তথাকথিত আহলে হাদীসদের কাণ্ড দেখুন
তথাকথিত আহলে হাদীসদের কাণ্ড দেখুন
অনেক দিন আহলে হাদীসরা টাকার জোরে ইন্টারনেট জগতে শুধু খোলা মাঠে গোল করে আসছিল। সম্প্রতি কিছু কিছু উলামায়ে কেরাম তাদের কান্ডজ্ঞানহীন বিভ্রান্তিমূলক একরোখা কাজ দেখে সামান্য সোচ্চার হয়েছেন। বিশেষ করে তথাকথিতদের বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার এক একটা যখন উত্তর দিতে আরম্ভ করলেন তখন তাদের মাথা আর ঠিক থাকলনা। এখন আহলে হাদীসরা সমানে পীর মাশায়েখ, তাবলীগ জামাআত, উলামায়ে দেওবন্দসহ সকলকে গালী দিতে আরম্ভ করল। কাউকে মুশরিক, কাউকে কাফের ইত্যাদি বলতেও তাদের মুখে সামান্য লজ্জা লাগতে দেখা যায় না। তবে তাতে আশ্চয় হওয়ার কিছু নয়, কারণ আহলে হাদীস দলটির প্রতিষ্ঠাই হয়েছে নবী-রসূল এবং সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করার জন্য। ইসলামের কর্ণধার যাদের হাতে ১৪০০ বছর থেকে এই পর্যন্ত ইসলাম রক্ষিত ও যাদের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় তার প্রচার প্রসার ঘটেছে তাদের সমালোচনা করার জন্য। এতে কি লাভ? এতে লাভ হলো ইসলামের মূল কর্ণধাররা যখন মানুষের সামনে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে যাবে তখন ইসলাম এবং মুসলমানদের গ্রহণযোগ্যতা আর থাকবে না। এটা হলে আহলে হাদীসদের যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যারা সৃষ্টি করেছেন তাদের উদ্দেশ্য পুরন হবে। কিন্তু ইসলামের সামান্য দাগ পড়ুক সেটা উলামায়ে কেরাম কখনও সহ্য করেনি এবং করবে না। ইসলামের পুরো ইতিহাস এর সাক্ষী। তাই উলামায়ে কেরাম আহলে হাদীসদের এসকল ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়ার জন্য ইন্টারনেটে সামান্য সামান্য সময় শুরু করেছেন। আলেমদের সামান্য এই সময়টুকুও তাদের সহ্য হচ্ছেনা। অথচ পুরো ইন্টারনেটে তারা লক্ষ লক্ষ বিভ্রান্তি বিস্তার করে রেখেছে। বিভিন্ন কিতাবের নামে বিভন্ন সহীহ হাদীসের নামে, নামাযের নিয়মের নামে, মোটামোটি ইসলামের যে কোন ইবাদত সম্পর্কে যেটাতেই সুযোগ পেয়েছে বিভ্রান্তিমূলক প্রবন্ধ নিবন্ধ, প্রতিবেদন, বই, পুস্তক, অডিও, ভিডিও যাচ্ছেতাই কত কিছু যে প্রচার করেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যাতে করে সারা দুনিয়ায় মুসলমানগণ সন্দেহ ও সংষয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। যাদের সাথে উলামায়ে কেরামের দেখা নেই শোনা নেই তাদের অনেকে আহলে হাদীসদের এসকল বিভ্রান্তিমূলক প্রচারনায় গোমরাহ হচ্ছেন অনেকে। আল্লাহ তাআলার শোকর তাদের হাজার লেখায় যে টুকু হয় উলামায়ে কেরামের কেটি প্রবন্ধেই তাদের সবগুলো মেহনত নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণেই তাদের সর্বপ্রথম মিশন হলো ইসলামের কর্ণধারদেরকেই আগে কলোষিত করতে হবে। কিন্তু তাদের কাছে উলামায়ে কেরাম নিচের প্রশ্নটি করে থাকেন। যে প্রশ্নের সামনে তাদের মূলভিত্তি তাকলীদ না করা এবং তাকলীদকারী মুশরিক এসব কথা দুপেয়ে টিকেনা। তাই আমরা নিজের কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করি।
আহলে হাদীসদের দাবী ছিল যারা তাকলীদ, ইত্তিবা তথা অন্ধ বিশ্বাস করে তারা মুশরিক। আলেমগণ এর উত্তরে বলেছেন তাকলীদ, ইত্তিবা তথা অন্ধ বিশ্বাস ছাড়া দুনিয়াতে কিছুই হয় না। যেগুলো হয় সবই অন্ধ বিশ্বাসের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। সেটা একটা ফিতরী বা স্বভাবজাত বস্তু। যে লোক যে বিষয় জানবেনা তা অন্য কারো কাছ থেকে শিখে নিতে হবে। উলামায়ে কেরামদের কেউ কেউ বলেছেন নিজের পরিচয়টাও অন্ধবিশ্বাস বা তাকলীদের মাধ্যমে জানতে হয়। না হয় মাতা পিতার পরিচয় কেমনে পাওয়া যাবে। সেখানেও অন্ধ বিশ্বাসই আসল কথা।
আচ্ছা যারা অন্ধবিশ্বাসকে শিরিক বলে তাদের কথা চিন্তা করুন। তারা কুরআন হাদীস যার কাছে শিখে তার তাকলীদ করে। কারণ সে জানার আগে সবই তার জন্য জুলমাত। শিখার পর থেকেই সে জানছে। কি শিখেছে। যা উস্তাদ বলেছেন। তাহলে তার শিক্ষার শুরুটাই হয়েছে অন্ধ বিশ্বাসের উপর।
তারা বলে আমরা সহীহ হাদীসের উপর আমল করি। তাতে প্রশ্ন হলো হাদীস সহীহ কি জয়ীফ এটা কি ভাবে জানলেন? তাদের সাথে কি প্রতিদিন আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সাথে কথা হয়? হয় না। তাহলে কোন হাদীসটা সহীহ কোন হাদীসটা জয়ীফ সেটা কিভাবে জানা হলো? সেটাতো পরের কথা তারা যেটা হাদীস বলছেন সেটা যে, রাসূলের (সা.) এর হাদীস সেটা কিভাবে তারা বুঝল? রাসূল (সা.)তো এসে বলে যাননি যে, এটা আমার হাদীস। তাহলে কার কথার উপর তারা হাদীসকে হাদীস হিসেবে বিশ্বাস করল? নিশ্চয়ই কিছু মানুষের কথার উপর অন্ধ বিশ্বাস করেই তা হাদীস হিসেবে মানছে। তাহলে এর চাইতে অন্ধ বিশ্বাস বা তাকলীদ আর কি হতে পারে। সুতরাং তাদের ফতওয়া মতে তারাই বড় এবং সর্বপ্রথম মুশরিক।
তাদের যারা গুরু আছেন, যারা তাকলীদ বা অন্ধ বিশ্বাসকে শিরিক বলেছেন, যেমন জাকির নায়িক, আলবানী সাহেব তারা কি হাদীসগুলো সরাসরি আল্লাহর রসূল থেকে পেয়েছেন। না কি তারাও কোন মানুষ থেকে পেয়েছেন? যদি তারা কাদিয়ানীর মত বলে ফেরেশতারা তাদেরকে হাদীসগুলো সরাসরি শিখিয়ে গেছেন তাহলে আমাদের বলার কিছুই নেই্। তখন তো সরাসরি কাফের হয়ে যাবে। যদি তা না হয় নিশ্চয় হাদীসের ইমাম থেকে পেয়েছেন। তাদেরকে অন্ধ বিশ্বাস করেই তারা হাদীসগুলো গ্রহণ করেছেন। সুতরাং তারা সবচাইতে বেশি তাকলীদ করল। সে হিসেবে তাদের কথা মতে তারাই আগে মুশরিক।
আচ্ছা সাম্প্রতিক যুগের তথাকথিত আহলে হাদীসরা নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেবকে মুজাদ্দিদ, দুনিয়ার সেরা মুহাদ্দিস মোট কথা দুনিয়ার যত গুণগান হতে পারে সবই আলবানী সাহেবের জন্য প্রযোজ্য মনে করে এবং মুখে বলে, লেখায় প্রচার করে। আলবানী সাহেবের কাজ ছিল হাদীসের তাহকীকের নামে পুরো দুনিয়ায় সহীহ হাদীসকে জয়ীফ বানানো, জয়ীফ হাদীসকে সহীহ বানানো। অর্থাৎ তিনি যে মিশন নিয়ে কাজ করেছিলেন সে মীশনের পক্ষের সব হাদীস সহীহ তার বিপক্ষের সব হাদীস জয়ীফ। এটি করার জন্যই মূলত আলবানী সাহেব সৃষ্ট ও আদিষ্ট ছিল। সে টুকুতেও তিনি যে সকল বর্ণনাকারীর অবস্তা ভেদে হাদীসকে সহীহ ও জয়ীফ ফতওয়া দিয়েছেন, সেসকল বর্ণনাকারীকে কি তিনি কোন দিন দেখেছেন? তাঁর সাথে ঐ বর্ণনাকারীদের কোন স্বাক্ষাত হয়েছিল। তিনি বলেছেন ঐ রাবী বা বর্ণনা কারী নির্ভরযোগ্য, ওই রাবী বা বর্ণনা কারী অনির্ভর যোগ্য। এসব হুকুম যে, তিনি লাগিয়েছেন তা কি তিনি রাবীদের ঘর বাড়ীতে গিয়ে তাদের সাথে সাক্ষাত করে তাদের চরিত্র সম্পর্কে জেনে বলেছেন? নাকি অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ কোন রাবী সম্পর্কে কি বলেছেন সে কথার উপর অন্ধ বিশ্বাস করে তিনি ফতওয়া দিয়েছেন? যদি তিনি মুহাদ্দিসদের কথামতে হাদীস সহীহ হওয়া না হওয়ার ফতওয়া দিয়েছেন তবে তিনি সর্ব প্রথম মুকাল্লিদ বা অন্ধ বিশ্বাস কারী। এবং তাদের ফতওয়া অনুযায়ী প্রথম এবং প্রধান মুশিরিক।
আমরা কিন্তু তাদের সম্পর্কে এত জঘণ্য কথা বলবনা। বরং যে কোন কথার ব্যাপারে হুকুম হলো তা সর্ব প্রথম নিজের প্রতি বর্তায়। তারপর অন্য কারো দিকে ফিরে। যেহেতু তারাই ফতওয়া দেন, তাকলীদকারীরা মুশরিক। তাহলে তারাই সর্ব প্রথম মুশরিক। তাতে কোন সন্দেহ নেই।
যারা কথতি আহলে হাদীসদের মধ্যে খুব লাফালাফি করে অথচ বাংলা বুখারী আর বাংলা মুসলিম শরীফ পড়ে। তারাও বলে আমরা কারো তাকলীদ বা অন্ধ বিশ্বাস করি না। অথচ তারা আলবানী সাহেবের তাহকীক ছাড়া গবেষণা ছাড়া কোন হাদীসকে সহীহ বা জয়ীফ বলতে পারেন না্। সে হিসেবে তারা আলবানী সাহেবের উপর সম্পূর্ণ অন্ধ বিশ্বাসকারী। সুতরাং তারাও তাদের ফতওয়া মতে মুশরিক।
তারা বলবে আমরা তাকলীদ করি না ইত্তিবা করি। তাহলে তাকলীদ মানে আর ইত্তিবার অর্থের মধ্যে বেশকম কি? দুটোর অর্থই হলো অন্ধ বিশ্বাস করা। কিন্তু যখন পরাজয় বরণ করে তখন বলে ইত্তিবা। অর্থ বলতে গেলে বলবে অনুসরণ। অনুসরণ মানেই হলো অন্ধ বিশ্বাস।
কোন অনুসরণটা অন্ধ বিশ্বাস এবং নিম্ন পর্যায়ের তাকলীদ?
ইমামদেরকে যারা মানে, কুরআন সুন্নাহ থেকে ইমামগণ যে মাসআলা বের করে উপস্থাপন করেছেন সেগুলোর উপর যারা চলে তারাতো বলে আমরা ইত্তিবা করি, তাকলীদ করি, অন্ধ বিশ্বাস করি। যারা আলবানী সাহেবেদের ফতওয়া মতে চলে তারা বলে অন্ধ বিশ্বাস নাজায়েয। এখন প্রশ্ন হলো কোনটা অন্ধ বিশ্বাস?
ফকীহ ইমাম ও মুজতাহিদ গণ যে সকল মাসআলা বর্ণনা করেছেন সেগেুলোর জন্য কুরআন হাদীস মওজুদ আছে। যে কোন মাসআলা যাচাই করার সুযোগ আছে। সে হিসেবে যুগ যুগ ধরে উলামায়ে কেরাম কোন ইমামের কোন মাসআলাটি কুরআন সুন্নাহর দলীল ভিত্তিক আছে তা যাচাই করেছেন এবং সে মতে আমল করেছেন। কিন্তু যারা আলবানী মাযহাবের লোক তারা হাদীস কিভাবে যাচাই করবেন। কারণ হাদীস সহীহ ও জয়ীফের হুকুম লাগাতে হয় বর্ণনাকারীর উপর ভিত্তি করে। হাদীসের বর্ণনা কারীগণ কত আগে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। সুতরাংকে যাচাই করার কোন সুযোগই বাকী নেই। সে কারণে একক ভাবে মুহাদ্দিসদের ইজতিহাদ তাদের গবেষণার উপরই নির্ভর করতে হয় আলবানীদেরকে। সুতারাং কোনটা বড় অন্ধ বিশ্বাস তা সহজে অনুমান করতে পারেন। কারণ তথাকথিত আহলে হাদীসগণ যে গন্ডিতে তাকলীদ করেন সে ক্ষেত্রে যাচায়েরই কোন সুযোগ নেই। সুতরাং তারা ডবল অন্ধ বিশ্বাস করে ডাবল মুকাল্লিদ হয়েছেন। সে হিসেবে তারা ডাবল মুশরিক। আর যারা ইমামদের মানেন তারাতো কুরআন সুন্নাহ সামনে নিয়ে সম্পূর্ণ যাচাই বাছাই করে দ্বীনের উপর আমল করতে পারেন। সে হিসেবে এরা বলতেগেলে অন্ধ বিশ্বাসই করেন না। তারপরেও তথাকথি আহলে হাদীসরা সবসময় জিকির তুলে আসছে চার ইমামের অনুসারীরা অন্ধ বিশ্বাস করে। তারা মুকাল্লিদ বা মুশরিক।
নিজেরা খুবই ঈমানদার।
ইন্টারনেটে যখন উলামায়ে কেরামের অনেকে এসব জবাব দিয়ে যাচ্ছেন তখন তাদের পক্ষ থেকে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। নিচের ছবিটি দেখলে বুঝাতে পারবেন তাদের শয়তানী কত ভয়ংকর।
সুতরাং পাঠকগণই বিচার করবেন এই সকল তথাকথিত আহলে হাদীসদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এসব পোষ্ট তথাকথিত আহলে হাদীসরা দিয়েছেন।
আহলে হাদীসরা যে, ভণ্ড তাদের প্রকাশিত এই ছবি দেখলে অনুমান করা যায়। কারণ যাদের ছবি এখানে প্রকাশ করা হয়েছে সকলে তাদের সাথে দলীল ভিত্তিক আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোন দলীলের উত্তর তারা দিতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত েএসকল আলেমকে হেয় করার জন্যই মূলত এই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। নাস্তিকদের একটা থিউরী হলো যে কোন কথা সাব্যস্ত করতে মনচাইলে বা মিথ্যাকে সত্য হিসেবে রূপান্তিরিত করতে চায় তা বারংবার বলতে থাক। শুধু তাই বল, শুধু তাই বল। এক দিন সম্পূর্ণ মিথ্যা কথাটি সত্য হয়ে যাবে। নাস্তিক এই থিউরীটাই সব সময় অনুসরণ করতে দেখা যায় আহলে হাদীসদেরকে। সে হিসেবে তারা নাস্তিকদের মুকাল্লিদ। কারন তারা কখনও কোন সময় তাদের কথা থেকে এক কদম বাইরে আসতে চাননা। প্রয়োজন হাজার হাদীসের দলীলও তাদের দাবীর বিপক্ষে থাকুক। তা থেকে বুঝা যায় কোন নাস্তিক মনমানসিকতা সম্পন্ন লিডারই এদের পরিচালক। আল্লাহ সকলকে ক্ষমা করুন। আমীন।
উপরে বলে দেওয়া প্রশ্নটা আহলে হাদীসদের করে দেখুন একটা উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। কিন্তৃ কোন অদৃশ্য কারণে তারা কখনও তাদের ভ্রান্ত ও গোমরাহী পথটি পরিহার করে তাওবাও করবে না। আমরা তাদের জন্য বেশি বেশি দুআ করা দরকার।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন