#জাল হাদিস ও জয়িফ হাদিসের মধ্যে পার্থক্য এবং আহলে- হাদীস ফেতনা।

জাল হাদিস আর জয়িফ হাদিসের মধ্যে পার্থক্য:

লা মাযহাবী কথিত আহলে হাদিসরা মানুষের মগজে এই কথাটা ঢুকিইয়ে দিতে চায় যে, জয়িফ হাদিস এটা কোন হাদিসই না। জয়ীফ হাদিস জাল হাদিসের মতই। তারা জয়ীফ হাদিসগুলো কে জাল হাদীস বলে অসংখ্য হাদীস কে অস্বীকার করছে। অথচ জাল আর জয়ীফ হাদীসের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।

হাদীস সহীহ হয়, জয়ীফ হয়, হাসান হয়, সনদের উপর ভিত্তি করে। মুহাদ্দিসগন যখন কোন হাদীসের রাবী (হাদীস বর্নণাকারীর) নাম পরিচয়,আমল আখলাক ইত্যাদি যাচাই- বাছাই করেন এর উপর ভিত্তি করে হাদীসের মান নির্নয় করা হয়।

এমন অনেক হাদীস আছে যেই হাদীসগুলো ইসলামের প্রাথমিক জামানাতে সহীহ শুদ্ধ ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে সনদের কারনে সেই হাদীসের মান দুর্বল হয়েছে। তাই বলে জয়ীফ দুর্বল হাদীসকে জাল হাদীস বলার কোন সুযোগ নেই। সমস্ত মুহাদ্দীসগন একমত যখন কোন বিষয়ে একাধিক জয়ীফ হাদীস থাকে তখন ওই হাদীস সহীহ হাদীসের পর্যায়ে চলে যায় এবং ফাযায়েলের বিষয়ে যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করা যায়।

আর জাল হাদীস এটা তো কোন হাদীসই না এজন্যই তো এটা জাল। মুহাদ্দীসগন যখন হাদীস গ্রহন করেন অনেক সময় এমনও হয়, যার কাছ থেকে হাদীস শুনছেন তার স্মরন শক্তি হয় তো কম, তাই হাদীস টা সম্পুরনভাবে পৌছাইতে পারে নাই তাই এখানে সতর্কতা স্বরুপ হাদীসের মান দুর্বল রাখা হয়েছে।

একারনেই দেখবেন একই রকমের হাদীস এক রেওয়ায়েতে একভাবে আরেক রেওয়ায়েতে কিছু কম বেশি হয়ে আসছে।

জাল আর জয়ীফের পার্থক্য একটা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করি।
ধরুন, দুই জন অসুস্থ মানুষ পাশাপাশি বেডে (খাট) শোয়া একজন মারা গেলো আর আরেক জন মারা যায় নাই। যে মারা গেছে তাকে সবাই কী বলে? লাশ আর যেই লোক অসুস্থ তাকে সবাই মানুষই বলে। কারন তার ভিতর এখনও জান (প্রান) আছে।

ঠিক এমনই যেই হাদীস জাল এটা লাশের মত এটা কোন হাদীসই না কিন্তু যেই হাদীস জয়ীফ সেটা হাদীস।

মুহাদ্দীসগন তাদের কিতাবে সেই হাদীস উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দু:খের বিষয় কথিত আহলে হাদীসদের শায়খ নাসের উদ্দিন আলবানী তিরমিযী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফের যয়ীফ হাদীসগুলো আলাদা করে দুইটা কিতাব বাহির করছে। সহীহ আবু দাউদ ও যয়ীফ আবু দাউদ, সহীহ তিরমিযী ও যয়ীফ তিরমিযী।

কেমন যেন বুঝাতে চাচ্ছে যে, যয়ীফ হাদীস এটা কোন হাদীসই না। হাদীস সহীহ না হওয়া কে বাতিল গণ্য করা হচ্ছে এবং আমলের অনুপযোগী মনে করা হচ্ছে এবং মূলত হাদীসকে অস্বীকার করা হচ্ছে। শুধু সহীহ হাদীস মানার কথা বলে তারা ইসলাম কে অপরিপুর্ন, সংকীর্ন করছে এবং অসংখ্য হাদীসকে এনকার (অস্বীকার) করছে।

আর মজার বিষয় হল তারা তাদের সুবিধামত আমাদের বিরুদ্ধে অনেক সহীহ হাদীসকে যয়ীফ বলে আর তাদের পক্ষে অনেক যয়ীফ হাদীস কে সহীহ বলে চালিয়ে দেয়।

আল্লাহ তায়ালা এদের ধোকাবাজী ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের ঈমান-আমল কে হেফাজত করেন, আমিন।

যয়ীফ হাদীস নিয়ে জরাহ ও তাদিলের প্রসিদ্ধ কয়েকজন মুহাদ্দিস এর অভিমত :
কতক আহলে হাদীস বলে বেড়াচ্ছেন যে, জইফ হাদীস জাল হাদীসের মত সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাখ্যাত, অথচ গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণের মতে ফাযায়েলে আমল, তারগিব, তারহিব, রাকায়িক ইত্যাদি ক্ষেত্রে জইফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। আর তাদেরকে এই উক্তি শুনানো হলে তারা বলে কোন মুহাদ্দেস বলেছেন? নাম বলুন। তাই নিন্মে জরাহ তাদিলের প্রসিদ্ধ কয়েকজন মুহাদ্দিসের অভিমত পেশ করা হল-
প্রথমেই শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর অভিমত দিয়ে শুরু করা হল। শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন। *
*"পূর্ববর্তী জামানার সমিক্ষাবাদি মুহাদ্দিসগণ যেমন, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহমতুল্লাহি আলাইহি , ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং যারা ওই স্তরের ছিলেন তারা সবাই তাদের কিতাবসমূহে জইফ হাদীস বর্ণনা করে তার দ্বারা দলিল পেশ করতেন এবং তদানুযাই আমল করতেন। এর বিপরিতে তাদের কাউকে জইফ হাদীস এড়িয়ে চলতে দেখা যায় নি-(জাফারুল আমানি-১৮৬, টিকা)-

০১.সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহমতুল্লাহি আলাইহি (মৃ: ১৯৮ হি.)
¤ হাদীস শাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহমতুল্লাহি আলাইহি জইফ হাদীসের ব্যাপারে তার নিজস্ব উক্তি এভাবে ব্যক্ত করেন যে, ইয়াহইয়া ইবনুল মুগিরা বলেন- আমি একবার সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহমতুল্লাহি আলাইহি কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন যে, তোমরা সুন্নতের (বিধান সম্পর্কীয়) বিষয়ে বাকিয়াহ হতে কোন কিছু গ্রহণ করো না। তবে তা যদি সওয়াব পাওয়া না পাওয়া বিষয়ক হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। (খুলাসাহ-৯, আল কিফায়াহ-১/১৩৪)

০২. আবদুর রহমান বিন মাহদি রহমতুল্লাহি আলাইহি (মৃ:১৯৮ হি.)
¤ জইফ হাদীসের ব্যাপারে তার নীতির ব্যাপারে আল্লামা তাহের জাজায়িরি রহমতুল্লাহি আলাইহি(মৃ:১৩৩৮ হি.) বলেন: ইমাম আবদুর রহমান বিন মাহদি রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমরা যখন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হালাল হারাম ও অন্যান্য বিধি-বিধান সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করি তখন সনদ তথা সূত্রের মধ্যে খুব যাচাই বাছাই করি। পক্ষান্তরে, যখন ফাযায়েলে আমাল তথা কোন আমলের সওয়াব বা কাজের শাস্তি বিষয়ক হাদীস বর্ণনা করি, তখন সনদ বা বর্ণনা সুত্রে হালকা দৃষ্টি দেই এবং সনদে যে সকল ব্যক্তিবর্গ থাকে তাদেরকে খুব শিথিলভাব পরখ করেই সিদ্ধান্ত নেই (তাওজিহুন নজর-২/৬৫৩)

০৩.ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি (মৃ:২৩৩ হি.)
¤ হাদীস শাস্ত্রে কঠোর নীতি সম্পন্ন ইমাম হিসেবে খ্যাত ইমাম ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহমতুল্লাহি আলাইহিবিভিন্ন জইফ রাবি সম্পর্কে তার নীতি বর্ণনা করতে গিয়ে শায়েখ আলি বিন নায়েফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি. সম্পর্কে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি আহকাম, মাগাযি, রাকায়িক ইত্যাদির বিষয়ে কোন পার্থক্য করেন না। অর্থাৎ কোন ক্ষেত্রেই যইফ হাদীস কবুল করেন না। এই কথাটি প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায় তার অন্যান্য উক্তি দ্বারা। * যেমন তিনি নাজিহ আবু মা'শার মাদানী সিন্ধি সম্পর্কে বলেন: ﻫﻮﺿﻌﻴﻒ، ﻳﻜﺘﺐ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﺍﻟﺮﻗﺎﻕ সে যইফ রাবি তবে রিকাকের হাদীস তার থেকে নেয়া যাবে। * তিনি ইদ্রিস বিন সিনান সম্পর্কে বলেন, তার থেকে রিকাকের হাদীস নেয়া যাবে।(সিয়ারু আ'লামিন নুবালা-৩/৩২৫) * মুসা বিন ওবায়দা রবাযী সম্পর্কে বলেন, সে যইফ রাবি। তবে রিকাকের হাদীস তার থেকে নেয়া যাবে (আল-কামেল-১/৩৬৬) * জিয়াদ আল-বাকাই সম্পর্কে বলেন, বিশেষ করে মাগাযির ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রে তার থেকে হাদীস নেয়া যাবে না। (খুলাসাহ-২৫)

০৪. ইবনে আবু হাতেম রহমতুল্লাহি আলাইহি.(মৃ: ৩২৭ হি.)
¤ কঠোর নীতির আরেক ইমাম ইবনে আবু হাতেম রহমতুল্লাহি আলাইহি. যিনি যইফ হাদীস সম্পর্কে কঠোর হিসেবে পরিচিত। অথচ যইফ হাদীস গ্রহনের ক্ষেত্রে তার উন্মুক্ত স্বীকারোক্তি পেলে চমকে দেয়ার মতই। যেমন তিনি বলেন >>যারা নিষ্ঠাবান এবং প্রখর মেধাবী বলে প্রসিদ্ধ তারাও আহলে আদালাহ এবং যারা বর্ণনার ক্ষেত্রে সত্যবাদী, দিনদারির ক্ষেত্রে পরহেজগার তবে মাঝে মধ্যে ভুল করে তাদের বর্ণিত হাদিস ও ওলামায়ে কেরাম গ্রহন করেছেন। এবং দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। আর যারা সত্যবাদী, দীনদার তবে বেশি বেশি ভুল করে তাদের বর্ণিত হাদিস শুধু তারগিব, তারহিব, যুহদ, আদাবে ক্ষেত্রে নেয়া যাবে। হালাল হারামের ক্ষেত্রে তাদের বর্ণিত হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা যাবে না (আল-জারহু ওয়াত তা'দিল-ভুমিকা ১/৬) উপরোক্ত বক্তব্যের দ্বারা বুঝা গেলো যে, ইমাম ইবনে আবু হাতেম রহ. (মৃ:৩২৭ হি.) ও অন্যান্য ওলামায়ে কেরামের মতো যইফ হাদিস কবুল করতো ।(খুলাসাহ-২৮, শামেলা)

০৫. শায়েখ আবু যাকারিয়া আল-আম্বরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
¤ হাকেম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি. (মৃ:৪০৫ হি) স্বীয় উস্তাদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন: >> আমি শায়েখ আবু যাকারিয়া আল-আম্বরি রহমতুল্লাহি আলাইহি কে বলতে শুনেছি যে, কোন হাদিস যদি হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল না করে এবং কোন প্রকার হুকুম (বিধান) প্রমান না করে, বরং হাদিসটা তারগিব (কোন আমলের প্রতি উৎসাহ), তারহিব (কোন কাজের প্রতি ভীতি প্রদর্শন) সম্পর্কীয় হয় তাহলে তার প্রতি কড়া দৃষ্টিতে দেখো না এবং উক্ত হাদিসের বর্ননাকারিদের প্রতি নমনীয় মনোভাব পোষন করো(আল-আজভিবাহ-৫০)

০৬.খতিব বাগদাদি রহমতুল্লাহি আলাইহি মৃ: ৪৬৩ হি.)
¤ হাদিস শাস্ত্রে যাদের হাত ধরে বিকশিত হয়েছে ও ব্যাপকভাবে উম্মাহর সাথে পরিচিত হয়েছে, তাদের মধ্যে খতীবে বাগদাদি রহমতুল্লাহি আলাইহি. অন্যতম। অথচ আজব কথা হল, তিনি ফাজায়েলের ক্ষেত্রে কেবল যইফ হাদিসকেই কবুল করতেন না, বরং যইফে শাদীদ ও সমানভাব কবুল যোগ্য বলে মত প্রকাশ করেন। যেমন তার নিজস্ব উক্তি হল: >>কিফায়াহর মধ্যে খতিবে বাগদাদি রহ. বলেন, অধিকাংশ পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম বলেন যে, হালাল-হারাম সম্পর্কীয় হাদিসগুলোকে কেবল মাত্র তাদের থেকেই গ্রহন করা হবে যারা মিথ্যার অপবাদে অভিযুক্ত হওয়া থেকে মুক্ত। আর তারগিব ও নসিহত বিষয়ক হাদিসগুলকে সকল শায়েখ থেকে গ্রহন করা নিঃসন্দেহে জায়েজ (খুলাসাহ-২৫)

০৭. হাফেজ ইবনে আবদুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহিমৃ:৪৬৩ হি.)
¤ মালেকী মাজহাবের মুখপাত্র হাফেজ ইবনে আবদুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি. যইফ হাদিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন: >>ফযীলতের হাদিসের জন্য ওই পর্যায়ের রাবি দরকার নেই যে পর্যায়ের রাবি আহকামের হাদিসগুলর ক্ষেত্রে দরকার (খুলাসাহ-১ ৬, হুকমুল আ'মালি বিল আহাদিসিয যইফা-৯)

০৮.কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি(মৃ:৫৪৩ হি.)
¤ শায়েখ আলি বিন নায়েফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তার সম্পর্কে বলেন: >>যারাই যইফ হাদিসের হুকুম-বিধান নিয়ে আলোচনা করেছেন তাদের অধিকাংশই যইফ হাদিস সম্পর্কে কাজি আবু বকর ইবনুল আরাবি রহ. এর মতকে এভাবে নকল করেছেন যে, তিনি যইফ হাদিস মোটেই কবুল করেন না (আহকামের ক্ষেত্রেও না, ফাযায়েলের ক্ষেত্রেও না). কেউ কেউ আবার শুধুমাত্র যইফে শাদীদ কবুল না করার কথাই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার লিখিত কিতাব "আরিযাতুল আহ ওয়াযি"-র দিকে তাকালে উপরোক্ত বক্তব্য ভুল ও অসার প্রমানিত হয়। তার বিপরীতটাই বরং প্রমাণিত হয়। তার গ্রন্থ "আরিযাতুল আহ ওয়াযি" অধ্যায়ন করলে দেখা যায় যে, ফাজায়েল, নেক কাজ, রাকায়িক, তারগিব, তারহিব, মুস্তাহাব এমনকি (বিশেষ সময়ে) ইবাদাত থেকে বিরত থাকার বিষয়ে ও তিনি যইফ হাদিসকে আমল যোগ্য জ্ঞান করতেন (খুলাসাহ-২৫)
* এ বিষয়ে একটি উদাহরন পেশ করছি। তিনি " ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻟﺘﺸﻤﻴﺖ ﺍﺫﺍ ﺯﺍﺩ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ "উল্লেখ করে তার টিকার মধ্যে বলেন: ইমাম তিরমিযী (রহ) জামে' তিরমিজিতে (২৭৪৪) একটি মাজহুল হাদিস-উল্লেখ করে অতঃপর বলেন, এই হাদিসটা যদিও যইফ কিন্তু সে অনুযাই আমল করা মুস্তাহাব। কেননা, তা মঙ্গল কামনার দোয়া। যা সহচরের সাথে সুসম্পর্ক ও ভ্রাত্তিত্ব বন্ধন সৃষ্টিকারী (আরিযাতুল আহওয়াযি-১০/২০৫) * শায়েখ আলি বিন নায়েফ রহমতুল্লাহি আলাইহি. আরো বলেন: উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আবু বকর ইবনুল আরাবি রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মত এবং অন্যান্য আহলে ইলম গনের মত একই। আর তা হল যইফ হাদিস বর্ণনা করা এবং তদানুযায়ী আমল করা জায়েজ যদি তা যইফে শাদীদ তথা মউজু, মাতরুক না হয় (খুলাসাহ-২৫)

০৯.আল্লামা ইবনে হাযম রহমতুল্লাহি আলাইহি.(মৃ:৫৫৬ হি.)
¤ যার ব্যাপারে একথার জোর দাবি করা হয় যে, তিনি যইফ হাদিস একদম কবুল করতেন না। তার সম্পর্কে শায়েখ আলি বিন নায়েফ আশ- শাহুদ রহ. বলেন:>> ইমাম ইবনে হাযম সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি যইফ হাদিস মোটেও মানেন না, এই কথাটা তার বক্তব্য দ্বারাই বাতিল হয়ে যায়। কারন তিনি বিতর নামাজে কুনুতের হাদিস উল্লেখ করে বলেন 'কুনুত' আল্লাহর জিকির এবং দুয়া। তাই আমরা তা পছন্দ করি। অথচ এই আসারটা ( ﺍﻻﺛﺮ ) যদিও দলিল যোগ্য নয়, কিন্তু এবিষয়ে রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আর কিছু পাওয়া যায় নি। ওঁদিকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন জইফ হাদিস আমার নিকট উত্তম, কিয়াস বা যুক্তি থেকে। আলি ইবনে হাযম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন আমরা একথাই গ্রহন করেছি। যদি ও হযরত ওমর আলাইহিস সালাম  হতে ভিন্ন কুনুত বর্ণিত হয়েছে। তবে আমাদের নিকট মুসনাদটাই উত্তম (খুলাসাহ-২৫,মুহাল্লা-৪/১৪৮)

১০.আবুল হাসান বিন কাত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি.(মৃ:৬২৮ হি.)
¤ জইফ সনদে বর্ণিত হাদিসগুলোর আলোচনা করতে গিয়ে আবুল হাসান বিন কাত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: >>এই প্রকারের একটিও দলিল যোগ্য নয়, বরং এগুলোর ম্যাধ্যমে কেবল ফাজায়েলে আ'মালের ক্ষেত্রে আমল করা যাবে। আহকামের ক্ষেত্রে তা দ্বারা আমল করা যাবে না। তবে যদি তার একাধিক সনদ বা সুত্র পাওয়া যায় অথবা আমলে মতাওয়াতির বা ধারাবাহিক আমল অথবা অন্য কোন সহিহ হাদিস বা কোরআনের আয়াত তাকে সমর্থন করে তাহলে তা আহকামের ক্ষেত্রেও আমল যোগ্য হবে।(তাহরিরু উলুমিল হাদিস-৩/১১৩) আবুল হাসান ইবনে কাত্তান রহ. এর উল্লিখিত অভিমত এ কথার জ্বলন্ত প্রমান যে, ফাজায়েলের ক্ষেত্রে জইফ হাদিস গ্রহনযোগ্য।

১১.হাফেজ ইবনে সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি(মৃ:৬৪৩ হি.)
¤ তিনি কেবল জইফ হাদিস কবুল -ই করতেন না। বরং এ বাপারে উম্মতের ইজমার ও দাবি করেছেন। তিনি বলেন: >>সকল ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত রায় হল, কোন জইফ হাদিস যদি হালাল-হারাম বিষয়ক না হয়ে ওয়াজ-নসিহত, ঘটনাবলি, কোন আমলের ফযীলত বা তারগিব-তারহিব জাতীয় বিষয়ে হয় তাহলে তার সনদকে শিথিলভাবে বিবেচনা করা হবে।(মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালেহ-১/১৯, কাওয়ায়েদুত তাওদিস-১১৪, তাওজিহুন নজর-৩/৪০) * মৃত ব্যাক্তিকে দাফন করার পর তালকিন করার হুকুম বর্ণনা করতে গিয়ে হাফেজ সুয়ুতি রহ. বলেন-
ﺇﻧﻤﺎ ﺍﺳﺘﺤﺒﻪ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺼﻼﺡ ﻭﺗﺒﻌﻪ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﻧﻈﺮﺍﺇﻟﻲ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﻳﺘﺴﺎﻣﺢ ﺍﺍﻷﻋﻤﺎﻝوﺑﻪ ﻓﻲ ﻓﻀﺎﻳﻞ
হাফেজ ইবনে সালেহ রহ. মৃত ব্যাক্তিকে তালকিন করা মুস্তাহাব সব্যস্ত করেছেন। তাছাড়া ইমাম নববী রহ. ও একই মত পোষন করেন। এই জন্য যে, ফাযায়েলে আমালের ক্ষেত্রে জইফ হাদিস আমলযোগ্য। এ দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তারা উভয়েই জইফ হাদিস দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণে একমত (আল-আজভিবাহ-৩৮) [বিঃদ্রঃ এখানে তালকিনের হুকুম বর্ণনা করা উদ্দেশ্য নয়। বরং জইফ হাদিসের ক্ষেত্রে ইবনে সালেহ রহ. এর অভিমতটা স্পষ্ট করাই উদ্দেশ্য]

১২. ঈমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি(মৃ:৬৭৬ হি.)
¤ শাফেয়ী মাজহাবের আরেক মুখপাত্র ইমাম নববী রহ. জইফ হাদিস সম্পর্কে এভাবে মন্তব্য করেন: >>উম্মাহর সকল ওলামায়ে কেরামের নিকট জায়েজ হল, কোন হাদিস যদি মওযু বা জাল না হয় এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়টি যদি আহকাম তথা হালাল হারাম বা আল্লাহ তায়ালার সিফাত সম্পর্কীয় না হয় তাহলে বর্ণিত হাদিসের সনদ জইফ হলে ও তার প্রতি নমনীয় আচরন করা হবে। অর্থাৎ তার দুর্বলতার কথা উল্লেখ ছাড়াই তা বর্ণনা করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা বৈধ (আল-আজভিবাহ-৪০, আত তাকরিব-১৯২) * ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল আজকার-এর মধ্যে বলেন, উম্মাহর সকল ফকিহ ও হাদিস বিশারদদের মত হল, ফাযায়েলে আমল ও তারগিব, তারহিবের মধ্যে জইফ হাদিস যদি তা মাউজু বা জাল পর্যায়ে না পৌঁছে তাহলে তা আমলযোগ্য(আল আজকার-৫০)
ﻭﻗﺪ ﺍﺗﻔﻖ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀﻋﻠﻲ ﺟﻮﺍﺯﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﺎﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻀﻴﻒ ﻓﻲ ﻓﻀﺎ ﺋﻞ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﺑﻤﻘﺘﻀﺎﻩ٠
সকল ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষন করেন যে, ফাযায়েলে আমালের ক্ষেত্রে জইফ হাদিস আমলযোগ্য (আল মাজমু-২/৯৮)
ﺍﻟﻀﻴﻒ ﻳﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻲ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﺑﺎﺗﻔﺎﻕ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ٠
সকল ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমতে জইফ হাদিস আমলযোগ্য(আল-মাজ মু-৩/১২২) * এব্যাপারে সকল ওলামা একমত যে, কোন আমলের ফজিলত প্রসঙ্গে বর্ণিত মুরসাল, জইফ বা মাওকুফ হাদিসের সনদের বাপারে সহনশীল হতে হবে। এবং তদানুযায়ী আমল করতে হবে। তবে হালাল-হারামের বিষয় ভিন্ন (আল-মাজমু-৩/২৪৮) * ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে বর্ণিত জইফ হাদিসের সনদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের বাপারে ওলামায়ে কেরাম একমত (আল-মাজমু-৮/২৬১)

১৩.ইবনে তাইমিয়া .(মৃ:৭২৮ হি.)
¤ অষ্টম শতাব্দীর  ইবনে তাইমিয়া যার ব্যাপারে জইফ হাদিস কবুল না করার বিশোধগার সর্বজন বিদিত। সেও স্বীয় মতকে এভাবে ব্যাক্ত করেছে: >>আর ইসরাইলিয়াত বা এজাতীয় কোন বিষয়ের বর্ণনার ক্ষেত্রে রাবি যদি মিথ্যুক পর্যায়ে না হয় তাহলে তারগিব বা তারহিব জাতীয় বিষয়ে তাদের বর্ণনা গ্রহনযোগ্য। এবং সেআরো বলে- যদি কোন মুস্তাহাব আমলের ফজিলত বা সওয়াব পাওয়া বা কোন অপছন্দনীয় আমলের অসঙ্গতি বা তার পরিণতি বিষয়ক কোন হাদিস বর্ণিত হয়, আর একথাও কোনভাবে জানা না যায় যে, সংশ্লিষ্ট হাদিসটি জাল, তাহলে উক্ত হাদিস মোতাবেক আমল করতে কোন সমস্যা নেই (মাজমু আতুল ফাতাওয়া-১/৭৬, খুলাসাহ-২৭)

১৪.হাফেজ ইবন হাজার মক্কি রহমতুল্লাহি আলাইহি . (মৃ:৮৯৭ হি.)
¤ তিনি বলেন >> ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত পোষন করেছেন যে ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে জইফ হাদিস আমলযোগ্য।(আল ফাতহুল মুবিন-৩২, আল আজভিবাহ-৪২)

১৫.হাফেজ সাখাভি রহমতুল্লাহি আলাইহি ..(মৃ:৯০২ হি.)
¤ জইফ হাদিস কবুলের ব্যাপারে উম্মতের ইজমা নকল করে বলেন: ﺛﺎﻟﺜﻬﺎ : - ﻫﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ -ﻳﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻀﺎﺋﻞ ﺩﻭﻥ ﺍﻷﺣﻜﺎﻡ - তৃতীয় মত যা জমহুর ওলামায়ে কেরাম গ্রহন করেছেন তা হল (জইফ হাদিস) আহকামের ক্ষেত্রে আমলযোগ্য না হলেও ফাজায়েলের ক্ষেত্রে আমলযোগ্য(আল-কওলুল বাদি-৪৯৮)

১৬.ইমাম সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি .(মৃ:৯১১ হি.)
¤ তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল মাকালা-ইয়ে বলেন >>পূর্বেকার সকল ফকিহ ও হাদিস বিশারদ গন তারা খবর (জইফ হাদিস)-গুলকে খাসায়েস বা গুণাগুণ, অথবা মু'জিযাত বা অলৌকিক বিষয় প্রভৃতি অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। আবার কখনো কখনো মানাকিব (ব্যক্তির নৈতিক বা মহৎ কার্যাবলি),মুকাররমাত (ব্যাক্তির মাহাত্মবলি) ইত্যাদি অধ্যায়ের অধীনেও উল্লেখ করতেন। আর তারা মনে করতেন এজাতীয় অধ্যায়ে এধরনের হাদিস উল্লেখ করা এবং
তেমনি ফাজায়েলে আমলের ক্ষেত্রে সহিহ নয় এমন হাদিস উল্লেখ করার অবকাশ আছে।(আল-আজভিবাহ-৩৯)

১৭.শায়েখ জালালুদ্দিন দাও ওয়ানি রহমতুল্লাহি আলাইহি .মৃ:৯১৮ হি)
¤ তিনি বলেন: >>সকল উলামায়ে কেরাম একমত পোষন করেছেন যে, জইফ হাদিস দ্বারা আহকাম প্রমাণিত হয় না। তবে ফাযায়েলে আমালের ক্ষেত্রে জইফ হাদিস অনুযায়ী আমল জায়েজ, বরং মুস্তাহাব(খুলাসাহ-২৬)

১৮.ইবনে নাজ্জার রহমতুল্লাহি আলাইহি ..(মৃ:৯৭২ হি.)
¤ তিনি বলেন: >>ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে জইফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যাবে। এটা ইমাম আহমাদ রহ, মুওয়াফফাক রহ. ও অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মত (খুলাসাহ-২৯)

১৯.ইবনে হাজার আল হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি .(মৃ:৯৭৪ হি.)
¤ তিনি বলেন: >> উম্মাহর সর্বসম্মত মত হল, জইফ হাদিস তথা মুরসাল, মু'দাল, মুনকাতে পর্যায়ের হাদিস দ্বারা আমলের ফযীলত সাব্যস্ত করা যাবে (খুলাসাহ-২৬)

২০.মোল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ..(মৃ:১০১৪ হি.)
¤ তিনি স্বীয় কিতাব আল-হাজ্জুল আওফার ফিল হাজ্জিল আকবার-এরমধ্যে নিজের মত এভাবে উল্লেখ করেন-
-ﻓﺈﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﻣﻌﺘﺒﺮ ﻓﻲ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﻋﻨﺪ ﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻣﻦ ﺃﺭﺑﺎﺏ ﺍﻟﻜﻤﺎﻝ٠
সকল ওলামায়ে কেরামের নিকট ফাযায়েলে আমালের ক্ষেত্রে জইফ হাদিস গ্রহনযোগ্য (আল আজভিবাহ-৩৭)

✔এ ছাড়াও আরও অনেক যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসে কেরাম জইফ হাদিসকে গ্রহন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহিহ বুঝ দান করুন-আমীন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সব ধরনের যাদু-টোনা ও বান কাটার সহজ আমল

ফাজায়েলে আমাল নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন

Sheet for MICROSOFT EXCEL