরা তোমরাও তাঁর উপর
সালাত পড় এবং তাঁকে সালাম জানাও। {সূরা আহযাব-৫৬}
এই সকল স্থানে লক্ষ্য করুন-“সালাত” শব্দটির দিকে।
তিনটি স্থানে সালাত এসেছে। এই তিন স্থানের সালাত
শব্দের ৪টি অর্থ। প্রথম অংশে সালাত দ্বারা
উদ্দেশ্য হল “নামায” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আমাদের
নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা নামায কায়েম কর।
{সূরা বাকারা-৪৩}
আর দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ও তার
ফেরেস্তারা নবীজী সাঃ এর উপর সালাত পড়েন
মানে হল-আল্লাহ তায়ালা নবীজী সাঃ এর উপর রহমত
পাঠান, আর ফেরেস্তারা নবীজী সাঃ এর উপর সালাত
পড়েন, মানে হল নবীজী সাঃ এর জন্য
মাগফিরাতের দুআ করেন।
আর তৃতীয় আয়াতাংশে “সালাত” দ্বারা উদ্দেশ্য হল
উম্মতরা যেন নবীজী সাঃ এর উপর দরূদ পাঠ
করেন। ( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻜﻠﻴﺎﺕ ـ ﻷﺑﻰ ﺍﻟﺒﻘﺎﺀ ﺍﻟﻜﻔﻮﻣﻰ )
একজন সাধারণ পাঠক বা সাধারণ আলেম এই
পার্থক্যের কথা কিভাবে জানবে? সেতো
নামাযের স্থানে বলবে রহমাতের কথা, রহমতের
স্থানে বলবে দরূদের কথা, দরূদের স্থানে
বলবে নামাযের কথা। এরকম করলে দ্বীন আর
দ্বীন থাকবে না, হবে জগাখিচুরী।
এরকম অসংখ্য স্থান আছে, যার অর্থ উদ্ধার করা
কঠিন। তাই একজন বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ ব্যক্তির শরাপন্ন
হয়ে তার গবেষনা অনুযায়ী উক্ত বিষয়ের সমাধান
নেয়াটাই হল যৌক্তিক। এই নির্দেশনাই আল্লাহ তায়ালা
পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন- { ﻓَﺎﺳْﺄَﻟﻮﺍ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮِ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻻ
ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ { ‏[ﺍﻟﻨﺤﻞ 43: ]তথা তোমরা না জানলে বিজ্ঞদের
কাছে জিজ্ঞেস করে নাও। {সূরা নাহল-৪৩}
বিজ্ঞ ফুক্বাহায়ে কিরাম কুরআন সুন্নাহ, ইজমায়ে
উম্মাত, এবং যুক্তির নিরিখে সকল সমস্যার সমাধান বের
করেছেন। সেই সকল বিজ্ঞদের অনুসরণ করার
নামই হল মাযহাব অনুসরণ। যেই অনুসরণের নির্দেশ
সরাসরি আল্লাহ তায়ালা দিলেন পবিত্র কুরআনে।
রাসূল সাঃ এর মাযহাব কি?
মাযহাব কি এটা নিশ্চয় আগের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট
হয়েছে। সেই হিসেবে রাসূল সাঃ এর দুনিয়াতে
কারো মাযহাব অনুসরণের দরকার নাই। কারণ তিনি
নিজেইতো শরীয়ত প্রণেতাদের একজন। তিনি
কার ব্যাখ্যা গ্রহণ করে অনুসরণ করবেন? তিনি
কেবল আল্লাহ তায়ালার থেকেই সমাধান জেনে
আমল করেছেন, এবং আমল করার নির্দেশ
দিয়েছেন।
সাহাবীদের মাযহাব কি?
সাহাবায়ে কিরাম যারা সরাসরি রাসূল সাঃ এর কাছে ছিলেন
তাদের জন্য রাসূল সাঃ এর ব্যাখ্যা অনুসরণ করা ছিল
আবশ্যক। এছাড়া কারো ব্যাখ্যা নয়। কিন্তু যেই সকল
সাহাবারা ছিলেন নবীজী সাঃ থেকে দূরে তারা
সেই স্থানের বিজ্ঞ সাহ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সব ধরনের যাদু-টোনা ও বান কাটার সহজ আমল

ফাজায়েলে আমাল নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম