তথাকথিত আহলে হাদীসদের আসল পরিচয়
জাল আর জয়ীফ বলে তথাকথিত আহলে হাদীসরা হাজার হাজার হাদীসের অস্বীকারকারী হয়ে গেছে। যাকে বলে মুনকারে হাদীস। এরা হাদীস মানার নামে হাদীসকে সবসময় অস্বীকার করে যাচ্ছে। যারা হাদীসকে অস্বীকার করবে এরা মুরতাদের কাছাকাছি। তথাকথিত আহলে হাদীসরা যে মতের অনুসারী সে মতের বিরুদ্ধে গেলেই উক্ত হাদীসকে তারা জাল বা জয়ীফ বলে। বড় বড় মুহাদ্দিসীন সলফে সালেহীন যে হাদীসগুলোকে আমলে এনেছেন, যে হাদীসগুলো গ্রহণ করেছেন সেরূপ হাজার হাজার হাদীস লামাযহাবী তথাকথিত আহলে হাদীসদের কাছে জাল বা জয়ীফ। এটি হাদীস অস্বীকারের ভিন্ন রূপ।
উলামায়ে কেরাম মুসলিম উম্মাহকে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন যে, আহলে হাদীস নামের তথাকথিত আহলে হাদীসরা একটি বাতিল ও গোমরাহ দল। কারণ উলামায়ে কেরাম জানেন এদের জন্মের কাহিনী। এদের হাদীস অস্বীকার করার বাস্তব অবস্থা। এদের সাহাবা বিদ্বেষের কাহিনী। এদের নবী রাসূল বিদ্বেষের বাস্তব ঘটনা। সলফে সালেহীনদের প্রতি মুসলমানদের আস্তা ও ভক্তি নষ্ট করার প্রয়াস। মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে শতধা বিভক্ত করার এদের পরিকল্পনা। ইসলামের বেশকিছু হুকুম বাদ করে দেওয়ার অপপ্রয়াস। এগুলো সব উলামায়ে কেরাম আগে থেকেই জানেন। কারণ এদের জন্মদাতা হলো ইংরেজ সরকার। ইংরেজ সরকার তো ইসলামের এত ভক্ত ছিল না যে, ইসলামের বিকাশের জন্য একটি দলকে টাকা পয়সা খরচ করে মার্কেটে আনবে। বরং ইংরেজ সরকার ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যই বিভিন্ন দল উপদল বানিয়েছিল। তার মধ্যে কাদিয়ানীকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। তথাকথিত আহলে হাদীস দলও ওই ইংরেজ বাপের জন্ম দেওয়া। সুতরাং তখন থেকে উলামায়ে কেরাম বলে এসেছে এই দল ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যই জন্ম দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তাদের মুখোশ মুসলমানদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যত দিন যাবে এদের মুখোশ উন্মুচিত হবে ইনশাআল্লাহ।
এদের প্রতারণা সম্পর্কে সামান্য নজর দেওয়া যাক। যেহেতু এদের মাধ্যমে ইংরেজ সরকার মুসলমানদের অনেক আমলকে নষ্ট করতে চায়, অনেক হাদীস অস্বীকার করাতে চায়, সে কারণে এদের নাম দেওয়া হয়েছে আহলে হাদীস। অর্থাৎ প্রত্যেকে এক একজন হাদীস বিশারদ। বাস্তবে কি প্রত্যেক আহলে হাদীস হাদীস বিশারদ? শতকারা ২ জনও তাদের মধ্যে হাদীস বিশারদ পাওয়া যাবে কি না তাতে সন্দেহ। কিন্তু নাম দেওয়া হয়েছে আহলে হাদীস।
আহলে হাদীস শব্দটি ব্যবহৃত হয় হাদীসে পারদর্শী এবং হাদীস বিশারদদের ক্ষেত্রে। যেহেতু এদের দিয়ে হাদীসের হাজার হাজার অংশ বাদ করাতে হবে তাই এদের নাম রেখেছে হাদীস বিশারদ। আমাদের দেশে যেমন এখন বড় বড় মুফতীরা সংসদে বসে বিভিন্ন ফতওয়া দেন। বাজারে যারা ঔষধ বিক্রি করে তাদের সর্বপ্রথম ফতওয়া হলো যার মরদামী শক্তি নাই তার পক্ষে ইমামতীও জায়েয নেই। কত বড় মুফতী দেখেন। তথাকথিত আহলে হাদীস- হাদীস বিশারদরা তেমনিই।
এদের মাধ্যমে সলফে সালেহীনদের সাথে বেআদবী করিয়ে সলফে সালেহীনদের প্রতি মুসলমানদের যে ভক্তি তা হ্রাস করাও ইংরেজ এবং ইহুদীদের একটি পরিকল্পনা ছিল। এই কাজ ভালোভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য তথাকথিত আহলে হাদীসদের নাম দেওয়া হয়েছে সলফী। সলফী বলা হয় যারা সলফে সালেহীনদের পথে চলে। অথচ এই তথাকথিতরা সবসময় সলফে সালেহীনদের বিষোদগারে মগ্ন থাকে, তাদের বাতলানো পথকে বিদআত, শিরিক বলে বেড়ায়। এমনকি সাহাবায়ে কেরামের সিদ্ধান্তকেও বিদআত বলতে দ্বিধাবোধ করে না। সে ভণ্ড গোমরাহদের নাম দেওয়া হয়েছে সলফী।
এরা রাসূল (সা.) এর হাজার হাজার হাদীস অস্বীকার করে, রাসূল (সা.) এর কোনো কথা শরীয়তের দলীল হতে পারে না এমন মন্তব্য তাদের মাঝে পাওয়া যায়।এ কারণে তাদের আরেক নাম রাখা হয়েছে মুহাম্মদী।
এরা দলীয় নীতি ছাড়া চলে না। দল যদি মিথ্যা বলে তারাও মিথ্যা বলে। দল যদি বলে সাহাবায়ে কেরামের ইজতিহাদ গ্রহণযোগ্য নয়। তারাও বলে হ্যাঁ। দল যদি বলে আগের সলফরা অনেক বিদআত কাজ করেছে। তারা বলে হ্যাঁ। দল যদি বলে আমীন জোরে বলতে হবে। তারা বলে হ্যাঁ। অথচ এসবের কোনো দলীল তাদের কাছে নেই। তেমনি দল বা তাদের মুজতাহিদরা যা বলে তার উপরই তাদের আমল। কিন্তু তারা যে কথা বলতে বলতে পাগলের মত মুখে ফানা তোলে তা হলো কারো অনুসাণ করা যাবে না। কারো অনুসরণ করা হারাম। শিরিক। অথচ যেরূপ অনুসরণ করা শিরিক সেটা করে তারাই। যেমন ধরুন একটি হাদীস জয়ীফ নয়। কিন্তু সেটাকে আলবানী জয়ীফ বা মওজু বলে দিল। অথচ হাদীসটি জয়ীফ না হওয়ায় যদি তাকে জয়ীফ বলেই মেনে নেওয়া হয় তবে তাহবে হাদীস অস্বীকারের নামান্তর। এক্ষেত্রে দেখুন আলবানী উক্ত হাদীসকে জয়ীফ বলছে সেজন্য তারাও জয়ীফ বলে। যদি নেতার কথা ধরে হাদীস অস্বীকার করা হয় তবে সে মুনকারে হাদীস। যা ধর্মত্যাগের শামিল। তাহলে আলবানীর তাকলীদ করতে গিয়ে তারা মুরতাদের পরিণত হচ্ছে কি না? কারণ তারাই বলে বেড়ায় তাকলীদ করা হারাম, শিরিক।
তারা বলে সহীহ হাদীস ছাড়া কিছু মানা যাবে না। অথচ যখন নিজের এমন কোনো আমল করে যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় তখন উক্ত হাদীসকে সহীহ করার জন্য বিভিন্ন পন্থা এখতেয়ার করে। অর্থাৎ হাদীসের মেশিন। সহীহ হাদীস আর জয়ীফ হাদীস তাদের মেশিনে যেটা তেরী হয় সেটাই তারা মানে। প্রয়োজনে উক্ত হাদীসকে সহীহ বানিয়ে তারা আমল করে। এর চাইতে ধর্মদ্রোহীতা আর কি হতে পারে?
তারা বলে চার মাযহাব মানা হারাম। অথচ ইসলামের এমন কোনো বিষয় নেই যা চার মাযহাবের বাইরে নেই। সুতরাং চার মাহযহাবের একটি মানা মানেই পরিপূর্ণ ইসলাম মানা। চার মাযহাব না মানে সম্পূর্ণরূপে ইসলামকে বয়কট করা। কারণ মুসলমানদের মধ্যে স্বীকৃত মত ও পথ এ চারটিই। পঞ্চম বলতে কিছুই নেই। এই চারটির বাইরে ইসলাম নেই। সুতরাং এই চার মাযহাবের বাইরে যারা যাবে তারা সঠিকভাবে ইসলাম পালন করে এমন বলা যাবে না।
এই অপবাদ যাতে তাদের উপর না আসে সে কারণে তারা সর্বপ্রথম ইসলামের চার দলীলের মধ্যে দুটি নামানা ঘোষণা দেয়। যেখানে রাসূল (সা.) সাহাবাযে কেরামকে কিয়াস করার কথা শিক্ষা দিয়েছেন, যেখানে সাহাবায়ে কেরাম ঐক্যমতের ভিত্তিতে বহু ইসলামী বিষযে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এগুলো সবই তখন ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। যেহেতু তারা ইজমার খেলাফ করে মুসলমানদের ঐক্যমত ধ্বংস করার জন্যই মাঠে নেমেছে সেকারণে এসব আগে থেকেই তার ইসলাম থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। এগুলো ইহুদী পরিকল্পনা ছাড়া কিছুই নয়।
কিয়াস এবং ইজমাকে বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, পরে এসে যে সব বিভিন্ন মাসআলা মুসলমানদের সামনে আসবে সেগুলোর যাতে কোনো সমাধান না হয়। এগুলো সমাধান করা না গেলে ইসলাম যে, পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা সে দাবী অসার প্রমাণিত হবে। ইহুদী বিধর্মীদের এটিও একটি চাওয়া। ইসলামকে যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা না বলা হয়। পরে মুসলমানদের যখন বিভিন্ন মাসআলার সমাধান করা যাবে না। তখন তারা নিজেরাই বলবে তোমাদের ইসলামওতো অপরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এটি বাস্তবায়নের জন্যই মূলত ইজমা কেয়াসকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
ইহুদী খৃষ্টান সম্পর্কে মুসলমানদের দাবী হলো তারা দ্বীনকে বিকৃত করে ফেলেছে। কারণ তাঁদের নবী যারা ছিলেন তাদের সাহাবীগণ দ্বীনকে সঠিকভাবে ধরে রাখেনি। বরঙ তারা নিজেরাই সেখানে বিকৃতি সাধন করে পরবর্তী মানুষদের প্রতি উপস্থাপন করেছে। তাতে বোঝা যায় তাদের নবীগণের সাহাবীরা আমানতের খেয়ানত করেছ। সে কারণে তারা সঠিক দ্বীন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ইহুদীরা তথাকথিত আহলে হাদীসদের মাধ্যমে ইসলামের বেলায়ও সে বিষয়টি প্রমাণ করাতে চায়, রাসূল (সা.) এর সাহাবীগণও ধর্মের ব্যাপারে আমানতদার ছিলেন না। তাদের পরবর্তীরাও আমানতদার ছিলেন না। বরং নিজেরাই ইসলামে বিভিন্ন বিদআত কাজের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে প্রকৃত ইসলাম থেকে মুসলমানদের দূরে রেখেছে। নাউজু বিল্লাহ। এটি বাস্তবায়নের জন্য তথাকথিত আহলে হাদীসদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তোদের সাহাবীদের ব্যাপারে মানুষের বিশস্ততা যেন উঠে যায় সে পন্থা অবলম্বন করবে। তাবেয়ীদের শ্রদ্ধা যেন মুসলমানদের থেকে চলে যায় সে পন্থা অবলম্বন করবে। ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাদ্দিস যারা সঠিক ইসলামকে ধরে রেখেছে তাদের ব্যাপারে যেন মুসলমানদের ভক্তি উঠে যায় সে পন্থাই তোমাদের অবলম্বন করতে হবে।
যাতে আমাদের উপর যে অপবাদ সে অপবাদ তোমাদের বেলায়ও ফিট হয়। তখন আমরা আর তোমাদের মধ্যে একটা সমতা ফিরে আসবে। আমরাও বলতে পারব যদি তোমাদের সাহাবী তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন আর আইম্মায়ে মুজতাহিদীনও খিয়ানতকারী হয় (নাউজু বিল্লাহ) তাহলে তোমাদের ইসলাম সঠিকভাবে আছে বলে তোমাদের যে বাহাদুরী সেটা করা সুযোগ থাকবে না।
এটি বাস্তবায়নের জন্যই তথাকথিত আহলে হাদীসদের সৃষ্টি। তাই তারা শুরুতেই বলে দেয়, ইজমা সেটা আবার কি? কুরআন হাদীস ছাড়া কিছুই মানা যাবে না। না সাহাবীকে মানা যাবে না তাবেয়ীনকে। এটি দাবী করার পর তারা এক দিকে সাহাবায়ে কেরামের ভুল ধরতে চেষ্টা করে, সাহাবায়ে কেরামের এই দোষ সেই দোষ বর্ণনা করে। এমনকি বিভিন্ন মাসআলাকে ‘বিদআতে উমর (রা.)’ (নাউজু বিল্লাহ) বলতেও দ্বিধাবোধ করে না। এর পর তাবেয়ী, তবে তাবেয়ী, ইমাম মুজতাহিদ, মুহাদ্দিসদের বেলায়তো বিষোদগারের কোনো সীমাই নেই। প্রথম বিষোদগারতো এটি, তারা বলে চার মাযহাব মানা হারাম। অথচ ১৪০০ শত বছরের মধ্যে যে সকল মুহাদ্দিস, ফকীহ, গিয়েছেন সকলে যে কোনো মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। এই বাস্তবতা এবং তথাকথিত আহলে হাদীসদের দাবী মিলালে সহজে বোঝা যায় সলফে সালেহীনগণ সকলে হারাম কাজ করেছেন। নাউজু বিল্লাহ। যদি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবেঈন, ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাদ্দিস সবাই হারাম কাজে লিপ্ত থাকে, তাহলে তাদের মাধ্যমে আসা ইসলামেরও বা কি বিশ্বাস! (নাউজু বিল্লাহ।)
এতে প্রমাণিত হবে হয় ইসলাম সঠিকভাবে আমাদের পর্যন্ত পৌছেনি। অন্যান্য ধর্ম যেমন বিকৃত হয়ে গেছে, ইসলামও বিকৃত আকারে আমাদের কাছে পৌছেছে। এরপর আসবে এই বিকৃত ইসলাম মানাইবা কি প্রয়োজন। অন্যান্য ধর্ম যেমন আমরা মানিনা বিকৃত হওয়ার কারণে, ইসলামও আমরা মানবা না বিকৃত হওয়ার কারণে। (নাউজু বিল্লাহ)।
তথাকথিত আহলে হাদীসদের বিভিন্ন দাবী ও আকীদার কারণে মুসলমানকে এভাবেই শেষ পর্যন্ত মুরতাদ হয়ে দুনিয়া থেকে যেতে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এখন বলুন এটিকি ইসলামের রক্ষকদের কাজ? নাকি ভক্ষকদের কাজ? এরা কি মুসলমানদের ইসলাম শেখাতে চায় নাকি মুরতাদ বানাতে চায়।
চার মাযহাব মানা হারাম হওয়ার ব্যাপারে তারা আরো প্রশ্ন করে, সাহাবাযে কেরাম কোন মাযহাবের ছিলেন, রাসূল (সা.) কোন মাজহাব মানতেন? ইত্যাদি বাহারী ইহুদী মার্কা প্রশ্ন।
যাতে সাধারণ মুসলমানগণ মনে করে হ্যাঁ কথাটাতো সত্য। তাদের মাঝে এসব বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তারা জীবনে বিভিন্ন আমল যা করেছে তার উপরও সন্দেহ হয়।
ইসলামের আমলের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টিও ইহুদীদের একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা।
এই ষড়যন্ত্রও বাস্তবায়িত হচ্ছে তথাকথিত আহলে হাদীসদের মাধ্যমে।
আমার এসব কথাগুলো তথাকথিত আহলে হাদীসদের বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখুন। নিশ্চয় শতকরা ১১০ভাগ সত্য পাবেন।
এখন আহলে হাদীসদের চেনার ব্যাপারে আপনাদেরকে সামান্য হাদীস শোনায়। একদিকে হাদীস রাখবেন, অন্য দিকে তথাকথিত আহলে হাদীসদের আচার আচরণ এবয় তাদের আমল আখলাক বাস্তবে দেখবেন। যদি মিলে যায় তবে রাসূল (সা.) এর এ ভবিষ্যদ্বানীটির সত্যতা জাহির হবে। ইনশাআল্লাহ।
হাদীস শরীফের ভবিষ্যৎদ্বাণী অনুযায়ী শেষ যামানায় এমন একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা যুবক বয়সের হবে। তাদের জ্ঞান-বুদ্ধির যথেষ্ট ঘাটতি থাকবে। কথায় কথায় তারা হাদীসের বাণী আওড়াবে। কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করবে এবং ভ্রান্ত আক্বীদা বিশ্বাস প্রমাণের চেষ্টা করবে। বাহ্যিকভাবে তারা খুব ইবাদত-বন্দেগীরত হবে। লোকেরা তাদের নামায-রোজার সামনে নিজেদের নামায-রোজাকে তুচ্ছ মনে করবে। যেন তাদের নামাযই কুরআন-হাদীস মতে সঠিক হচ্ছে আর বাকিদেরটা হচ্ছে না। তবে কুরআন-হাদীসের বুলি শুধু তাদের মুখেই থাকবে অন্তরে গ্রথিত হবে না। মানুষকে গোমরাহ করার জন্যই মূলত কুরআ- হাদীসের দোহাই দেবে। আর বাস্তবে কুরআন-হাদীসবিরোধী আক্বীদা পোষণ করবে এবং কুরআন-হাদীস মোতাবেক জীবন যাপন করবে না। ফলে এরা দ্বীন থেকে ইসলাম থেকে নিজেদের অজান্তেই ছিটকে পড়বে।
নবীজি (সা.) বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে তুলতে একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন যে, যেভাবে দ্রুতগামী তীর শিকারকে এফোড়-ওফোড় করে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে তাতে রক্তের কোনো চিহ্ন থাকে না। তীরটিকে উঠিয়ে ওলট-পালট করে তীরের নখ, কঞ্চি এবং পর দেখা হয় ও সেখানে রক্তের কোনো দাগ না পেয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
তদ্রƒপ ওই দলটির ঈমানের অবস্থাও সন্দেহজনক হবে। খোলাফায়ে রাশেদা, সাহাবায়ে কেরামের পুতপবিত্র কাফেলা আর ওলামায়ে কেরামের আনুগত্য পরিহার করে কুরআন-হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যার অনুসরণ করতে করতে ওই দলটি ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যে, তারা বুঝতেও পারবে না। একসময় তাদের মাঝে ইসলামের কোনো কিছুই আর বাকি থাকবে না।
নবীজি (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন যে, এমন লোকের সাক্ষাৎ পেলে তোমরা তাদেরকে কতল করে দেবে। ওদের কতলকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে আল্লাহর কাছে বিশাল প্রতিদান থাকবে। (বোখারী হা. ৬৯৩০-৬৯৩২, ইবনে মাজাহ হা. ১৭৬)
রাসূল (সা.) ভবিষ্যদ্বানীগুলো করেছেন, তাঁর উম্মত যেন কোনো জামানায় বিভিন্ন ভ্রান্ত দলের প্রতারণ শিকার হয়ে ঈমান ও ইসলাম হারা না হয়। নতুন কিছু দেখলেই যেন নিজের দীর্ঘ আমলের উপর আস্তা হারিয়ে না ফেলে। ভ্রান্ত দলগুলোর মোহনীয় কথায় মন গলে না যায়।
হাদীসের তাদের কঠোরভাবে দমন করার কথা এসেছে। তবে এক্ষেত্রেও মুজতাহিদগনের মতামত দেখতে হবে। এ কঠোরতা কে করবে, তাদের বিচার কে করবে সে ব্যাপারেও ফেকাহতে আলোচনা করা হয়েছ। সুতরাং হাদীস মানার নামে কাউকে সন্দেহ হলেই কতল করে দেওয়া যাবে তা সঠিক নয়। কারণ আইন নিজের হাতে তোলে নেওয়ার বৈধতা ইসলামেও নেই।
আমি শুধুমাত্র তথাকথিত আহলে হাদীস যে একটি বাতিলদল, গোমরাহ দল, মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্যই এই দলের সৃষ্টি, এটি বোঝানোর জন্যই দীর্ঘ আলোচনা করলাম।
মুসলমানদের উচিত যারা তাদের হাতে প্রতারিত হয়েছে, তারা তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। যারা তাদের ফাঁদে পড়ার কাছাকছি, তারা যেন সতর্ক হয়ে যান। আবার মুসলিম সমাজে তাদেরকে এভাবে প্রচার প্রসারের সুযোগ না দেওয়াও দ্বীনি দায়িত্ব।
কারো প্রতি আমার ব্যক্তিগত দ্বন্ধ নেই। সবাই মুসলমান ভাই ভাই। কিন্তু ইসলামের অপব্যাখ্যা করে যারা মুসলমানদের প্রতারনার শিকার করছে তাদের মুখোশ উন্মুচন করাও আমার ঈমানী দায়িত্ব। আমার এই আলোচনা দ্বারা যদি কোনো একজন মুসলমানও হেদায়াত প্রাপ্ত হয় সেটাই হবে আমাদের এই প্রয়াসটুকুর আসল পাওনা।
ফী আমানিল্লাহ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন