বুখারী শরীফে কথিত আহলে হাদীসদের পক্ষে কোন দলিল নেই!! বিশ্বাস হয়? না হলেও এটাই বাস্তব
কথিত আহলে হাদীসরা প্রচার করে থাকে ওদের মাসলাক বুখারীতে আছে আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত হানাফীদের মাসলাক বা পদ্ধতি বুখারীতে নেই। একথা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। আমাদের মাসলাক
বুখারীতে খুব শক্তিশালীভাবে বিদ্যমান রয়েছে। খেয়াল করুন-
ক-
মাসআলায়ে রফয়ে ইয়াদাইন
যেমন রফয়ে ইয়াদাইন করার ক্ষেত্রে বুখারীতে হাদীস রয়েছে। সুতরাং কথিত আহলে হাদীসরা বলতে শুরু করে দেয় যে, বুখারীতে রফয়ে
ইয়াদাইন এর হাদীস আছে, অথচ আমরা মানি না কেন? তাহলে আমরা বুখারীকে মানলাম না, তাই ইমাম বুখারী ওদের আমাদের না!
এ বিষয়টি বুঝার জন্য আগে একটি বিষয় বুঝতে হবে। সেটা হল-রফয়ে ইয়াদাইন এর মাসআলায় আমাদের মাসলাক কি? আমাদের
মাসলাক হল-রাসূল সাঃ প্রথম প্রথম রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন, কিন্তু পরে ছেড়ে দিয়েছেন। আর কথিত আহলে হাদীসদের মাসলাক হল
রাসূল সাঃ সর্বদা রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন।
তাই যত হাদীস রফয়ে ইয়াদাইন এর পক্ষে আছে সেসব আমাদের বিপক্ষে দলিল হতে পারে না। কারণ আমরাতো মানিই যে, রাসূল সাঃ
প্রথম প্রথম রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন, তাই এ ব্যাপারে হাদীস পেশ করলে তা আমাদের বিপরীত হবে কেন? বরং যদি কোন হাদীস
এমন দেখাতে পারে, যাতে আছে যে, রাসূল সাঃ সর্বদা রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন, তথা মৃত্যু পর্যন্ত রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন, তাহলে
সাব্যস্ত হবে ওদের দলিল। কিন্তু বুখারীতে একটি হাদীসও এমন নেই যা, প্রমাণ করে রাসূল সাঃ মৃত্যু পর্যন্ত রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন, বা
রাসূল সাঃ রফয়ে ইয়াদাইন করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তাহলে বুখারী ওদের দলিল হল কি করে? বুখারীতেতো আমাদের দলিল।
উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হবে-
যেমন মুমতাজুদ্দীন জামিয়াতুল আস’আদে এল। এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। কিন্তু সে এসেই চলে গিয়েছিল? না সে কয়েকদিন ছিল?
এ নিয়ে মতভেদ হয়ে গেল। একদল বলছে যে, মুমতাজুদ্দীন জামিয়াতুল আস’আদে এসে সাথে সাথেই চলে গিয়েছিল। আরেকদল বলছে
যে, না, না মুমতাজুদ্দীন কয়েকদিন ছিল জামিয়াতুল আস’আদে।
এখানে খেয়াল করুন-মতভেদ কোন বিষয়ে? মুমতাজুদ্দীনের আসার বিষয়ে? না যাওয়ার বিষয়ে? নিশ্চয় যাওয়ার বিষয়ে। সুতরাং যারা
দাবি করছে যে, মুমতাজুদ্দীন জামিয়ায় এসে থেকেছে, তারা যদি দলিল পেশ করে মুমতাজুদ্দীনের জামিয়ায় আসার, তাহলে এটি কি
তাদের দলিল হবে? আসার ব্যাপারেতো কোন মতভেদই নেই, তাহলে আসার দলিল দেওয়ার দ্বারা থাকা প্রমানিত হয় কি করে? থাকার
ব্যাপারে আলাদা দলিল পেশ করতে হবে। আসার দলিলের মাধ্যমে থাকা প্রমাণিত হয় না।
তেমনি বুখারীতে যে, রাসূল সাঃ এর রফয়ে ইয়াদাইন এর হাদীস আছে এটাতো আমাদের বিরুদ্ধে দলিল হতেই পারে না। কারণ রাসূল
সাঃ রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন একথাতো আমরা অস্বিকার করি না। বরং তিনি সর্বদা করেছেন এ ধারণাকে আমরা অস্বিকার করি। তাহলে
আমাদের বিরুদ্ধে দলিল হবে সেই হাদীস যেটাতে প্রমাণিত হবে যে, রাসূল সাঃ সর্বদা রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন, বা রফয়ে ইয়াদাইন
করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ এমন কোন হাদীস বুখারীতে নেই। তাহলে বুখারী আমাদের বিরুদ্ধে গেল কিভাবে? বরং কথিত আহলে
হাদীসদের দলিল দেয়াটাই সহীহ নয়।
সুতরাং বুঝা গেল রফয়ে ইয়াদাইন এর মাসআলায় বুখারী শরীফ আমাদের বিরোধী নয়। পক্ষে।
এরপর যদি কথিত আহলে হাদীসরা প্রশ্ন করে যে, তাহলে রাসূল সাঃ প্রথমে রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন, পরে ছেড়ে দিয়েছেন এ ব্যাপারে
কি দলিল আছে?
তখন আমাদের জবাব হল-তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ ইত্যাদী হাদীস গ্রন্থে এসেছে যে, রাসূল সাঃ প্রথমে রফয়ে ইয়াদাইন
করেছেন তারপর ছেড়ে দিয়েছেন।
ﻋَﻦْ ﻋَﻠْﻘَﻤَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺃَﻻَ ﺃُﺻَﻠِّﻰ ﺑِﻜُﻢْ ﺻَﻼَﺓَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺮْﻓَﻊْ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻻَّ ﻣَﺮَّﺓ ً ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 748- )
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন আমি কি তোমাদের কে হুজুর সাঃ এর নামাজ সম্পর্কে অবগতি দেব না? এ কথা
বলে তিনি নামাজ পড়ে দেখালেন এবং নামাজে তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার রাফয়ে ইয়াদাইন করলেন। নামাজে আর
কোথাও তিনি রফঈ ইয়াদিন করলেন না। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৪৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৫৭, সুনানে
দারেমী, হাদীস নং-১৩০৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৩৬৩, মুসনাদে আহমাদ,
হাদীস নং-৩৬৮১}
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺮِﻳﺐٍ ﻣِﻦْ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﻌُﻮﺩُ ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 750- )
হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বলেন- রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) যখন নামাজ আরম্ভ করতেন তখন তার হস্তদ্বয়
কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন । অতঃপর আর তা করতেন না । [ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৫০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস
নং-১৬৮৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫৫ ]
এখানে এসে যদি কথিত আহলে হাদীসরা প্রশ্ন করে যে, রাসূল সাঃ ছেড়ে দিয়েছেন এমন শব্দতো এসব হাদীসে নেই।
তাহলে ওদের বলুন-এসব হাদীসে কি একথা নেই যে, রাসূল সাঃ রফয়ে ইয়াদাইন করতেন না?
রাসূল সাঃ সর্বদা রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন বা নির্দেশ দিয়েছেন, এমন একটি হাদীস দেখাতে পারলে আমরাও দেখাব রাসূল সাঃ ছেড়ে দিয়েছেন
বর্ণনা।
এরপরও যদি কথিত আহলে হাদীসরা প্রশ্ন করে যে, বুখারীতে এক নির্দেশ এল, আর ওটা মানসুখ হয়েছে তিরমিযীর হাদীস দিয়ে এটা
কেমন কথা?
তাহলে তাদের উত্তর দিন যে, এমন অনেক মাসআলা আছে, যা বুখারীতে জায়েজ বলা হয়েছে, আর তা তিরমিযীর হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে
গেছে।
যেমন-বুখারীতে এসেছে যে, রাসূল সাঃ দাড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন। বসে প্রস্রাব করেছেন বুখারীতে একটি হাদীসও নেই। অথচ তিরমিযীতে
এসেছে যে, রাসূল সাঃ বসে প্রস্রাব করেছেন। তিরমিযীর হাদীস বুখারীর দাড়িয়ে প্রস্রাব করার হাদীসের হুকুমকে রহিত করে দেয়। এমনি
বুখারীতে আসা রফয়ে ইয়াদাইন এর বর্ণনা তিরমিযীর হাদীস রহিত করে দেয়।
খ
কিরাত খালফাল ইমাম তথা ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কিরাত পড়া প্রসঙ্গ
কথিত আহলে হাদীসরা বলে থাকে যে, ইমামের পিছনে কিরাত পড়তে হবে। নইলে নামায হবে না। দলিল বুখারীতে বিদ্যমান।
ﻋﻦ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺑﻦ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﺃﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ( ﻻ ﺻﻼﺓ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 723- )
অনুবাদ-হযরত ওবাদা বিন সামেত রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে সূরা ফাতেহা পড়ে না, তার নামায হয় না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭২৩}
আর আমরা বলি মুসল্লিরা কিরাত পড়বে না ইমামের পিছনে। তাহলে বুখারী শরীফ আমাদের বিপক্ষে। ওদের পক্ষে।
জবাব
ওদের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওদের মতের পক্ষে বুখারীতে কোন দলিল নেই। কারণ এ হাদীসের জবাবে আমরা বলি-সূরা
ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না, একথা আমরাও বলি। সুতরাং আমাদের আর ওদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তবে পার্থক্য হল ওরা বলে
যে, মুসল্লিদেরও পড়তে হবে। একথা আমরা মানি না।
কারণ যেমন আমরা জানি খুতবা ছাড়া জুমআ হয় না। আজান ছাড়া নামায পড়লে নামায খেলাফে সুন্নাত হয়, ইকামত ছাড়া নামায পড়লে
নামায খেলাফে সুন্নাত হয়, কিন্তু খুতবা পড়া সবার জন্য আবশ্যক নয়, আজান-ইকামত দেয়া সবার জন্য আবশ্যক নয়,
তেমনি সূরা ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না, জামাতের সাথে পড়ার সময় সেটা সবার জন্য পড়া জরুরী নয়। ইমামের পড়ার দ্বারা মুক্তাদীর
পড়া হয়ে যায়, যেমন ইমামের খুতবা বলার দ্বারা সবার খুতবা হয়ে যায়, মুআজ্জিনের আজান ও ইকামত দেয়ার দ্বারা সবার আজান ও
ইকামত হয়ে যায়। তেমনি জামাআতে নামায পড়ার সময় ইমামের সূরা ফাতেহা পড়ার দ্বারা সবার সূরা ফাতেহা হয়ে যায়।
একটি প্রশ্ন ও জবাব
কথিত আহলে হাদীসরা যদি প্রশ্ন করে যে, হাদীসের মাঝে আমভাবে বলা হয়েছে সূরা ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না, তাহলে আমরা কি করে জামাতে পড়লে শুধুমাত্র ইমামের সাথে বিষয়টি খাস করে ফেললাম?
এর জবাব হল-
কিছু বিষয় আছে আম। আর কিছু বিষয় আছে খাস। একই আদেশ আমভাবে দিলেও কখনো কখনো সেটা আম হয় না, হয় খাস। যেমন উদাহরণ কুরআনে বিদ্যমান।
ﻭَﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻳُﺴَﺒِّﺤُﻮﻥَ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻭَﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﻥَ ﻟِﻤَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ( 5 )
অনুবাদ-আর ফেরেস্তারা তাদের রবের প্রশংসার তাসবীহ পড়ে, আর জমিনে যারা আছে তাদের জন্য গোনাহ মুক্তির প্রার্থনা করে। {সূরা শোরা-৫}
এ আয়াতে লক্ষ্য করুন-বলা হয়েছে ফেরেস্তারা গোনাহমুক্তির জন্য প্রার্থনা করে। তাহলে এ প্রার্থনা করি ফেরাউনের জন্য ও ফেরেস্তারা করে? কারূনের জন্যও করে? সাদ্দাতের জন্য করে? হামানের জন্যও করে? ইবলিসের জন্য করে? নাকি শুধু মুসলমানদের জন্য?
আয়াতটি আম হলেও এটা খাস শুধু মুসলমানদের জন্য। তেমনি হাদীসটি সবার জন্য বাহ্যিকভাবে সূরা ফাতেহা পড়ার নির্দেশ হলেও জামাতে নামায পড়ার সময় শুধুমাত্র ইমামের সাথে খাস। যেমন উল্লেখিত আয়াতটি বাহ্যিকভাবে আম হলেও মূলত দুআটি মুমিনদের সাথে খাস, কাফেরদের জন্য নয়।
আর সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না, হাদীসটি একাকি ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য ইমামের পিছনে থাকলে পড়বে না বলে স্পষ্ট উল্লেখ করেছন হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ। আমরা নই। দেখুন তিরমিযী শরীফ-
ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻮﻝ : ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﺭﻛﻌﺔ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﻓﻴﻬﺎ ﺑﺄﻡ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﻠﻢ ﻳﺼﻞ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻭﺭﺍﺀ ﺍﻹﻣﺎﻡ ( ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣﺎﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﺧﻠﻒ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺇﺫﺍ ﺟﻬﺮ [ ﺍﻹﻣﺎﻡ ] ﺑﺎﻟﻘﺮﺍﺀﺓ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 313- )
অনুবাদ-হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ বলেন-যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়া ছাড়া নামায পড়ল তার নামায হয়নি, তবে যদি সে ইমামের পিছনে হয়, [তাহলে হয়ে যাবে।] {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩১৩}
তাহলে বুখারীর হাদীসের ব্যাখ্যা আমরা তিরমিযীতে বর্ণিত সাহাবী রাঃ থেকে নিলাম। নিজেরা কোন কিছু উদ্ভাবন করিনি। আমরা রাসূল সাঃ এর বাণীর ব্যাখ্যা নিলাম রাসূল সাঃ এর সাহাবী থেকে আর কথিত আহলে হাদীসরা নিল ওহাবীদের থেকে।
তাহলে কিরাত খালফাল ইমাম তথা ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পড়ার উপর বুখারীতে কথিত আহলে হাদীসদের কোন দলিলই নেই। দলিল আছে আমাদের।
গ-
আমীন বিল জেহের তথা আমীন জোরে বলা প্রসঙ্গ
কথিত আহলে হাদীসরা দাবি করে যে, নামাযে আমীন জোরে বলার দলিল বুখারীতে আছে। আর আমরা বুখারীর হাদীস না মেনে বুখারীর বিরোধিতা করি। তাই আমরা বুখারী বিরোধী আর ওরা বুখারীর ভক্ত।
তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় আমীন জোরে বলার দলিল বুখারীতে কি আছে?
ওদের প্রথম দলিল
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারীতে বাব নির্ধারণ করেছেন- ﺑﺎﺏ ﺟﻬﺮ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺑﺎﻟﺘﺄﻣﻴﻦ তথা ইমামের আমীন জোরে বলার অধ্যায়, তারপর বলেছেন- ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻄﺎﺀ ﺁﻣﻴﻦ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ তথা আতা রহঃ বলেছেন আমীন হল দুআ।
আমাদের জবাব
আমীনকে দুআ বলার দ্বারা আমীন জোরে বলা কিভাবে প্রমাণিত হল?
ওদের আরেক দলিল
ইমাম বুখারী রহঃ এর পর উল্লেখ করেছেন-ﺃﻣﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﻭﻣﻦ ﻭﺭﺍﺀﻩ ﺣﺘﻰ ﺇﻥ ﻟﻠﻤﺴﺠﺪ ﻟﻠﺠﺔ তথা ইবনে জুবাইর রাঃ এবং তার সাথে যারা থাকতো তারা এত জোরে আমীন বলতেন যে, মসজিদে সূর উঠতো।
সুতরাং বুঝা গেল আমীন জোরে বলতে হবে।
আমাদের জবাব
মজার ব্যাপার হল এটি কথিত আহলে হাদীসদের দলিল হতেই পারে না। কারণ এ বক্তব্যের কোন সনদ ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেন নি। আর সনদ ছাড়া কথা কথিত আহলে হাদীসরা মানে না। এমনকি সনদহীন কথাকে তারা ভিত্তিহীন সাব্যস্ত করে থাকে। অথচ এ বক্তব্যটির কোন সনদ না থাকা সত্বেও একে দলিল হিসেবে ওরা পেশ করে কিভাবে? এটাতো তাদের বক্তব্য অনুযায়ীই দলিল হওয়ার যোগ্য না। এমনিতেই বাতিল।
এছাড়া সাহাবীদের কোন আমল বা বক্তব্য ওদের কাছে দলিল নয়। তাহলে এটি দলিল হবে কিভাবে? সুতরাং বুখারীতে আমীন জোরে বলার কোন দলিল কথিত আহলে হাদীসদের নেই।
ওদের আরেকটি হাস্যকর দলিল
নিজেদের মত সাবেত করার জন্য ওরা আরেকটি দলিল পেশ করে থাকে বুখারীর। সেটি হল-এ বাবের সনদযুক্ত হাদীসটি-
747 – ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﻗﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﻣﺎﻟﻚ / ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺷﻬﺎﺏ ﻋﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺴﻴﺐ ﻭﺃﺑﻲ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻬﻤﺎ ﺃﺧﺒﺮﺍﻩ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ( ﺇﺫﺍ ﺃﻣﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻓﺄﻣﻨﻮﺍ ﻓﺈﻧﻪ ﻣﻦ ﻭﺍﻓﻖ ﺗﺄﻣﻴﻨﻪ ﺗﺄﻣﻴﻦ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ ) . ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺷﻬﺎﺏ ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ( ﺁﻣﻴﻦ )
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরা আমীন বল। কেননা যাদের আমীন বলা ফেরেস্তাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে তাদের আগের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৪৭}
সুতরাং আমীন জোরে বলতে হবে।
আমাদের জবাব
মজার ব্যাপার হল, এ হাদীসটিকে ওরা আমীন জোরে বলার পক্ষে কি করে দলিল হিসেবে পেশ করে এটাই আশ্চর্য ব্যাপার। এখানে আমীন জোরে বলার আলোচনা এল কোত্থেকে?
ওদের যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ফেরেস্তারা কি আমীন জোরে বলে?
কি বলবে? নিশ্চয় বলবে যে, না, ফেরেস্তারা আমীন আস্তে বলে।
তাহলে বলুন-ফেরেস্তারা আমীন আস্তে বললে ইমাম আর মুক্তাদীরা আমীন জোরে বলবে কেন? কোন যুক্তিতে? এখানেতো ফেরেস্তাদের সাথে আমীনের মাঝে একতা আনার কথা হয়েছে, তাহলে সে হিসেবে ফেরেস্তারা যেমন আমীন আস্তে বলে ইমাম মুসল্লিরা আস্তে বলার দ্বারাইতো কেবল পূর্ণ একতা আসবে। জোরে বলার মাঝে হয় কি করে? এটাতো আমাদের দলিল হল? ওদের হল কি করে?
বুখারীতে মূলত আমাদের মাসলাকের দিকেই ইঙ্গিত
763 – ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﻗﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﺳﻤﻲ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺻﺎﻟﺢ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ( ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻤﻦ ﺣﻤﺪﻩ ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻓﺈﻧﻪ ﻣﻦ ﻭﺍﻓﻖ ﻗﻮﻟﻪ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ،ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﻭﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 763- )
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন ইমাম সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে তখন তোমরা বল-আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ, কেননা যার বলা ফেরেস্তাদের বলার সাথে সাথে হবে তার আগের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৬৩}
এ হাদীসে লক্ষ্য করুন-পূর্বের আমীন বলার হাদীসের মতই এখানে বলা হয়েছে যে, ফেরেস্তার রাব্বানা লাকাল হামদ বলার সাথে বললে গোনাহ মাফ হয়ে যাবে, পূর্বে হাদীসে বলা হয়েছে আমীন ফেরেস্তার সাথে বলতে পারলে গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।
এ হাদীসের ক্ষেত্রে কথিত আহলে হাদীসদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, এখানে হাদীসে যে রাব্বানা লাকাল হামদ এর কথা বলা হয়েছে এটা মুক্তাদীরা আস্তে বলবে না জোরে?
তখন তারা বলবে যে, আস্তে।
তখন মজা করে বলুন যে, এখানে আস্তে বললে পূর্বের হাদীসের বর্ণনাভঙ্গী এক হওয়া সত্বেও সেখানে জোরে বলা বুখারী থেকে সাবিত হয় কি করে?
একথা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, বুখারীতে কথিত আহলে হাদীসদের মত আমীন জোরে বলার কোন প্রমাণ নেই। বরং ওদের বিপরীত আমাদের মতের প্রমাণ আছে।
তাহলে বুখারী আমাদের না ওদের?
ঘ-
তারাবীহের রাকাত সংখ্যা
কথিত আহলে হাদীসরা জোর গলায় প্রচার করে থাকে ইবাদতের মাসে যখন সব মানুষ ইবাদত বাড়িয়ে দেয়, তখন এ ইংরেজ সৃষ্ট দল প্রচার শুরু করে দেয় যে, তারাবীহ ২০ রাকাত বেশি না পড়ে ৮ রাকাত পড়। কারণ বুখারীতে তারাবীহ ৮ রাকাতের কথা এসেছে। দলিল হিসেবে পেশ করে-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻪ ﺃﺧﺒﺮﻩ : ﺃﻧﻪ ﺳﺄﻝ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ؟ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺛﻼﺛﺎ . ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺗﻨﺎﻡ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺗﺮ ؟ . ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺇﻥ ﻋﻴﻨﻲ ﺗﻨﺎﻣﺎﻥ ﻭﻻ ﻳﻨﺎﻡ ﻗﻠﺒﻲ ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ - ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺘﻬﺠﺪ، ﺑﺎﺏ ﻗﻴﺎﻡ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻏﻴﺮﻩ 1/154 )
হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪)
জবাব
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল নবীজী সাঃ এক সালামে ৪, ৪ রাকাত করে তারাবীহ আর শেষে এক সালামে ৩ রাকাত বিতর পড়েছেন, অথচ কথিত আহলে হাদিসদের আমল এর বিপরীত। তারা তারাবীহ দুই দুই রাকাত করে পড়েন। আর বিতর এক রাকাত বা তিন রাকাত দুই সালামে পড়েন। সুতরাং যেই হাদিস দলিলদাতাদের কাছে আমলহীন এর দ্বারা দলিল দেয়া যায়?
আসল কথা হল এই যে, এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবীহের কথা বর্ণিত নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
হাদিসে মূলত তাহাজ্জুদের বর্ণনা এসেছে এর দলিল
১- হাদিসের শব্দ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ (নবীজী সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা) এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা? এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতো বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাঃ রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক। আর রামযান ছাড়া কি তারাবীহ আছে? যে রামাযানের আগেই তারাবীহ আর বিতর মিলিয়ে ১৩ রাকাত নবীজী পড়তেন? নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়? সুতরাং এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় তারাবীহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামায রামাযান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাযানে বাড়িয়ে পড়তেন কিনা? এর জবাবে আয়েশা রাঃ বললেন-১৩ রাকাত থেকে বাড়াতেননা তাহাজ্জুদ নামায।
২- এই হাদিসের শেষাংশে এই শব্দ আছে যে ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺗﻨﺎﻡ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺗﺮ ؟ (তারপর আয়েশা রাঃ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমান?) এই বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত যে নবীজী সাঃ তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবীরা বিতর পড়ার জন্য নবীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদ এর ক্ষেত্রে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি?
৩- মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর “ ﻋﺪﺩ ﺍﻟﺮﻛﻌﺎﺕ ﺍﻟﺘﻰ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﻬﺎ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ”(রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি।
৪- মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী রহঃ তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
(ক) বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫)
(খ) নবীজী সাঃ এর রাতে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতা রামযানে ও রামযান ছাড়া-(১/১৫৪)
(গ) রামযানে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতার ফযীলত অধ্যায়-(১/২৬৯)
(ঘ) নবীজী সাঃ এর দু’চোখ ঘুমায় মন ঘুমায়না-(১/৫০৩)
প্রথম অধ্যায়ে বিতরের রাকাত সংখ্যা আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাহাজ্জুদ রামাযানে বেশি পড়তেন কিনা তা জানা আর তৃতীয় অধ্যায়ে রামাযানে বেশি বেশি নামাযের ফযীলত আর চতুর্থ অধ্যায়ে নবীজী ঘুমালে যে তার অযু ভাঙ্গেনা তার কারণ বর্ণনা জন্য হাদিস আনা হয়েছে। তারাবীহের রাকাত সংখ্যা বুঝানোর জন্য কোথায় এসেছে এই হাদিস???
৫- আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত যা দিনের বিতর। সুতরাং সাযুজ্যতা হল-রাতের নামায দিনের নামাযরের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সাযুজ্যতা হল-ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের জন্য।(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭)
ইবনে হাজার রহঃ এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছেনা এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য তারাবীহ নামায নয়? এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার রহঃ।
তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য
কথিত আহলে হাদিসরা বলেন “তাহাজ্জুদ আর তারাবীহ একই” তাদের এই দাবিটি ভুল নিম্নবর্ণিত কারণে
১- তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয় তারাবীহতে জায়েজ।
২- তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।
৩- মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন।
৪- তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺘَﻬَﺠَّﺪْ ﺑِﻪِ ﻧَﺎﻓِﻠَﺔً ﻟَّﻚَ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥ ﻳَﺒْﻌَﺜَﻚَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَّﺤْﻤُﻮﺩًﺍ অর্থাৎ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।
আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী বলেন-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮)
সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।
৫- তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে।
৬- ইমাম আহমাদ রহঃ ও তারাবীহ তাহাজ্জুদ আলাদা বিশ্বাস করতেন(মাকনা’-১৮৪)
৭- ইমাম বুখারী রহঃ এর ক্ষেত্রে বর্ণিত তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। (ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী)
৮- তাহাজ্জুদ এর নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত অর্থাৎ বিতরসহ বেশি থেকে বেশি ১৩ রাকাত আর কমপক্ষে ৭ রাকাত। আর তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে খোদ আহলে হাদিস ইমামদের স্বাক্ষ্য যে এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নবীজী সাঃ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।
ব্যাস কথা হল এই যে, যদি বুখারীর এ হাদীস মানতে হয়, তাহলে বলতে হবে বিতর তিন রাকাত। কিন্তু কথিত আহলে হাদীসরাতো একথা মানে না। তাহলে ওদের দলিল এ হাদীস হয় কি করে?
তাহলে কি দাঁড়াল? তারাবীহ ৮ রাকাতের ক্ষেত্রেও কথিত আহলে হাদীসদের মতের পক্ষে কোন দলিল বুখারী শরীফে নেই। যা ওরা বলছে সবই মনগড়া।
আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি যে, বুখারীতে কথিত আহলে হাদীসদের কোন দলিল নেই। সবই ওদের মনগড়া বা কম বুঝের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং হানাফীদের কোন টেনশনের কোন কারণ নেই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন