কিয়ামতের দশটি বড় আলামতসমূহ

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ الْغِفَارِيِّ، قَالَ اطَّلَعَ النَّبِيُّ صلى اللہ عليه وسلم عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ فَقَالَ ‏"‏ مَا تَذَاكَرُونَ ‏ ‏.‏ قَالُوا نَذْكُرُ السَّاعَةَ ‏.‏ قَالَ  إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ ‏ ‏.‏ فَذَكَرَ الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُولَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ صلى الله عليه وسلم وَيَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلاَثَةَ خُسُوفٍ خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ
হুজাইফা ইবনে আসীদ আল-গেফারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি দেখলেন যে, আমরা আপোসে আলাপ-আলোচনা করছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন; “তোমরা আপোসে কি ব্যাপারে আলাপ- আলোচনা করছ? তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, কিয়ামতের বিষয়ে। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- “কিয়ামত ততদিন অনুষ্ঠিত হবে না যতদিন তোমরা দশটি নিদর্শন না দেখবে। অতঃপর তিনি উল্লেখ করেনক- ধোঁয়া, দাজ্জাল, জন্তুর আবির্ভাব, পশ্চিম গগন থেকে সূর্য উদিত হওয়া, ‘ঈসা ইবনে মারইয়ামের অবতরণ, ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব, তিনিটি ধ্বসঃ একটি পূর্বে, দ্বিতীয়টি পশ্চিমে আর তৃতীয়টি আরব উপদ্বীপে। এরপর ইয়ামেন থেকে আগুন বের হবে এবং মানুষকে ধাওয়া করে হাশরের ময়দানের দিকে নিয়ে যাবে”।    (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৭০২১,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
১।  দাজ্জালের বহিঃপ্রকাশঃ
দাজ্জাল বনি আদমেরই একজন মানুষ। শেষ জামানায় তার আবির্ভাব ঘটবে এবং সে নিজেকে রব (প্রতিপালক) দাবি করবে। পূর্ব তথা খোরাসান থেকে সে বের হবে। অত:পর সমস্ত পৃথিবী বিচরণ করবে। প্রতিটি দেশে প্রবেশ করবে কিš ‘ মসজিদে আকসা, তূর পাহাড়, মক্কা ও মদীনাতে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ ঐগুলোকে ফেরেশতাগণ পাহারা দিয়ে রাখবেন। মানুষ ঘুমে বেঁহুশ হয়ে পড়বে। মদীনায় তিনটি কম্পন হবে, যার ফলে প্রতিটি কাফের ও মুনাফেক সেখান থেকে বের হয়ে চলে যাবে। দাজ্জালের পরিচয়
দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিন বান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখ করেছেন মুমিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। জাহেল-মূর্খ ও হতভাগ্য ব্যতীত কেউ দাজ্জালের ধোকায় পড়বেনা।
হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ ‏إِنِّي لأُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ وَقَدْ أَنْذَرَ قَوْمَهُ وَلَقَدْ أَنْذَرَهُ نُوحٌ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلاً لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার লোকদের মাঝে দাঁড়ালেন। তিনি আল্লাহ তাআলা যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। এরপর দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন আর বললেনঃ আমি তার সম্পর্কে তোমাদের খুব সতর্ক করছি। এমন কোন নাবী আসেননি যিনি তাঁর কাউমকে এ বিষয়ে সতর্ক করেননি। নূহ (আলাইহিস সালাম)ও তাঁর কউমকে এর বিষয়ে সতর্ক করে গিয়েছেন। তবে আমি তার সম্পর্কে তোমাদের এমন একটি কথা বলছি যা অন্য কোন নাবী তার কাউমকে বলেন নি, তোমরা জেনে রাখ সে হল কানা। অতচ আল্লাহ তো কানা নন।    (সুনানু আত-তিরমিযি,হাদিস নং-২২৩৮,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
দাজ্জালের ফেতনাঃ
দাজ্জালের আবির্ভাব এক বিরাট ফেতনা; কারণ আল্লাহ তা’আলা তাকে এমন বড় বড় অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর শক্তি দান করবেন যার ফলে আক্কেল গুড়ুম হয়ে যাবে। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তার সাথে জান্নাত-জাহান্নাম থাকবে। প্রকৃতপক্ষে তার জাহান্নাম হবে জান্নাত আর জান্নাত হবে জাহান্নাম। আরো তার সাথে থাকবে রুটির পাহাড় এবং পানির নদীসমূহ। তার নির্দেশে আকাশ বৃষ্টি বষর্ণ করবে এবং জমিন উদ্ভিদ গজাবে। পৃথিবীর সমস্ত গুপ্তধন তার সঙ্গে চলবে। মেঘমালাকে বাতাস যেমন দ্রুত পশ্চাদ গমন করে তেমনি সে অতিদ্রুত পথ অতিক্রম করবে। 
সে পৃথিবীতে ৪০দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন হবে এক মাসের সমান, তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান আর বাকি দিনগুলো হবে আমাদের দিনের মতই দিন। অততঃপর তাকে ‘ঈসা আলাইহিস সালাম হত্যা করবেন ফিলিস্তীনের ‘লুদ’ নামক গেটের নিকটে।
দাজ্জালের শারীরিক বর্ণনাঃ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দাজ্জালের আনুগত্য বা তাকে বিশ্বাস না করার জন্য সাবধান করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে তার বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে করে তার থেকে আমরা সাবধানে থাকতে পারি। তিনি বর্ণনা করছেন যে, সে একজন লাল রঙ্গের যুবক ও তার এক চোখ টেরা হবে। তার কপালে লিখা থাকবে “কাফির’’ যা প্রতিটি মুসলিম পড়বে।
হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ سَبْطُ الشَّعَرِ يَنْطُفُ أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا ابْنُ مَرْيَمَ ثُمَّ ذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ فَإِذَا رَجُلٌ جَسِيمٌ أَحْمَرُ جَعْدُ الرَّأْسِ أَعْوَرُ الْعَيْنِ كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ قَالُوا هَذَا الدَّجَّالُ أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ
ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমি ঘুমের অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কা‘বার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি স্থুলকায় লাল বর্ণের, কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙ্গুরের মত। লোকেরা বলল এ-হল দাজ্জাল! তার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইবনু কাতান, বানী খুযা‘আর এক লোক।    (সহীহ বুখারী,হাদিস নং-৭১২৮,তাওহীদ পাবলিকেশন)
দাজ্জাল বের হওয়ার স্থানঃ
عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ، قَالَ ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الدَّجَّالَ-- إِنَّهُ خَارِجٌ خَلَّةً بَيْنَ الشَّأْمِ وَالْعِرَاقِ فَعَاثَ يَمِينًا وَعَاثَ شِمَالاً يَا عِبَادَ اللَّهِ فَاثْبُتُوا 
নাওয়াস ইবনু সামআন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন---- সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! অবিচল থাকবে।     (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৭১০৬,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
যে সমস্ত স্থানে দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে নাঃ
أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ مِنْ بَلَدٍ إِلاَّ سَيَطَؤُهُ الدَّجَّالُ إِلاَّ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ لَيْسَ لَهُ مِنْ نِقَابِهَا نَقْبٌ إِلاَّ عَلَيْهِ الْمَلاَئِكَةُ صَافِّينَ يَحْرُسُونَهَا ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِينَةُ بِأَهْلِهَا ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ فَيُخْرِجُ اللهُ كُلَّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ
আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মক্কা ও মদিনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল পদচারণ করবে না। মক্কা এবং মদিনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মদিনা তার অধিবাসীদেরকে নিয়ে তিনবার কেঁপে উঠবে এবং আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত কাফির এবং মুনাফিকদেরকে বের করে দিবেন।    (সহীহ বুখারী,হাদিস নং-১৮৮১,তাওহীদ পাবলিকেশন)
দাজ্জালের অনুসারীঃ
দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদি, ইরানী (পার্শিয়ান- অগ্নিপূজক), তুর্কী ও কিছু মিশ্রিত মানুষ যাদের বেশীর ভাগ বেদুঈন ও মহিলা।
হাদিস শরীফে এসেছে-
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏‏ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ
আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুগামী হবে, তাদের গায়ে থাকবে তায়লাসান চাদর।   (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৭১২৫,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায়ঃ
আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমানের মাধ্যমে। বিশেষ করে সালাতে দাজ্জালের ফেৎনা থেকে আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে। পলায়ন করেও দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচা সম্ভব। 
হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ الْكِلَابِيِّ، قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدَّجَّالَ، فَقَالَ: إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ، وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ، فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ، وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ، فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ، فَإِنَّهَا جِوَارُكُمْ مِنْ فِتْنَتِهِ، قُلْنَا: وَمَا لَبْثُهُ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ: أَرْبَعُونَ يَوْمًا: يَوْمٌ كَسَنَةٍ، وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ، وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ، وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ، أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلَاةُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ؟ قَالَ: لَا، اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ، ثُمَّ يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عِنْدَ الْمَنَارَةِ الْبَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ، فَيُدْرِكُهُ عِنْدَ بَابِ لُدٍّ، فَيَقْتُلُهُ
আন-নাওয়াস ইবনু সাম‘আন আল-কিলাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকতে যদি সে আবির্ভূত হয় তবে তোমাদের পক্ষ থেকে আমিই তার প্রতিপক্ষ হবো। আর আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান না থাকা অবস্থায় যদি সে আবির্ভূত হয় তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজেই তার প্রতিপক্ষ হতে হবে। আর আল্লাহ হবেন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার পক্ষে দায়িত্বশীল। তোমাদের মাঝে যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন সূরা আল-কাহফের প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে; কেননা এটাই হবে ফিতনা থেকে তার নিরাপত্তার প্রধান উপায়।
আমরা বললাম, সে পৃথিবীতে কতদিন থাকবে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ দিন। একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান ও একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান, আর বাকী দিনগুলো হবে তোমাদের সাধারণ দিনগুলোর সমান। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, সে দিনে একদিন ও এক রাতের সালাত কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না, তোমরা অনুমান করে দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে (সালাত পড়বে)। অতঃপর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ্লাইহিস সালাম) দামেশকের পূর্ব প্রান্তে একটি সাদা মিনারে অবতরণ করবেন এবং ‘লুদ্দ’ নামক স্থানের দ্বারপ্রান্তে দাজ্জালকে নাগালে পাবেন এবং হত্যা করবেন।     (সুনানু আবু দাউদ,হাদিস নং-৪৩২১,তাহকিককৃত,হাদিস একাডেমি)
২।  ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম-এর অবতরণঃ
দাজ্জালের আবির্ভাব ও পৃথিবীতে তার বিপর্যয় সৃষ্টির পর আল্লাহ তা‘আলা ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে দুনিয়াতে প্রেরণ করবেন। তিনি দু’জন ফেরেশতার ডানায় ভর করে দামেস্ক (সিরিয়ার রাজধানী)-এর পূর্বদিকের সাদা মিনারার নিকটে অবতরণ করবেন। অতঃপর দাজ্জালকেহত্যা করবেন, ইসলামের বিধান জারি করবেন, ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, কর-ট্যাক্স উঠিয়ে দিবেন, সম্পদের প্রাচুর্য হবে, হিংসা-বিদ্বেষ চলে যাবে। ৭বছর তিনি অবস্থান করবেন। তখন দু’জনের মধ্যে কোন প্রকার শত্রুতা থাকবে না। অতঃপর তিনি মারা যাবেন এবং মুসলমানগণ তাঁর জানাযা আদায় করবেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা সিরিয়ার দিক থেকে সুগন্ধিময় ঠাণ্ডা বাতাস প্রেরণ করবেন। ফলে যার অন্তরে অণু পরিমাণ কল্যাণ বা ঈমান থাকবে সে মারা যাবে। আর অবশিষ্ট থাকবে দুষ্টপ্রকৃতির মানুষেরা। তারা পাখীর মত হালকা মেজাজের এবং হিংস্র জন্তুর মত জালেম প্রকৃতির হবে। তারা গাধার মত মাতলামী-পাগলামী করবে। অঃপর শয়তান তাদেরকে মূর্তির পূজা করার নির্দেশ করবে। তাদের উপরই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَيُوْشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمْ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيْبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيْرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ وَيَفِيْضَ الْمَالُ حَتَّى لَا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ حَتَّى تَكُوْنَ السَّجْدَةُ الْوَاحِدَةُ خَيْرًا مِّنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا
ثُمَّ يَقُوْلُ أَبُوْ هُرَيْرَةَ وَاقْرَءُوْآ إِنْ شِئْتُمْ وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهٰ قَبْلَ مَوْتِهٰ وَيَوْمَ الْقِيٰمَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا 
আবূ হুরাইরাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে মারিয়ামের পুত্র ‘ঈসা ( আলাইহিস সালাম) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে আগমন করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন। তখন সম্পদের ঢেউ বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজদা করা তামাম দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ হতে অধিক মূল্যবান বলে গণ্য হবে।    (সহীহ বুখারী,হাদিস নং-৩৪৪৮,তাওহীদ পাবলিকেশন)
অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ ‘‘কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবেন।     ( সূরা আন-নিসা,আয়াতঃ ১৫৯ )
৩।  ইয়াজূজ মাজূজের আবির্ভাবঃ
ইয়াজূজ মাজূজ বনি আদমের বড় দু’টি উম্মত। তারা বড় শক্তিশালী জাতি, তাদের মোকাবেলা করার মত কারো শক্তি হবে না। তাদের আবির্ভাব কিয়ামতের বড় আলামতের একটি। তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীগণ তাদের উপর বদদোয়া করবেন, যার ফলে তারা সকলে মারা যাবে।
১। আল্লাহ তা’আলার বাণী-
حَتَّىٰٓ إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُم مِّن كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ
অবশেষে যখন ইয়া’জূজ ও মা’জূজকে মুক্তি দেয়া হবে, আর তারা প্রতিটি উঁচু ভূমি হতে ছুটে আসবে।    (সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াতঃ ৯৬)
ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীগণ জমিনে অবতরণের পর তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। অতঃপর আল্লাহ পাখী প্রেরণ করবেন এবং তারা ইয়াজূজ ও মাজূজদেরকে বহন করে আল্লাহ যেখানে চাইবেন সেখানে ফেলে দিবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ বৃষ্টি বষর্ণ করে পৃথিবীকে ধৌত করে দিবেন। এরপর জমিনে বরকত নাজিল হবে, শাক-সবজি ও ফল-ফলাদি প্রকাশ পাবে এবং শস্যাদি ও পশুতে বরকত নাজিল হবে।
ভূমিধ্বস হলো কিয়ামতের বড় আলামত
৪।  একটি হবে পূর্বাঞ্চলে।
৫।  দ্বিতীয়টি হবে পশ্চিমাঞ্চলে বা পশ্চিমে।
৬।  আর তৃতীয়টি হবে আরব উপদ্বীপে। এগুলো এখনো সংঘটিত হয়নি।
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ الْغِفَارِيِّ، قَالَ اطَّلَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ فَقَالَ ‏مَا تَذَاكَرُونَ ‏‏.‏ قَالُوا نَذْكُرُ السَّاعَةَ ‏.‏ قَالَ إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ ‏‏.‏ فَذَكَرَ الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُولَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ صلى الله عليه وسلم وَيَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلاَثَةَ خُسُوفٍ خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ‏
হুযায়ফা ইবনু আসীদ আল গিফারী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা আলোচনা করছিলাম। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছো? তাঁরা বললেন- আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন না তোমরা দশটি বিশেষ নিদর্শন দেখবে। অতঃপর তিনি ধুম্র, দাজ্জাল, দাব্বা, পশ্চিম দিগন্ত হতে সূর্য উদিত হওয়া, মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অবতরণ, ইয়াজুজ মা-জুজ এবং তিনবার ভূমি ধ্বসে যাওয়া তথা পূর্ব প্রান্তে একটি তুমি ধ্বস, পশ্চিম প্রান্তে একটি ভূমি ধ্বস, এবং আরব উপদ্বীপে একটি ভূমি ধ্বসের কথা উল্লেখ করলেন। এ নিদর্শনসমূহের পর এক আগুন প্রকাশিত হবে, ইয়ামান থেকে এবং মানুষকে তাড়িয়ে হাশরের ময়দানে দিকে নিয়ে যাবে।    (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৭০২১,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
৭।  ধোঁয়া নির্গমণঃ
শেষ জামানায় ধোঁয়া নির্গমণ কিয়ামতের বড় নিদর্শনসমূহের একটি।
১। আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণী-
فَٱرْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِى ٱلسَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِينٍ يَغْشَى ٱلنَّاسَ ۖ هَٰذَا عَذَابٌ أَلِيمٌ
অতএব অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ। যা মানুষদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে, এটি যন্ত্রণাদায়ক আযাব।     (সূরা আদ-দুখান,আয়াতঃ ১০-১১) 
২। হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ سِتًّا الدَّجَّالَ وَالدُّخَانَ وَدَابَّةَ الأَرْضِ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَأَمْرَ الْعَامَّةِ وَخُوَيِّصَةَ أَحَدِكُمْ
আবু হুরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছয়টি (আলামত সংঘটিত হওয়ার আগে) দ্রুত তোমরা নেক আমাল করতে শুরু করো। তা হলো দাজ্জাল প্রকাশিত হওয়া, ব্যাপক ধোয়া দেখা দেয়া, দাব্বাতুল আরদ (অদ্ভুত জন্তু) বের হওয়া, পশ্চিমাকাশ হতে সূর্যোদয় হওয়া, কিয়ামাত এবং মাওত।    (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৭২৮৮,হাদিস একাডেমি) 
৮।  পশ্চিম গগন থেকে সূর্য উদয়ঃ
পশ্চিম গগন থেকে সূর্য উদিত হওয়া কিয়ামতের বড় আলামতের একটি। ইহা হচ্ছে উর্ধব জগতের বিবর্তনকারী সর্ববৃহৎ প্রথম নিদর্শন। এর বহিঃপ্রকাশের দলিলসমূহঃ
১। আল্লাহ তা’আলার বাণী-
يَوْمَ يَأْتِى بَعْضُ ءَايَٰتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَٰنُهَا لَمْ تَكُنْ ءَامَنَتْ مِن قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِىٓ إِيمَٰنِهَا خَيْرًا ۗ قُلِ ٱنتَظِرُوٓا۟ إِنَّا مُنتَظِرُونَ
যেদিন তোমার রবের নিদর্শনসমূহের কিছু প্রকাশ পাবে, সেদিন কোন ব্যক্তিরই তার ঈমান উপকারে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনেনি, কিংবা সে তার ঈমানে কোন কল্যাণ অর্জন করেনি। বল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষা করছি’।    (সূরা আল-আনআ’ম,আয়াতঃ ১৫৮)
أَبُوْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا فَإِذَا رَآهَا النَّاسُ آمَنَ مَنْ عَلَيْهَا فَذَاكَ حِيْنَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيْمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ.
২। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত ক্বিয়ামাত অনুষ্ঠিত হবে না। লোকেরা যখন তা দেখবে, তখন পৃথিবীর সকলে ঈমান আনবে এবং সেটি হচ্ছে এমন সময় “পূর্বে ঈমান আনেনি এমন ব্যক্তির ঈমান তার কাজে আসবে না”।    (সহীহ বুখারী,হাদিস নং-৪৬৩৫,তাওহীদ পাবলিকেশন) ( সূরা আল-আন‘আ’ম,আয়াতঃ ১৫৮)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَدِيثًا لَمْ أَنْسَهُ بَعْدُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏‏ إِنَّ أَوَّلَ الآيَاتِ خُرُوجًا طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَخُرُوجُ الدَّابَّةِ عَلَى النَّاسِ ضُحًى وَأَيُّهُمَا مَا كَانَتْ قَبْلَ صَاحِبَتِهَا فَالأُخْرَى عَلَى إِثْرِهَا قَرِيبًا
৩। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমি একটি হাদীস মুখস্থ করেছি, যা কখনো আমি ভুলিনি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল, পূর্ব দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া এবং পূর্বাহ্নের সময় দাব্বা (মানুষ রূপ পশু-গরু) বের হওয়া। এ দুটির যে কোনটি প্রথমে সংঘটিত হবে অবিলম্বে দ্বিতীয়টিও তড়িৎ প্রকাশিত হবে।    (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৭১১৬,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
৯।  জন্তুর আবির্ভাবঃ
শেষ জামানায় জমিনের উপর বিচরণকারী জন্তুর আবির্ভাব কিয়ামত সন্নিকটের আলামত। সে বের হয়ে মানুষদের নাকের উপর ছেঁক দিবে। কাফেরের নাকে দাগ পড়বে আর মুমিনের চেহারা উজ্জ্বল হবে। জন্তুর আবির্ভাবের দলিলঃ
১। আল্লাহ তা’আলার বাণী-
وَإِذَا وَقَعَ ٱلْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَآبَّةً مِّنَ ٱلْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ ٱلنَّاسَ كَانُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا لَا يُوقِنُونَ
আর যখন তাদের উপর ‘বাণী’ (আযাব) বাস্তবায়িত হবে তখন আমি যমীনের জন্তু (দাব্বাতুল আরদ) বের করব, যে তাদের সাথে কথা বলবে। কারণ মানুষ আমার আয়াতসমূহে সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখত না।   (সূরা আন-নামাল,আয়াতঃ ৮২)
২। হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ سِتًّا الدَّجَّالَ وَالدُّخَانَ وَدَابَّةَ الأَرْضِ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَأَمْرَ الْعَامَّةِ وَخُوَيِّصَةَ أَحَدِكُمْ
আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে তোমরা নেক আমল করতে আরম্ভ কর। তা হল দাজ্জাল, ধোঁয়া, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া ব্যাপক বিষয় (কিয়ামত) এবং খাস বিষয় (ব্যাক্তির মৃত্যু)।    (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৭১৩১,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
১০।  আগুনের নির্গমন যা মানুষকে জমায়েত (একত্রিত) করবেঃ
ইহা বড় ধরনের আগুন যা ইয়ামেনের পূর্ব দিকের এডেন নগরী থেকে বের হবে। ইহা কিয়ামতের বড় আলামতসমূহের সর্বশেষ এবং কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার সর্বপ্রথম নিদর্শন। আগুন ইয়ামেন থেকে বের হয়ে জমিনে ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষকে হাশরের ময়দান শামের (সিরিয়া) দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে।
মানুষকে একত্রিত করার আগুনের পদ্ধতিতঃ
হাদিস শরীফ এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلاَثِ طَرَائِقَ رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلاَثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَيَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمْ النَّارُ تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ بَاتُوا وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ أَمْسَوْا
আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সূত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন মানুষকে একত্রিত করা হবে তিন প্রকারে। একদল হবে আল্লাহর প্রতি আসক্ত ও দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত। দ্বিতীয় দল হবে দু’জন, তিনজন, চারজন বা দশজন এক উটের ওপর আরোহণকারী। আর অবশিষ্ট যারা থাকবে অগ্নি তাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। যেখানে তারা থামবে আগুনও তাদের সঙ্গে সেখানে থামবে। তারা যেখানে রাত্রি কাটাবে আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে রাত্রি কাটাবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে সকাল করবে। যেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে আগুন সেখানেও তাদের সাথে অবস্থান করবে।    (সহহী বুখারী,হাদিস নং-৬৫২২,তাওহীদ পাবলিকেশন)
কিয়ামতের প্রথম বড় আলামতঃ
عَنْ أَنَسٍ قَالَ بَلَغَ عَبْدَ اللهِ بْنَ سَلَامٍ مَقْدَمُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ فَأَتَاهُ فَقَالَ إِنِّيْ سَائِلُكَ عَنْ ثَلَاثٍ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا نَبِيٌّ قَالَ مَا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَمَا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَمِنْ أَيِّ شَيْءٍ يَنْزِعُ الْوَلَدُ إِلَى أَبِيْهِ وَمِنْ أَيِّ شَيْءٍ يَنْزِعُ إِلَى أَخْوَالِهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَبَّرَنِيْ بِهِنَّ آنِفًا جِبْرِيْلُ قَالَ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ ذَاكَ عَدُوُّ الْيَهُوْدِ مِنْ الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَّا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُ النَّاسَ مِنْ الْمَشْرِقِ إِلَى الْمَغْرِبِ وَأَمَّا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ حُوْتٍ وَأَمَّا الشَّبَهُ فِي الْوَلَدِ فَإِنَّ الرَّجُلَ إِذَا غَشِيَ الْمَرْأَةَ فَسَبَقَهَا مَاؤُهُ كَانَ الشَّبَهُ لَهُ وَإِذَا سَبَقَ مَاؤُهَا كَانَ الشَّبَهُ لَهَا قَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ ثُمَّ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ الْيَهُوْدَ قَوْمٌ بُهُتٌ إِنْ عَلِمُوْا بِإِسْلَامِيْ قَبْلَ أَنْ تَسْأَلَهُمْ بَهَتُوْنِيْ عِنْدَكَ فَجَاءَتْ الْيَهُوْدُ وَدَخَلَ عَبْدُ اللهِ الْبَيْتَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللهِ بْنُ سَلَامٍ قَالُوْا أَعْلَمُنَا وَابْنُ أَعْلَمِنَا وَأَخْبَرُنَا وَابْنُ أَخْيَرِنَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ عَبْدُ اللهِ قَالُوْا أَعَاذَهُ اللهُ مِنْ ذَلِكَ فَخَرَجَ عَبْدُ اللهِ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ فَقَالُوْا شَرُّنَا وَابْنُ شَرِّنَا وَوَقَعُوْا فِيْهِ
আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালামের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদিনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর নিকট আসলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে চাই যার উত্তর নাবী ব্যতীত আর কেউ জানে না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কী? আর সর্বপ্রথম খাবার কী, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কী কারণে সন্তান তার পিতার মত হয়? আর কী কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের মত হয়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই মাত্র জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবী বলেন, তখন ‘আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, সে তো ফেরেশতাগণের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হলো আগুন যা মানুষকে পূর্ব হতে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হবার ব্যাপার এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্খলিত হয় তবে সন্তান তার সদৃশ হবে আর যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সদৃশ হয়। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি- নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদীরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কছে আমার কুৎসা রটনা করবে। অতঃপর ইয়াহূদীরা এলো এবং ‘আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি ‘আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করে, এতে তোমাদের অভিমত কী হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় ‘আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লোক এবং সবচেয়ে খারাপ লোকের সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লেগে গেল।    (সহীহ বুখারী,হাদিস নং-৩৩২৯,তাওহীদ পাবলিকআশন)
পর্যায়ক্রমে নিদর্শনসমূহ ঘটা ও পরিস্থিতির পরিবর্তনঃ
১। যখন কিয়ামতের বড় আলামতের প্রথমটি প্রকাশ পেয়ে যাবে তখনট একটির পর অপরটি পর্যায়ক্রমে সংঘটিত হতেই থাকবে। যেমনটি
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لاَ يُقَالَ فِي الأَرْضِ اللَّهُ اللَّهُ
আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীতে 'আল্লাহ আল্লাহ বলার মতো লোক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামাত হবে না।   (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-২৭০,হাদিস একাডেমি)
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكُونَ أَسْعَدَ النَّاسِ بِالدُّنْيَا لُكَعُ ابْنُ لُكَعَ
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতক্ষণ না নিকৃষ্ট লোকের পুত্র নিকৃষ্টরা পৃথিবীতে ভাগ্যবান হবে, ততক্ষন পর্যন্ত কিয়ামাত সংঘটিত হবে না।    (সুনানু আত-তিরমিযি,হাদিস নং-২২০৯,তাহক্বীককৃত)

মুহসিন মোল্লাহ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সব ধরনের যাদু-টোনা ও বান কাটার সহজ আমল

ফাজায়েলে আমাল নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন

জুলকারনাইন