নৈতিকতাহীন হয়ে ধর্মের বানী ছড়ানোর কোনো সুযোগ কেহই দেবে না।

চারিদিক মিলিয়ে একটা কঠিন পরিস্থিতি এগিয়ে আসছে। ইসলামী ভাবধারার মানুষজন ও ইসলামী শিক্ষাধারা নিয়ে চতুর্মূখী বিপদের দ্বার উম্মোচিত হচ্ছে। কোনোদিন কেউ কী ভেবে দেখেছে, কওমী মাদরাসায় পড়ুয়া ছাত্ররা একসময় হাজার হাজার মানুষের সামনে ফেসবুকে #মীই_টু স্টাইলে কনফেশন করবে। নিজেদের সাথে হওয়া বা ঘটা কোনো বিশ্রি ঘটনার বর্ণনা দেবে। সেখানের কমেন্ট বক্সে শত শত কমেন্ট যাবে আরও বিশ্রি আকারে। যদিও ওই কনফেশনগুলো বেশিরভাগই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে কিন্তু আল্টিমেটলি তো কওমী মাদরাসায় এই সমস্যাটা আছে তা স্বীকার করতেই হবে।
গত পাঁচদিনে সারাদেশ মিলিয়ে প্রায় পাঁচজন মাদরাসা হুজুর আইনের আওতায় এসেছে যারা সরাসরি একাধিক ধর্ষণ ও ছাত্রীদের মলেস্টেড করার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। যার মধ্যে এক মাওলানা বিশজন ছাত্রীকে ধর্ষণের ব্যাপারেও সরাসরি স্বীকারোক্তি দিয়েছে! এর আগেও ভূড়ি ভূড়ি সংবাদ ও অনুসন্ধান এসেছে যেখানে দেখা গেছে ধর্ষণ, বলাৎকারসহ এমন কোনো ঘৃণ্য অপরাধ নেই যা করছি না আমরা দাড়ি-টুপিওয়ালারা।
কিন্তু দুঃখের বিষয় কি জানেন? এভাবে এসব প্রকাশ হওয়ার পরও বাংলাদেশে কওমী মাদরাসার মুরুব্বী পর্যায় বা কারও উদ্যোগে কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি সারাদেশে এসব ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য। কওমী মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা জানেই না, কোনো শিক্ষক বা কোনো বড় ছাত্র কর্তৃক সে কোনো ধরণের নিপিড়নের শিকার হলে তার কী করা উচিত। বরং সে অনেকটা ঝিমম মেরে বসে থাকে। বড় হয়ে সে একই কাজ করে সুযোগ পেলে। এছাড়াও মৌলিক আরও অনেক সমস্যা আছে যেগুলোর সমাধান একটু উদ্যোগী হলেই করা যায়। বিশেষ করে মহিলা মাদরাসাগুলোর বিষয়।
যেহেতু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে তাই কনফেশন আকারে কিছু না বললেও এটুকু অন্তত বলতে হবে, আমার ধারাবাহিক কওমী শিক্ষাজীবনে এমন অনেক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি। নিজের ক্ষেত্রে কী হয়েছে না হয়েছে ওটা ফেসবুকে না বললেও দুঃখের বিষয় হলো, এই ঘৃণ্য অপরাধটি বেশ হালকাভাবে দেখার প্রবণতা কওমী মাদরাসায় আছে। শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে এই বিষয়টি সবাই বেশ রসালো বয়ানের মতো করে নিয়ে থাকে। আরও ভয়ানক বিষয় হলো, যারা এমন কাজের সাথে জড়িত থাকে তাদের তেমন কোনো শাস্তি হয় না।
বিষয়টি আগে শিক্ষক-ছাত্র পর্যন্ত থাকলেও এখন তা ছাত্রী পর্যন্ত গড়িয়েছে। মহিলা মাদরাসাগুলোতে চলছে মহামারি। মাঝে মাঝে মন চায়, সাহস করে ধারাবাহিক অনুসন্ধানে নেমে পড়ি। কিন্তু কোনো লাভ হবে না, ফলাফল শূণ্য সেটা জানা আছে বলে কিছু করেও লাভ হয় না আসলে।
ব্যাক্তির অপরাধ প্রতিষ্ঠানে যায় না সত্য। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি প্রমোটিং পেলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানকে দায় নিতে হয়। তখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই এসব মোকাবেলা করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কওমী মাদরাসাগুলোতে এমন কোনো বিষয়ে বিপরিত পদক্ষেপ নেওয়ার মানসিকতাই মূলত নেই। সর্বপরী কথা হলো, কওমী মাদরাসাগুলো সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রনহীন এবং মানহীন প্রতিষ্ঠান চালানোর নজির স্থাপন করেছে। সারাদেশ মিলিয়ে তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ কারও কাছেই নেই কওমী মাদরাসাগুলোর। স্বতন্ত্র, শক্তিশালী কোনো প্রতিষ্ঠানও নেই নিয়ন্ত্রণের জন্য। আলাদা আলাদা ৭/৮ বোর্ডের অধিনে চলে এই মাদরাসাগুলো। বোর্ডের অধিনে থাকলেও তেমন কোনো নিয়মের বেড়াজালে কেহই নেই মূলত। আবার বোর্ড নিয়ন্ত্রন ছাড়াও শত শত মাদরাসা আছে সারাদেশে। হেফজ মাদরাগাগুলো তো অনেকটা হেরেম কোয়ালিটির হয়ে যাচ্ছে এখন। সব মিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতি সামনে আসাটা খুব যৌক্তিক ছিলো।
এক কথায় বলা যায়, এভাবে চলতে থাকলে খুব অল্প সময়েই এদেশে কওমী মাদরাসাগুলো সবার কাছ থেকে সব ধরণের প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। নৈতিকতাহীন হয়ে ধর্মের বানী ছড়ানোর কোনো সুযোগ কেহই দেবে না। আল্লাহ সবাইকে রহম করুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সব ধরনের যাদু-টোনা ও বান কাটার সহজ আমল

ফাজায়েলে আমাল নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম