আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে কথিত আহলে হাদীসদের শিরকী আকীদা
কথিত আহলে হাদীসরা বিভিন্ন ভ্রান্ত অজুহাদ দেখিয়ে আল্লাহ তা’আলাকে সর্বত্র বিরাজমান মানে না। যারা মাধ্যমে তারা পবিত্র কোরআনের কিছু আয়াত অবিশ্বাস করে না বা এসবের অপব্যাখ্যা করে। এটির ভত্তিতে নিজেদেরকে সহীহ আকীদার লোক বলে দাবী করে। অথচ তাদের এই আকীদার সাথে ইহুদী আকীদার মিল। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বত্র বিরাজমান এই সহিহ আকীদাটি পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট আয়াত থেকে চয়ন করা হয়েছে। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, তারা যখন পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলোতে আটকে যাবেন তখন হঠাৎ আপনাকে বলে দেবে যে, আপনাদের ইমাম আবু হানীফাও তো এরূপ আকীদা রাখতেন। তাহলে আপনাদের আকীদা আর আপনাদের ইমামের আকীদের মধ্যে মতভেদ আছে। আরো বলবে আকীদার ক্ষেত্রে আপনারা আহলে সুন্নাহ থেকে বের হয়ে মাতুরদী আকীদা মানেন আর আমলের ক্ষেত্রে মানেন ইমাম আবু হানীফাকে। এগুলো তাদের প্রতারণামূলক কথা।
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর ইস্তিওয়া মানা আর তথাকথিত আহলে হাদীসদের ইস্তিওয়া মানা এক নয়। সেটা নিয়েও আমরা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। যেহেতু তাদের দাবী হলো কোরআন হাদীস মানে। তারা কোরআন হাদীসের ভিত্তিতে দুনিয়ার মুসলমানকে এক করার চেষ্টা করছেন। তাদের এসব প্রতারণামূল কথাগুলো আপনি সহজে অনুমান করতে পারবেন আমাদের এই কলামগুলো পড়লে। কোরআন হাদীস মানলে এবং কোরআন হাদীস ছাড়া কিছুই না মানলে তারা কোন মুখে আকীদার বেলায় এসে ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর কথা বলে থাকেন? আমলের বেলায় তাঁকে মুশরিক পর্যন্ত বলতে বাকী রাখেন না। কিন্তু আকীদার ব্যাপারে এলে তাদের সবচেয়ে বড় দলীল হলো ইমাম আবু হানফা। তাদের দাবী হলো তারা কোরআন হাদীসের ভিত্তিতে মুসলমানদের এক করবেন। অথচ এই লেখা পড়ার পর আপনি বুঝতে পারবেন স্বয়ং কয়েকটা আকীদা নিয়েও তাদের মধ্যে কত হাজার মতবিরোধ। তাহলে এর দ্বারা কি তারা এক করবেন নাকি যারা এপর্যন্ত এক আছেন তাদের ঐক্য ভেঙ্গে তছনছ করবেন?
বিষয়গুলো ভাল করে পড়ে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান :-
১-
ﺛُﻢَّ ﺍﺳْﺘَﻮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ
অতঃপর তিনি আরশে সমাসিন হন {সূরা হাদীদ-৩}
২-
ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ } ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟَﻚَ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ ﻋَﻨِّﻲ ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﻗَﺮِﻳﺐٌ ﺃُﺟِﻴﺐُ ﺩَﻋْﻮَﺓَ ﺍﻟﺪَّﺍﻉِ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻥِ }
আর যখন আমার বান্দা আমাকে ডাকে, তখন নিশ্চয় আমি তার পাশেই। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে ডাকে। {সূরা বাকারা-১৮৬}
৩-
ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ } ﻭَﻧَﺤﻦُ ﺃَﻗﺮَﺏُ ﺇِﻟَﻴﻪِ ﻣِﻦ ﺣَﺒﻞِ ﺍﻟﻮَﺭِﻳﺪِ { [ ﻕ 16 ]
আর আমি বান্দার গলদেশের শিরার চেয়েও বেশি নিকটবর্তী। {সূরা কাফ-১৬}
৪-
ﻓَﻠَﻮْﻻ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﺖِ ﺍﻟْﺤُﻠْﻘُﻮﻡَ ( 83 ) ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﺣِﻴﻨَﺌِﺬٍ ﺗَﻨْﻈُﺮُﻭﻥَ ( 84 ) ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺃَﻗْﺮَﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻻ ﺗُﺒْﺼِﺮُﻭﻥَ ( 85 )
অতঃপর এমন কেন হয়না যে, যখন প্রাণ উষ্ঠাগত হয়। এবং তোমরা তাকিয়ে থাক। এবং তোমাদের চেয়ে আমিই তার বেশি কাছে থাকি। কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা {সূরা ওয়াকিয়া-৮৩,৮৪,৮৫}
৫-
{ ﻭَﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻤَﺸْﺮِﻕُ ﻭَﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏُ ﻓَﺄَﻳْﻨَﻤَﺎ ﺗُﻮَﻟُّﻮﺍْ ﻓَﺜَﻢَّ ﻭَﺟْﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺳِﻊٌ ﻋَﻠِﻴﻢٌ { [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ 115- ]
পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত {সূরা বাকারা-১১৫}
৬-
ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ } ﻭَﻫُﻮَ ﻣَﻌَﻜُﻢْ ﺃَﻳْﻨَﻤَﺎ ﻛُﻨﺘُﻢْ { [ ﺍﻟﺤﺪﻳﺪ – 4 ]
তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথে আছেন {সূরা হাদীদ-৪}
৭-
ﻭﻗﺎﻝ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻦ ﻧﺒﻴﻪ : ( ﺇِﺫْ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻟِﺼَﺎﺣِﺒِﻪِ ﻻ ﺗَﺤْﺰَﻥْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﻌَﻨَﺎ ( ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ ﻣﻦ ﺍﻵﻳﺔ 40
যখন তিনি তার সাথীকে বললেন-ভয় পেয়োনা, নিশ্চয় আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন {সূরা হাদীদ-৪০}
৮-
ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻣِﻦ ﻧَّﺠْﻮَﻯ ﺛَﻼﺛَﺔٍ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺭَﺍﺑِﻌُﻬُﻢْ ﻭَﻻ ﺧَﻤْﺴَﺔٍ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺳَﺎﺩِﺳُﻬُﻢْ ﻭَﻻ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﻣِﻦ ﺫَﻟِﻚَ ﻭَﻻ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺃَﻳْﻦَ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺛُﻢَّ ﻳُﻨَﺒِّﺌُﻬُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻋَﻤِﻠُﻮﺍ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺑِﻜُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ( ﺍﻟﻤﺠﺎﺩﻟﺔ – 7 )
কখনো তিন জনের মাঝে এমন কোন কথা হয়না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন, এবং কখনও পাঁচ জনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন তারা যা কিছু করত। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু জানেন {সূরা মুজাদালা-৭}
৯-
ﻭَﺳِﻊَ ﻛُﺮْﺳِﻴُّﻪُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻷَﺭْﺽَ
আল্লাহ তায়ালার কুরসী আসমান জমিন ব্যাপৃত {সূরা বাকারা-২৫৫}
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান হলে আকাশের দিকে কেন হাত উঠিয়ে দুআ করা হয়?
আদবের জন্য। যদিও আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান। তিনি ডান দিকেও আছেন, বাম দিকেও আছেন, উপরেও আছেন, নিচেও আছেন। সামনেও আছেন। বাম দিকেও আছেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার শান হল উঁচু, তাই আদব হিসেবে উপরের দিকে হাত উঠিয়ে দুআ করা হয়।
যেমন কোন ক্লাশরুমে যদি লাউডস্পীকার ফিট করা হয়। চারিদিক থেকে সেই স্পীকার থেকে শিক্ষকের আওয়াজ আসে। তবুও যদি কোন ছাত্র শিক্ষকের দিকে মুখ না করে অন্যত্র মুখ করে কথা শুনে তাহলে শিক্ষক তাকে ধমক দিবেন। কারণ এটা আদবের খেলাফ। এই জন্য নয় যে, অন্য দিক থেকে আওয়াজ শুনা যায় না। তেমনি আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান থাকা সত্বেও উপরের দিকে মুখ করে দুআ করা হয় আল্লাহ তায়ালা উুঁচু, সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই আদব হিসেবে উপরের দিকে হাত তুলে দুআ করা হয়।
জিবরাঈল উপর থেকে নিচে নেমে আসেন মানে কি?
এর মানে হল-যেমন পুলিশ এসে কোন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে কারণ বলে যে, উপরের নির্দেশ। এর মানে কি পুলিশ অফিসার উপরে থাকে? না সম্মান ও ক্ষমতার দিক থেকে যিনি উপরে তার নির্দেশ তাই বলা হয় উপরের নির্দেশ? তেমনি আল্লাহ তায়ালা ফরমান নিয়ে যখন জিবরাঈল আসেন একে যদি বলা হয় উপর থেকে এসেছেন, এর মানেও সম্মানসূচক ও পরাক্রমশালীর কাছ থেকে এসেছেন। তাই বলা হয় উপর থেকে এসেছেন। এই জন্য নয় যে, আল্লাহ তায়ালা কেবল আরশেই থাকেন।
আল্লাহ তায়ালা কি সকল নোংরা স্থানেও আছেন? নাউজুবিল্লাহ
এই উদ্ভট যুক্তি যারা দেয় সেই আহমকদের জিজ্ঞেস করুন। তার কলবে কি দু’একটি কুরাআনের আয়াত কি সংরক্ষিত আছে? যদি বলে আছে। তাহলে বলুন তার মানে সীনায় কুরআনে কারীম বিদ্যমান আছে। কারণ সংরক্ষিত সেই বস্তুই থাকে, যেটা বিদ্যমান থাকে, অবিদ্যমান বস্তু সংরক্ষণ সম্ভব নয়। তো সীনায় যদি কুরআন বিদ্যমান থাকে, সেটা নিয়ে টয়লেটে যাওয়া কিভাবে জায়েজ? কুরআন নিয়েতো টয়লেটে যাওয়া জায়েজ নয়। তখন ওদের আকল থাকলে বলবে-কুরআন বিদ্যমান, কিন্তু দেহ থেকে পবিত্র কুরআন। তেমনি আমরা বলি আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু তিনি দেহ থেকে পবিত্র। সেই হিসেবে সর্বত্র বিরাজমান।
আল্লাহ তায়ালা দৌড়ান সালাফীদের এই ভ্রান্ত মতবাদ :-
পূর্বের আলোচনায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, সালাফীদের আকিদা হলো আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন। এরা আল্লাহর জন্য উঠা, নামা, দৌড়ানো, স্থানান্তর হওয়া সব কিছুই সাব্যস্ত করে। এ পর্বে আল্লাহর দৌড়ানো সম্পর্কে আলোচনা করবো।
হাদীসে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমার নিকট যে হেটে হাসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যায়। ” এই হাদীস থেকে তারা প্রমাণ দিয়েছে যে আল্লাহ পাক দৌড়ান। অথচ সহীহ আকিদার একজন শিশুও বুঝবে যে, এখানে দৌড়ানো দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তাকে সাহায্য ও কবুল করা উদ্দেশ্য। যাই হোক, কতো বড় আশ্চর্যের বিষয়, এজাতীয় ভ্রান্ত বিশ্বাস রাখার পরেও এরা সহীহ আকিদার দাবী করে?
সউদি মুফতী বোর্ডের ফতোয়া:
*********************
সউদি মুফতী বোর্ডে প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহ তায়ালার কী দৌড়ানোর গুণ রয়েছে। তারা উত্তর দেয়, হ্যা আল্লাহর জন্য দৌড়ানোর গুণ রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা দৌড়ান। এ ফতোয়ায় সাক্ষর করেছে, ইবনে বাজ, আব্দুর রাজ্জাক আফিফী, আব্দুল্লাহ ইবনে গাদইয়ান, আব্দুল্লাহ বিন কুউদ।
ফতোয়া নং-৬৯৩২
[খ.৩, পৃ.১৪২]
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
*****************
ইবনে উসাইমিন বলেন,
“আল্লাহ তায়ালার জন্য দৌড়ানোর গুণ প্রমাণিত। …….সুতরাং এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক”
[মাজমুউ ফাতাওয়া ও রসাইল, খ.১, পৃ.১৮২]
বিরোধী বক্তব্য:
**********
ইবনে জিবরীনের বক্তব্য:
ইবনে জিবরীন বলেন, ” দৌড়ানো আল্লাহর গুণ নয়। বরং দৌড়ানো দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বান্দার প্রয়োজন পূরণে বিলম্ব না করা।”
বিস্তারিত:
http://audio.islamweb.net/audio/Fulltxt.php?audioid=149331
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
শায়খ সালেহ আল -ফাউজানের মতে, দৌড়ানো আল্লাহর কোন গুণ নয়।
বিস্তারিত:
http://www.alathary.net/vb2/showthread.php?12736-%C7%E1%E5%D1%E6%E1%C9-%E1%ED%D3%CA-%C8%D5%DD%C9-%E1%E1%E5-%C7%E1%DA%E1%C7%E3%C9-%D5%C7%E1%CD-%C7%E1%DD%E6%D2%C7%E4&s=9354b41efc504cacfee627988b532970
আলবানী সাহেবের আশ্চর্যজনক উত্তর:
*************************
আলবানী সাহেব দৌড়ানোর বিষয়ে আশ্চর্যজনক স্ববিরোধীতার আশ্রয় নিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,
” আল্লাহর তায়ালার অবতরণ ও আসার মতো দৌড়ানো আল্লাহর একটি গুণ”
[মাউসুয়াতুল আলবানী, খ.১, পৃ.২৫৮]
আল্লাহর আকার সম্পর্কে ভ্রান্ত আকিদা :-
এটি প্রমাণের ধারনাটি মূলত: ইহুদী ধর্ম থেকে এসেছে। ইহুদীরা আল্লাহ তায়ালাকে মানুষের আকৃতিতে বিশ্বাস করে। মানুষের প্রায় সব গুণাগুণ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে থাকে। দেহবাদী আকিদার ক্ষেত্রে ইহুদীদের এসব জঘন্য আকিদা কাররামিয়া ও শিয়াদের মাধ্যমে ইসলামী আকিদায় প্রবেশ করে। পরবর্তীতে কাররামিয়াদের অনুসারী তথাকথিত সালাফীরাও এসব বাতিল আকিদা লালন করে এবং সমাজে দেহবাদী আকিদা প্রচার করতে থাকে।
আল্লাহর আকার সম্পর্কে ইহুদী আকিদা:
ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব জেনেসিসে রয়েছে,
And God said, Let us make man in our image, after our likeness: and let them have dominion over the fish of the sea, and over the fowl of the air, and over the cattle, and over all the earth, and over every creeping thing that creepeth upon the earth.
“প্রভূ বললেন, আমি আমার আকৃতিতে, আমার সাদৃশ্যে মানুষ সৃষ্টি করবো, যারা মাছ, সমুদ্র…..জয় করবে”
[বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ-১, শ্লোক-২৬]
একই বইয়ের ২৭ নং শ্লোকে রয়েছে,
So God created man in his own image, in the image of God created he him; male and female created he them.
অর্থাৎ সুতরাং প্রভূ মানুষকে নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করলেন; প্রভূর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন। আর তাদেরকে সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও মহিলা হিসেবে।
[বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ-১, শ্রোক, ২৭]
অনলাইন ভার্সন:
http://studybible.info/KJV/Genesis%201:27
ইহুদীদের কিতাব থেকে আল্লাহর আকার প্রমাণ:
তথাকথিত সালাফীরা যে ইহুদীদের কিতাব থেকে তাদের এই আকিদাটি নিয়েছে, এটি আমাদের মৌখিক কোন দাবী নয়। বরং তাদের কিতাবেই বিষয়গুলো স্পষ্ট রয়েছে।
সালাফীদের বক্তব্য:
সালাফীদের অন্যতম শায়খ হলেন আব্দুল আজিজ রাজেহী ও শায়খ সালেহ ইবনে আব্দুল আজিজ আলুশ শায়খ। তাদের মতে আল্লাহ তায়ালার সুরত বা আকৃতি রয়েছে। এই সুরত হলো আল্লাহর শিকল বা গঠন ও অবকাঠামো। আল্লাহ তায়ালার এই গঠন ও অবকাঠামোর মাধ্যমে তিনি অন্যদের থেকে পৃথক হয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালার বিদ্যমান হওয়ার জন্য এমন একটি সুরত বা গঠন প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তিনি অস্তিত্বশীল হয়ে থাকেন।
[বয়ানু তা’লবিসিল জাহমিয়া, পৃ.৪৫৫]
সৌদি মুফতী বোর্ডের ফতোয়া:
সালাফীরা শুধু আল্লাহ তায়ালার আকার আছে, একথা বলেই ক্ষ্যান্ত হয় না। বরং তাদের মতে আল্লাহর আকার হলো মানুষের মতো। এর স্বপক্ষে তারা দলিল দিয়ে থাকে, আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এই হাদীস দ্বারা। তাদের মতে আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর নিজের আকৃতি অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন। বরং তাদের নিকট আল্লাহর আকার ও মানুষের আকারের মাঝে একটি মা’নায়ে কুল্লী বা সামষ্টিক অর্থ রয়েছে। অর্থাৎ উভয়ের আকৃতি একই রকম। তবে এই মা’নায়ে কুল্লী বা সামষ্টিক অর্থ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর আকৃতি মানুষের সাথে সাদৃশ্য রাখে না। অর্থাৎ আল্লাহর একটি গঠন বা আকৃতি রয়েছে যেটা মানুষের মতো। কিন্তু এই গঠন হুবহু মানুষের আকৃতির সাইজ, রং বা পরিমাপ এক নয়। তাদের নিকট আল্লাহর আকার ও মানুষের আকারের মাঝে গুণগত পার্থক্য বিদ্যমান কিন্তু সমষ্টিগতভাবে উভয় আকৃতি একই রকম। এই কথাটি সৌদি মুফতী বোর্ডের পক্ষ থেকে ফতোয়া দেয়া হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ) ফতোয়া নং-২৩৩১
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
“ইবনে উসাইমিনের মতে আল্লাহর গুণের সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে। তার মতে আল্লাহর হাত ও মানুষের হাতের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। আল্লাহর চোখ ও মানুষের চোখের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। আল্লাহর চেহারার সাথে মানুষের চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে। তবে আল্লাহর হাত হুবহু মানুষের হাতের মতো নয়।” অর্থাৎ ইবনে উসাইমিনের মতে আল্লাহর সাথে মানুষের সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহর হাত হুবহু মানুষের হাতের মতো নয়।
এই হুবহু জিনিসটা বোঝার জন্য ছোট্র একটি উদাহরণ দিচ্ছি,
আমরা জানি ত্রিভুজ কয়েক প্রকার। এর মধ্যে এক প্রকার ত্রিভুজ হলো, সমবাহু ত্রিভুজ। অর্থাৎ একটা ত্রিভুজকে অপর আরেকটি ত্রিভুজের কোণ ও বাহুর দিক থেকে সমান। একটাকে আরেকটা দিয়ে রিপ্লেস করা যায়। কিন্তু সমবাহু ত্রিভুজ ছাড়া অন্যান্ সব ত্রিভুজই একটা আরেকটার সাথে সাদৃশ্য রাখে। কিন্তু এগুলো তো একটা আরেকটা হুবহু একই রকম নয়।
সারকথা হলো, ইবনে উসাইমিনের মতো আল্লাহ তায়ালা ও মানুষের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু আল্লাহ ও মানুষ হুবহু এক নয়। আল্রাহর চেহারার সাথে মানুষের চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে, কিন্তু আল্রাহ ও মানুষের চেহারা হুবহু এক নয়।
সালাফীদের শায়খ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ তুয়াইজারী একটি কিতাব লিখেছে। কিতাবের নাম, আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান ( মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন)। সৌদি শায়খ ইবনে বাজ এই কিতাবের উপর একটি ভূমিকা লেখে দিয়েছে। কিতাবের ভূমিকায় ইবনে বাজ লিখেছে, আল্লাহ তায়ালার নিজ আকৃতিতে আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন এটি সালাফে সালেহীনের আকিদা। তিনি অন্যান্য আলেমদেরকে এটি বিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। হামুদ বিন আব্দুল্লাহ আত-তুয়াইজারী এ কিতাবটি একটি জঘন্য কিতাব। তার বক্তব্যগুলো স্পষ্ট মুজাসসিমাদের বক্তব্য। সে মূলত: দেহবাদী আকিদা প্রমাণের জন্য এই বই লিখেছে। এই তুয়াইজারী আল্লাহর আকৃতি প্রমাণের জন্য তাউরাত থেকে প্রমাণ দিয়েছে যে, আল্লাহর আকৃতি রয়েছে।
কথিত সালাফী আলেমদের বিরোধীতা:
সালাফী আলেমদের মাঝে শায়খ আলবানী আল্লাহর আকার বা আকৃতি অস্বীকার করেছেন। এছাড়াও ইবনে খোযাইমা তার কিতাবুত তাউহীদে আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করেছেন। আলবানী সাহেবের ছাত্র নাসীব রিফায়ীও আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করেছেন।
আলবানী সাহেবের বক্তব্য:
শায়খ আলবানী ইবনে বাজের ভূমিকা সমৃদ্ধ কিতাব “আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান” ( মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন) কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি তুয়াইজারীর লেখা এই কিতাব সম্পর্কে সহীহু আদাবিল মুফরাদে লিখেছেন,
” তুয়াইজারী “আকিদাতু আহলিল ইমান ফি খালকি আদম আলা সুরতির রহমান” ( মু’মিনের বিশ্বাস: আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন) এই কিতাব লিখে সালাফী আকিদা ও রাসূল স. এর হাদীসের প্রতি নিকৃষ্ট কাজ করেছে।”
তুয়াইজারী সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন, সে হাদীস নিয়ে কথা বলার যোগ্য নয় এবং আলেমদের বক্তব্য বিকৃত করে থাকে। অর্ধেক বক্তব্য উল্লেখ করে এবং অর্ধেক ছেড়ে দেয়।
[সহীহু আদাবিল মুফরাদ, ৩৭৫ পৃ.]
এছাড়াও দেখুন, ফাতাওয়াশ শায়খ আলবানী ফিল মদিনাতি ওয়াল ইমারত, পৃ,১৬-১৭। মুখতাসারু সহীহিলি বোখারী, খ.২, পৃ.১৭৮।
আলবানী সাহেব আল্লাহর আকৃতি অস্বীকার করায় অন্যান্য সালাফী শায়খরা তার উপর বেশ চটেছেন। সালাফীদের দু’জন শায়খ স্পষ্ট আলবানীর সমালোচনা করেছে। এরা হলেন, শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফী ও শায়খ আব্দুল্লাহ দাবিশ।
আব্দুর রাজ্জাক আফিফীর বক্তব্য:
“আল্লাহ তায়ালা আদম আ. কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এটিই সঠিক। যদিও আলবানী ও নাসীব রিফায়ী এর বিরোধীতা করেছে”
[ফাতাওয়া ও রসাইল, পৃ.১৬০,, খ.১]
আব্দুল্লাহ দাবিশ এর বক্তব্য:
****************
শায়খ আব্দুল্লাহ দাবিশ আলবানী সম্পর্কে লিখেছে,
” আলবানীর মতটি আমি দেখেছি। এটি আহলে সুন্নতের বক্তব্যের বিরোধী এবং পথভ্রষ্ট জাহমিয়াদের বক্তব্যের অনুরুপ”
[দিফাউ আহলিস সুন্নাহ, পৃ.৫]
যারা আল্লাহর আকার সাব্যস্ত করে তাদের সম্পর্কে ইমাম কুরতুবী রহ. এর বক্তব্য:
যারা আল্লাহর আকার সাব্যস্ত করেছে এবং আল্লাহর আকৃতিতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এধরনের বিশ্বাস রাখে, ইমাম কুরতুবী তাদেরকে মুশাববিহা বলেছেন। ইমাম কুরতুবী এধরনের আকিদা পোষণকারীদেরকে কাফের পর্যন্ত বলেছেন।
[আল-মুফহিম, খ.৬, পৃ.৫৯৮]
আল্লাহর সীমা আছে বলে সালাফীদের ভ্রান্ত মতবাদ :-
ইবনে বাজের বক্তব্য :-
******************
“ইবনে বাজের মতে আল্লাহর সীমা রয়েছে। তবে আল্লাহর সীমা তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না।”
আমরা কুরআন ও হাদীসের কোথাও এধরনের কোথা পাইনি। আল্লাহ পাক ভালো জানেন, ইবনে বাজ এধরনের কথা কোথায় পেলেন। সীমা থাকা সম্পূর্ণ সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য। এটি আল্লাহর জন্য সাব্যস্তের ব্যাপারে কেন এতো মরিয়া, আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। ত্বহাবী শরীফে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা সীমা-পরিসীমা থেকে পবিত্র। এই স্পষ্ট বক্তব্যের বিকৃত ব্যাখ্যা করে তিনি লিখেছেন,
ইবনে বাজ তার মাজমুউ ফাতাওয়া তে বলেছেন,
” আল্লাহর সীমা রয়েছে, তবে সেটা তিনিই জানেন, বান্দা জানেন না”
[মাজমুউ ফাতাওয়া, খ.২, পৃ.৭৮]
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
*****************
ইবনে উসাইমিনের মতে হদ বা সীমা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি থেকে পৃথক। সৃষ্টি ও আল্লাহর মাঝে পার্থক্যের যে সীমা রয়েছে, সেটি আল্লাহর জন্য সত্য। অর্থাৎ ইবনে উসাইমিনের নিকট হদ বা সীমার অর্থ হলো, সৃষ্টি ও আল্লাহর মাঝে পার্থক্যের সীমা।
[শরহুল আকিদাতিল ওয়াসিতিয়া, খ.১,পৃ.৩৭৯]
ইবনে জিবরীনের বক্তব্য:
********************
সালাফী শায়খ ইবনে জিবরীনের মতে আল্লাহ ও সৃষ্টির মাঝে একটি সীমা রয়েছে। এর মাধ্যমে সৃষ্টি ও আল্লাহর মাঝে পার্থক্য করা হয়।
[আর-রিয়াজুন নাদিয়্যা, খ.২, পৃ.১৫]
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
********************
সালেহ আল-ফাউজানের মতে হদ বা সীমার অর্থ হলো, বাস্তবতা। অর্থাৎ আল্লাহর হদ আছে এর অর্থ হলো, আল্লাহ প্রকৃত পক্ষেই আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন।
সালেহ আল-ফাউজানের মতে, হদ দ্বারা কোন সীমা উদ্দেশ্য নয়।
[শরহু লুময়াতিল ই’তেকাদ, পৃ.২৯৭]
আলবানী সাহেবের বক্তব্য:
*****************
হাম্বলী মাজহাবের একজন আলেম মাহমুদ ইবনে আবিল কাসিম দাশতী একটা কিতাব লিখেছেন। তার কিতাবের নামটা আশ্চর্যজনক। ইসবাতুল হদ্দি লিল্লাহি তায়ালা ও বিয়ান্নাহু কাইদুন ও জালিসুন আলাল আরশ ( আল্লাহর সীমার প্রমাণ এবং আল্লাহ তায়ালা যে আরশে বসে আছেন, এর প্রমাণ)। সৌদি আরবের কয়েকজন শেইখ আবার এই নিকৃষ্ট কিতাবটিও তাদের আকিদার কিতাব হিসেবে ছেপেছে।
আলবানী সাহেব দাশতীর এই কিতাব সম্পর্কে বলেন,
” কুরআন ও সুন্নাহে (আল্লাহর সীমা ও বসার) কোন প্রমাণ নেই”
[মাখতুতাতু দারিল কুতুবিজ জাহিরিয়া, পৃ.৩৭৬]
আল্লাহর ছায়া সম্পর্কে সালাফীদের ভ্রান্ত আকিদা :-
আল্লাহ তায়ালার ছায়া (নাউযুবিল্লাহ) :
ইবনে বাজের বক্তব্য:
**************
সালাফীদের বিখ্যাত শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে বাজের মতে আল্লাহ তায়ালার ছায়া রয়েছে। তিনি তার কিতাবে স্পষ্ট বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার ছায়া রয়েছে। আর কিয়ামতের দিন আল্লাহর এই ছায়ার নীচে সাত শ্রেণির মানুষকে আশ্রয় দিবেন।
ইবনে বাজ তার মাজমুউ ফাতাওয়া ও মাকালাতে লিখেছেন,
প্রশ্ন: হাদীসে রয়েছে, যে দিন কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তার নিজ ছায়ার তলে স্থান দিবেন। আল্লাহ তায়ালার ক্ষেত্রে এই গুণ সাব্যস্ত করা যাবে যে, আল্লাহর ছায়া রয়েছে?
উত্তর: হ্যা। যেমনটি হাদীসে রয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তার আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। কিন্তু বোখারী মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি তার নিজ ছায়ায় স্থান দিবেন। সুতরাং ” আল্লাহ তায়ালার শান অনুযায়ী আল্লাহর ছায়া রয়েছে। ”
[মাজমুউ ফাতাওয়া ও মাকালাত, খ.২৮, পৃ.৪০২]
সালাফীদের মধ্যে আকিদাগত স্ববিরোধ :-
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
ইবনে উসাইমিনের মতে, এটি আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব ছায়া নয়। বরং আল্লাহর সৃষ্ট ছায়া। তিনি আকিদাতুল ওয়াসিতিয়া এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
” সে দিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্ট ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। কেউ কেউ ধারণা রাখে যে, এটি আল্লাহর নিজস্ব ছায়া। নিশ্চয় এটি বাতিল ও ভ্রান্ত। কেননা, এর দ্বারা সূর্য আল্লাহর উপরে হওয়া আবশ্যক হয়।”
[শরহু আকিদাতিল ওয়াসিতিয়্যা, খ.২, পৃ.১৩৬]
ইবনে উসাইমিন রিয়াজুস সালেহীন এর একটি ব্যাখ্যা লিখেছেন। রিয়াজুস সালেহীনের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন,
“ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এমন ছায়া যা আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন সৃষ্টি করবেন। তার প্রিয় বান্দাদের যাকে ইচ্ছা এর নীচে ছায়া দান করবেন। এর দ্বারা আল্লাহর নিজের ছায়া উদ্দেশ্য নয়। ……যে ছায়া দ্বারা আল্লাহর নিজের ছায়া আছে বলে বিশ্বাস রাখে সে গাধার চেয়েও নির্বোধ”
[শরহু রিয়াজিস সালেহীন, খ.৩, পৃ.৩৪৭]
শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসির আল-বাররাক এর বক্তব্য:
সালাফী শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে নাসের আল-বাররাক বলেন,
” ছায়া হলো আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর দিকে ছায়ার সম্পৃক্ততা মুলত: ছায়ার মর্যাদা ও আল্লাহর মালিকানাধীন বোঝানো উদ্দেশ্য। এই হাদীস থেকে বলা যাবে না যে, আল্লাহর নিজের ছায়া রয়েছে”
[ফাতহুল বারীর টীকা, ২য় খন্ড, পৃ.৫০৩]
শায়খ আলবানীর বক্তব্য:
সালাফীদের শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী কিয়ামতের দিনের ছায়া সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর মালিকানাধীন ছায়া। যে ছায়ার মালিক আল্লাহ তায়ালা। এখানে আল্লাহর নিজের ছায়া উদ্দেশ্য নয়। তিনি লিখেছেন,
” আল্লাহর দিকে ছায়ার সম্পৃক্ততা আল্লাহর মালিকানা বোঝানোর জন্য। … এ ছায়া দ্বারা মুলত: আরশের ছায়া উদ্দেশ্য”
[মাউসুয়াতুল আলবানী, খ.১, পৃ.৩৬৬]
ইস্তাওয়া শব্দের ভুল ব্যাখ্যায় সালাফীদের ভ্রান্ত আকিদা ও আকিদাগত মতবিরোধ :
ইস্তাওয়া শব্দের ভুল অর্থ ও সালাফীদের ভ্রান্ত মতবাদ :
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
সালাফীদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. আল-আকিদাতুল ওযাসিতিয়্যা নামে একটি আকিদার কিতাব লিখেছেন। আকিদাতুল ওয়াসিতিয়্যা ব্যাখ্যা লিখেছেন ইবনে উসাইমিন। তিনি এর নাম দিয়েছেন, শরহুল আকিদাতিল ওয়াসিতিয়্যা। কিতাবটি দারু ইবনিল জাওযী প্রকাশ করেছে। ইবনে উসাইমিন এ কিতাবে লিখেছে,
” ইস্তাওয়ার অর্থ হলো, উচু হওয়া ও স্থির হওয়া”
[শরহুল আকিদাতিল ওয়াসিতিয়্যা, খ.১, পৃ.৩৫৭, দারু ইবনিল জাওযী]
ইবনে জিবরীনের বক্তব্য:
সালাফী শায়খ ইবনে জিবরীন আল-আকিদাতুল ওয়াসিতিয়্যার একটি ব্যাখ্যা লিখেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন, আত-তালিকাতুজ জাকিয়্যা। তিনি এ কিতাবে লিখেছেন,
” অধিকাংশ আহলে সুন্নতের মতে “ইস্তাওয়া” এর অর্থ হলো স্থির হওয়া (এটা জঘন্যতম মিথ্যা কথা)”
[আত-তা’লিকাতুজ জাকিয়্যা, পৃ.২১১-২১২, খ.১]
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
সালাফী শায়খ সালেহ আল-ফাউজান তার শরহু লুমআতিল ই’তেকাদ কিতাবে লিখেছে,
” সালাফে সালেহীন ইস্তাওয়ার একটি ব্যাখ্যা করেছেন ” স্থির হওয়া”
[শরহু লুময়াতিল ই’তেকাদ, পৃ.৯১]
সালাফী শায়খদের স্ববিরোধীতা:
পূর্বে যাকে আহলে সুন্নতের আকিদা, সালাফে সালেহীনের আকিদা হিসেবে উল্লেখ করা হলো, সে আকিদা সম্পর্কে সালাফী শায়খরা বলছেন, এসব আকিদা থেকে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত। এধরনের দ্বিমুখী কথা সত্যিই বিস্ময়কর। সালাফীদের বিখ্যাত শায়খ, সউদি মুফতী বোর্ডের সদস্য ড. বকর আবু যায়েদ এই আকিদাকে সালাফীদের সম্পর্কে মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়ার মতে আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন। এমনকি তার মতে আল্লাহ তায়ালা মাছির পিঠেও বসতে পারেন। ইবনে তাইমিয়া যে আল্লাহর স্থির হওযার কথা বলেছেন, ড. বকর আবু যায়েদ এটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তার মতে যারা ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে এধরনের কথা বলে তারা ইবনে তাইমিয়ার উপর মিথ্যাচার করে। কারণ ইবনে তাইমিয়া আল্লাহর স্থির হওয়ার আকিদা রাখতো না। ড. বকর আবু যায়েদ লিখছেন,
” কিছু বিভ্রান্ত লোক ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে বলেছে, তিনি আল্লাহর আরশের উপর স্থির হওয়ার কথা বলেছেন। এটি ইবনে তাইমিয়ার উপর মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়”
[মু’জামুল মানাহিল লফজিয়্যা, পৃ.৯১]
আলবানীর বক্তব্য:
সালাফীদের শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী লিখেছে,
” আল্লাহ তায়ালার ক্ষেত্রে স্থির হওয়ার কথা বলা বৈধ নয়। কারণ এটি মানুষের বৈশিষ্ট্য বা গুণ”
[মাওসুয়াতুল আলবানী, পৃ.৩৪]
আল্লাহ আরশের উপর বসে আছেন বলে সালাফীদের ভ্রান্ত আকিদা :-....
To More.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন