হাত কিভাবে বাঁধতে হবে - - - আহলে হাদীস ভাইদের ভ্রান্ত যুক্তির জবাব।
হাত কিভাবে বাঁধতে হবে - - - আহলে হাদীস
ভাইদের ভ্রান্ত যুক্তির জবাব,,,,,
হাত কোথায় বাঁধতে হবে তা নিয়ে এখন আমি
আলোচনা করছি না। এখন আলোচনার বিষয় হলো
হাত কিভাবে বাধতে হবে। অর্থাৎ ডান হাতের পাঞ্জা
দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরতে হবে নাকি বাম হাতের
পুরা জিরার উপর পুরা ডান হাত রাখতে হবে। আশা করি
কোন বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যাক্তি আলোচনার
মোড়কে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করবেন
না। সামনে কোন এক অবসরে ইনশাআল্লাহ নাভীর
নিচে হাত বাঁধার ব্যাপারেমুসান্নাফে ইবনে আবী
শাইবার এর হাদীসটি এবং বুকের উপর হাত বাধার
ব্যাপারে মুয়াম্মাল বিন ইসমাইলের রেওয়াতের
ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা হবে।
আহলে হাদীস ভাইদের পক্ষে থেকে এ
ব্যাপারে যে ধরণের কথা শুনা যায় – “বাম যিরার উপর
ডান হাত রাখলে তো এমনিতেই হাত বুকের উপর
চলে আসে।” তাদের এই বিভ্রান্তিকর ভিত্তিহীন
কথার ব্যাপারেই এখন আলোচনা করতে চাচ্ছি।
আমাদের আহলে হাদীস ভাইদের একটা
বৈশিষ্ঠ্য হল নিজেরা হাদীস মানার নামে মাঝে
মাঝেই হাদীসের মনগড়া শাব্দিক অর্থের ধুয়াশা তৌরি
করে। আর এর মাধ্যমেই নাকি তারা আহলে হাদীস!!!
আজব !!! এভাবে বেশ কিছু বেদায়াত তারা তৌরি
করেছে যার সাথে হাদীসের কোন সম্পর্ক
নেই। এর মধ্যে একটি হল “সালাতে বাম হাতের পুরা
যিরার উপর ডান হাতের পুরা যিরা স্থাপন করা।” অবাক
লাগে যখন দেখি এ ধরণের সাজ আমালের জন্য
তারা আবার দলিল দেয় বুখারী থেকে।
বর্তমানের বিখ্যাত সালাফী আলেম শায়খ
বকর বিন আবদুল্লাহ আবু যায়েদ তার ‘লা জাদীদা
ফী আহকামিস সালাহ’ কিতাবে এ ব্যাপারে কিছু কথা
বলেছেন। এগুলো উল্লেখ করেই আমি মূল
আলোচনায় যাবো ইনশাআল্লাহ।
“‘কিন্তু সম্প্রতি যে দলটির উদ্ভব
ঘটেছে,তাদের মধ্যে দেখতে
পাচ্ছি,মুসলমানদের প্রতিদিনের ইবাদত-বন্দেগীর
ওয়াজিব-মুস্তাহাব বিষয়ে, যে ইবাদত-বন্দেগী
ইসলামের মহান নিদর্শন ও প্রতীকও বটে,এমন সব
ধারণার বিস্তার ঘটছে যেগুলোর সাথে কোনো
যুগে আলিম সমাজের কোনো পরিচিতি ছিল না। অতি
নমনীয় ভাষায় বললে, এসব ধারণার কোনো
কোনোটির সূত্র হচ্ছে বহুকাল আগের বর্জিত
কিছু মত।
‘আর কোনো ধারণা পরিত্যক্ত হওয়ার জন্য
তোএ-ই যথেষ্ট যে, তা সকল আলিমের মতামত
থেকে বিচ্ছিন্ন।
‘কোনো কোনো ধারণার অর্থ
দাঁড়ায়,ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত
গোটা মুসলিম উম্মাহ ছিল সুন্নাহ বর্জনকারীও সুন্নাহ
থেকে বিচ্যুত।অন্য ভাষায়, তারা ছিল সম্মিলিত ভাবে
পাপীও অপরাধী।”
‘তোএই সকল ভ্রান্তির কারণকী?
‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে সুন্নাহ বোঝার
ক্ষেত্রে অতিশয়তা, আর কখনো (আরবী) ভাষার
বাকরীতি ও হাদীস-ফিকহের মূলনীতি সম্পর্কে
উদাসীনতা।
‘এই সকল বিভ্রান্তি হচ্ছে দলীলের বিষয়ে
মূলনীতি বর্জনের এবং নামাযের স্বাভাবিক অবস্থা ও
ফিকহ-খিলাফিয়াতের কিতাব থেকে বিমুখতার কুফল।
অথচ ঐ সকল কিতাবে আহকাম ও বিধানের তত্ত্ব,
কারণ ও বিশেষজ্ঞদের মতভিন্নতার আলোচনা
থাকে। (’ -লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ পৃ. ৩-৪)
হাদীসের ভূল অর্থ নিয়ে আহলে হাদীস হয়
কিভাবে?
আহলে হাদীস ভায়েরা বাম হাতের যিরার উপর
ডান হাতের যিরা রাখাকে সুন্নাহ মনে করেন এবং ডান
হাতের পাতা বাম হাতের পাতা,কব্জি ও যিরার উপর না
রেখে ডান হাতের যিরা বাম হাতের যিরার উপর
রাখেন।হাত বাঁধার ক্ষেত্রে এটা একটা বিভ্রান্তিও
বিচ্ছিন্নতা। কোনো সহীহ হাদীসে যিরার উপর
যিরা রাখার কথা নেই, সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগেও এর
কোনো অস্তিত্ব ছিল না এবং কোনো মুজতাহিদ
ইমাম এই নিয়মের কথা বলেননি।
তারা তাদের এ বিভ্রান্তিকর আমলের দলিল
হিসেবে বুখারী শরিফের সাহল ইবনে সাদ রা.
থেকে বর্ণিত হাদীস এবং আবু দাউদ, মুসনাদে
আহ্মাদ, নাসাঈ , ইবনে খুজায়মার ওয়াইল ইবনে হুজর রা
বর্ণিত হাদীসের অপব্যাক্ষা করেন।
সাহল ইবনে সাদ রা . এর হাদীস
সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত,
‘লোকদেরকে আদেশ করা হত, তারা যেন তার
ডান হাত বাম যিরার উপর রাখে।’ (-মুয়াত্তা মালিক পৃ. ৫৫ ;
সহীহ বুখারী ১/১০৪)
এই হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার কথা নেই।
বাম যিরার উপর ডান হাত রাখার কথা আছে।
সাহল বিন সাদ রাযি এর হাদীসের ব্যাপারে
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে
হাজার আসকালানী রহঃ বলেন –
“বাহুর কোন জায়গায় রাখতেন সেটা এই
হাদীসে অস্পষ্ট। আবূ দাউদ ও নাসাঈ বর্ণিত ওয়াইল
রাযিঃ এর হাদীসে বলা হয়েছে- ‘অতঃপর তিনি তাঁর ডান
হাত বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর
রাখলেন।’ ইবনে খুজাইমা রহঃ প্রমুখ এটিকে সহিহ
বলেছেন। সালাত অধ্যায়ের শেষে দিকে হযরত
আলী রাযিঃ এর অনুরূপ আছার (হাদীস) এর উল্লেখ
আসছে। (ফতহুল বারী২/২৭৫)।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এ
বিষয়ে মূল মর্ম বর্ণনার ক্ষেত্রে বললেন –
“সালাত অধ্যায়ের শেষে দিকে হযরত আলী রাযিঃ
এর অনুরূপ আছার (হাদীস) এর উল্লেখ
আসছে।” (ফতহুল বারী২/২৭৫)
তাহলে এবার আমরা আলী রাযিঃ এর আমালটি বুখারি
শরিফ থেকে দেখি- “আলী রাযিঃ (সালাতে) সাধারণত
তার (ডান হাতের) পাঞ্জা বাম হাতের কব্জির উপর
রাখতেন ।” (বুখারী ১/১৫৯,ইফা ২/৩৩০)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বুখারী শরিফ
২য় খন্ড ৩৩০ পৃষ্ঠা।।।
ইমাম আবুল ওয়ালিদ আলবাজী রাহ. ( ৪৯৪হি .)
হযরত সাহল ইবনে সাদ রা .- এর হাদীসের ব্যাখ্যায়
বলেছেন , এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে , ডান হাত
কব্জির উপর রাখবে। কারণ ডান হাত বাম হাতের পাতার
উপর রাখা যাবে না। তা রাখতে হবে বাম হাতের
গোড়া ও কব্জির উপর। আর তার উপর ভর দেওয়া
যাবে না। ( আলমুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা ২ /১৬৪)
ওয়াইল ইবনে হুজর রা বর্ণিত হাদীসটিঃ
‘(আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর
ডান হাতবাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার উপর
রাখলেন।’ (মুসনাদে আহমদ ৩১/১৬০, হাদীস :
১৮৮৭০; সুনানে আবু দাউদ ১/৪৮৩, হাদীস : ৭২৭)।
এই বর্ণনাতেও বলা হয়নি ডান যিরা রেখেছেন।
বলা হয়েছে,ডান হাত রেখেছেন।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযায়মা রাহ.
(৩১১ হি.) সহীহ ইবনে খুযায়মায় হাদীসের এই পাঠ
বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ‘যিরার উপর যিরা’র অর্থগ্রহণ
করেননি। তিনি এই হাদীসের উপর শিরোনাম
দিয়েছেন-
ﺑﺎﺏ ﻭﺿﻊ ﺑﻄﻦ ﺍﻟﻜﻒ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻛﻒ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺍﻟﺮﺳﻎ ﻭﺍﻟﺴﺎﻋﺪ ﺟﻤﻴﻌﺎ .
অর্থাৎ ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার
পিঠ,কব্জি ওবাহুর উপর রাখা । (দেখুন : সহীহ ইবনে
খুযায়মা ১/২৭২, বাব: ৯০)
ইমাম আবুল আববাস আহমদ ইবনে উমার আল
কুরতুবী রাহ . সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ওয়াইল ইবনে
হুজর রা.-এর হাদীসের আলোচনায় বলেন,ইবনুল
মাজিশূন ইমাম মালিক রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন
যে, (নামাযী) ডান হাত দ্বারা তার বাম হাতের গোড়া ও
কব্জি পেঁচিয়ে ধরবে। উপরের হাদীসটি তার
দলীল। (আলমুফহিম লিমা আশকালা মিনতালখীসি
কিতাবিমুসলিম ২/২১)
ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন,
(নামাযে) ডান হাত বাম হাতের কব্জি ও তৎ সংলগ্ন
অংশের উপর রাখা মুস্তাহাব। কারণ হযরত ওয়াইল ইবনে
হুজর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর
রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের বিবরণ
দিয়েছেন এবং সে বিবরণে বলেছেন, ‘অতপর
তিনি তাঁর ডান হাত রাখলেন তার বাম হাতের পাতার
পিঠ,কব্জি ও বাহুর ।(আলমুগনী২/১৪১)।
একই কথা বলেছেন আল্লামা ইবনে কুদামা
মাকদেসী রাহ .(৬৮২ হি.)। (আশশারহুল কাবীর
(আলমুগনীর সাথে মুদ্রিত) ১/৫৪৯)।
ফকিহ এবং মুহাদ্দিসগণ সাহল বিন সাদ রাযিঃ এর বর্ণনা এবং
ওয়াইল ইবনে হুজর রাযিঃ এর বর্ণনার যে ব্যাক্ষা
করেছেনঃ
পূর্বেই শায়খ বকর বিন আবদুল্লাহ আবু যায়েদ
হাফিজুল্লাহ এর কথা উল্লেখ করেছি যে -
“কোনো ধারণা পরিত্যক্ত হওয়ার জন্য তোএ-ই
যথেষ্ট যে, তা সকল আলিমের মতামত থেকে
বিচ্ছিন্ন। ” (লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ পৃ. ৩-৪)
বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ
বলেছেন,নামাযে হাত এমনভাবে রাখা উচিত, যাতে
ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার কিছু অংশ,কব্জি ও
বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। তাঁরা ওয়াইল ইবনে
হুজর রা.-এর হাদীসের এই পাঠ এবং হযরত সাহল
ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে
উল্লেখ করেছেন।
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. নামাযে হাত বাঁধার
নিয়ম সম্পর্কে বলেন, ‘তাকবীর সমাপ্ত হওয়ার পর
দুই হাত ছেড়ে দিবে এবং ডান হাত বাম হাতের কব্জির
উপর এমন ভাবে রাখবে যে, ডান হাত দ্বারা কব্জির
গোড়ার হাড় পেঁচিয়ে ধরবে কিংবা ডান হাত কব্জির
উপর এমন ভাবে বিছিয়ে দিবে যে, হাতের আঙ্গুলি
সমূহ যিরার দিকে (ছড়ানো) থাকে। ডান হাত যদি
কব্জির ওপরের দিকে (যিরার উপর) কিংবা কব্জির
নিচে বাম পাতার উপর রাখে তবে সেটাও জায়েয।’
এরপর তিনি হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর
হাদীস,যাইদা ইবনে কুদামার বর্ণনা,সাহল ইবনে সাদ রা.-
এর হাদীসও হুলবরা.-এর হাদীসকে দলীল
হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন। (শরহুল উমদা পৃ.
৬৫-৬৬)
আল্লামা ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) নামাযে হাত
বাঁধার বিষয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব এই যে, নামাযী
কিয়ামের হালতে তার ডান হাত বাম হাতের পাতার
গোড়া য় রাখবে।’ (আলমুহাল্লা গ্রন্থে ৩/২৯-৩০)
এরপর তিনি সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস সহ
আরো কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আলোচনার শেষে বলেন,‘ আবু মিজলায,
ইবরাহীম নাখায়ী, সায়ীদ ইবনে জুবাইর, আমর
ইবনে মায়মূন, মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন, আয়্যুব
ছাখতিয়ানী ও হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকেও আমরা
বর্ণনাপেয়েছি যে, তাঁরাও (নামাযে) এভাবে
করতেন (হাত বাঁধতেন)।
আরএটি আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমদ ও
দাউদ-এর সিদ্ধান্ত।(আলমুহাল্লা গ্রন্থে ৩/২৯-৩০)
ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) শাফেয়ী
মাযহাবের মনীষীদের সিদ্ধান্ত উল্লেখ
করেছেন যে, ‘সুন্নাহ হচ্ছে,তাকবীরে
(তাহরীমার) পর দুই হাত নামিয়ে ডান হাত বাম হাতের
উপর রাখবে এবং ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের
পাতার গোড়া এবং কব্জি ও বাহুর কিছু অংশ ধরবে।
কাফফাল বলেছেন, ডান হাতের আঙ্গুল আড়াআড়ি
ভাবে কব্জির উপর রাখা বা বাহুর উপর ছড়িয়ে দেওয়া
দুটোরই অবকাশ আছে। (শরহুল মুহাযযাব’’গ্রন্থে
৪/৩২৭ )
এরপর বলেন, (পৃ. ৩২৯)আমাদের
মনীষীগণ সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস দ্বারা এ
নিয়ম প্রমাণ করেছেন। তেমনি ওয়াইল ইবনে হুজর
রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে যে, ‘অতপর
(আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর
ডানহাত রাখলেন বাম হাতের পাতার পিঠ,কব্জি ও বাহুর
উপর।’
আল্লামা শাওকানী রাহ. ও (১২৫৫ হি.) ওয়াইল
ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের এই ব্যাখ্যাই গ্রহণ
করেছেন।তিনি বলেন,‘হাদীসের অর্থ এই যে,
ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর উপর রাখবে।
তবারানীর রেওয়ায়েতে আছে,(আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে তাঁর ডান হাত
রাখলেন বাম হাতের পিঠের উপর কব্জির কাছে।
(ইমাম) শাফেয়ী রাহ.-এর শাগরিদরা বলেছেন, ডান
হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া, কব্জি ও
বাহুর কিছু অংশ পেঁচিয়ে ধরবে। হাদীসটি হাতের
পাতা হাতের পাতার উপর রাখার বৈধতা প্রমাণ করে। এটিই
অধিকাংশ মনীষীর গৃহীতনিয়ম। ...’ এরপর তিনি
নামাযে হাত ছেড়ে রাখার প্রসঙ্গ আলোচনা
করেন।-নায়লুল আওতার ২/১৮১
এরপর হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.থেকে বর্ণিত
হাদীস সম্পর্কে বলেন, ‘যিরার কোন অংশে ডান
হাত রাখা হবে তা এ হাদীসে অস্পষ্ট। তবে আহমদ
ও আবু দাউদের রেওয়ায়েতে যা ইতিপূর্বে
উল্লেখ করা হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে পাওয়া যায়।-
নায়লুল আওতার ২/১৮৯
সুতরাং শাওকানী রাহ.-এর মতেও সাহল ইবনে
সাদ রা.-এর হাদীসের অর্থ হাতের পাতা হাতের
পাতার উপর রাখা,তবে এমন ভাবে,যেন তাযিরার কিছু
অংশের উপর থাকে।
মোট কথা সাহল বিন সাদ এবং ওয়াইল বিন হুজর রাযিঃ
এর হাদীসে ডান হাত অর্থাৎ ডান হাতের যিরা-এর
কোনো প্রমাণ নেই;বরং এই ব্যাখ্যা করা হলে তা
হবে এই দুই হাদীসের শায ও বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা।কারণ
হাদীসও ফিকহের নির্ভরযোগ্য কোনো ইমাম ও
ভাষ্যকার এইব্যাখ্যা করেননি।
চার মাযহাবের অবস্থানঃ
এবার আমরা সংক্ষেপে দেখবো এ ব্যাপারে চার
মাযহাবের অবস্থান কি
ফিকহে হানাফী
বিখ্যাত হানাফী ফকিহ আলেম হালবী রাহঃ
মুনয়াতুল মুসল্লী এর ভাষ্যগ্রন্থে লিখেছেন-
“...উল্লেখিত হাদীগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন
কল্পে সুন্নত হলো হাত রাখা ও বাঁধা দুটির উপরই
আমল করা। কারণ কিছু হাদীসে চেপে ধরার কথা
এসেছে, কিছু হাদীসে হাতকে হাতের উপর রাখার
কথা এসেছে। আর কিছু হাদীসে বাহুর উপর হাত
রাখার কথা এসেছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের
পদ্ধতি হলো, ডান হাতের তালু বাদ হাতের পিঠের
উপর রাখবে, বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলি দ্বারা কব্জি
চেপে ধরবে, আর বাকি তিন আঙ্গুল বাহুর উপর
বিছিয়ে দিবে তাহলে হাতের উপর হাত রাখা , বাহুর
উপর হাত রাখা এবং ডান হাত চেপে ধরা,সবগুলোই
হাসিল হবে। ”
ফিকহে মালেকীঃ
আল্লামা উব্বী মালেকী রহঃ মুসলিম
শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেছেন-
“আমাদের শায়েখগণ বলেছেন, ডান হাত দ্বারা বাম
হাতের কব্জি চেপে ধরবে। কেউ কেউ এ
কথাও যোগ করেছেন, শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলি
যেন বাহুর উপর থাকে।” (২/২৭৮)
ফিকহে শাফেয়ী
ইমাম নববী রাহঃ বলেন –
“সুন্নতহলো ডান হাত বাম হাতের উপর এভাবে
রাখবে যে, ডান হাতের তালু দ্বারা বাম হাতের
বৃদ্ধঙ্গুলির গোড়ার হাড়, কব্জির কিছু অংশ এবং বাহু
চেপে ধরবে” (আররাওজাহ ২/৩৩৯) ।
পূর্বে শাফেয়ী মাযহাব সম্পর্কে ইমাম নববী রাহঃ
এর আরেকটি উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে ।
(শরহুল মুহাযযাব ৪/৩২৭) ।
ফিকহে হাম্বলীঃ
হাম্বলী মাযহাব সম্পর্কে ইবনে মানসূর আল
হাম্বালী রহঃ বলেন-
“অতঃপরবাম হাতের কব্জি ডান হাত দ্বারা চেপে
ধরবে। এবং নাভির নীচে রাখবে।(১/১৬৫)” ।
মারদাবী রাহঃ আল ইন্সাফ গ্রন্থে (২/৪৫) ও ইবনে
মুফলিহ রাহঃ আল ফুরু গ্রন্থে (১/৩৬১)একই কথা
বলেছেন।
যে কারণে তাদের বিভ্রান্তি ঘটেছেঃ
মূলত বুখারীতে বর্ণিত সাহল বিন সা’দ রাযি
হাদীসের “যিরা” শব্দটির ব্যাবহারীক পদ্ধতি না বুঝার
কারণেই তাদের বিভ্রান্তি ঘটেছে। হাদীসের
বর্ণনা –“লোকদেরকে আদেশ করা হত, তারা
যেন তার ডান হাত বাম যিরার উপর রাখে।”(সহীহ
বুখারী ১/১০৪)
আরবীতে হাতের আঙুলের মাথা থেকেই
কনুই পর্যন্ত অংশকে ‘যিরা’ বলে। হাদীসের
কোথাও বলা নেই ডান হাতকে সম্পূর্ণ যিরার উপর
রাখতে হবে। যিরার কোন একটি অংশের উপর
রাখলেই জিরার উপর রাখা হয়ে যায়।
এখন কেউ যদি এ কথা বলে যে ‘হাদীসে
যেহেতু যিরা শব্দ এসেছে সেহেতু পুরা জিরার
উপরই রাখতে হবে’ তাহলে আমি বলবো
কোরআন ও হাদীসের এরুপ আরো বর্ণনা
আছে যেখানে শরিরের কোন একটি অংশের
বর্ণনা করা হলেও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ঐ অংশ না।
যেমন সূরা নূহ এ বর্ণিত আছে –“......তারা কানে
আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে...”(সূরা নূহ-আয়াত ৭)
কোরআনে আছে তারা কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে
দিয়েছে কিন্তু এখানে আঙ্গুল দ্বারা কি সম্পূর্ণ
আঙ্গুল উদ্দেশ্য? অবশ্যই না। কারণ কানের ক্ষুদ্র
ছিদ্রের মধ্যে আঙ্গুলের অল্প অংশই প্রবেশ
করে অথচ আল্লাহ আঙ্গুলের ক্ষুদ্র অংশের কথা
উল্লেখ না করে সম্পূর্ণ অংশের কথা বললেন।
ব্যাস। আমি আর আলোচনা দীর্ঘ করতে
চাচ্ছি না। আল্লাহ যাদের হক বোঝার তৌফিক দিবে শুধু
তারাই হক পাবে। আল্লাহ বেদাআত থেকে
আমাদের হেফাযত করুন।
আলোচনার সারমর্ম ইমেজ আকারে
রিসালাটি প্রস্তুত করার জন্য প্রথমত আমি বিজ্ঞ
আলেমদের সাথে পরামর্শ করে তাদের
নির্দেষনা অনুযায়ী লিখেছি। পাশাপাশি নির্দেশনা
অনুযায়ী যাকারিয়া আব্দুল্লাহ সাহেবের "বুকের উপর
হাত বাঁধা : বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা" নামক প্রবন্ধ
এবং মাওলানা আব্দুল মরিন সাহেবের "দলিল সহ
নামাযের মাসায়েল" নামক কিতাব থেকে লিখেছি।
লেখার পরিমাপ ছোট রাখার জন্য হাদীসের
আরবী পাঠ, এবং ইমামগনের মন্তব্যের আরবী
পাঠ উল্লেখ করিনি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন