আক্বীদাঃ নবী আলাইহিস সালাম-রা কবরে জীবিত
আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদা
হচ্ছে নবী আ. ইন্তিকাল করেন, কিন্তু
তাদের মৃত্যুর পর কবরে তাদের বিশেষ
হায়াত দেয়া হয়।
.
তবে ইদানীংকালে বাংলাদেশের কিছু
আহলে হাদীস ভাই এবং পাকিস্তানের
মামাতি ফিরকার আক্বিদা হচ্ছে রাসুল
সাধারণ লোকদের মত মৃত! তবে প্রথম
জামানার তথা বৃটিশ পিরিয়ডের আহলে
হাদীস আলেমরাও এব্যাপারে আহলুস
সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের মত আক্বিদা
রাখতেন।
অপরদিকে বেরেলভী 'আহলে শিন্নি'
ভাইদের আক্বিদা হচ্ছে রাসুল মরেইনি
অথচ আল্লাহ কোরআনে বলেছেন-
( ﺇﻧﻚ ﻣﻴﺖ ﻭﺇﻧﻬﻢ ﻣﻴﺘﻮﻥ )
..আপনার মৃত্যু হবে এবং তারাও মারা
যাবে। (সুরা যুমার, আয়াত ৩০)
অতএব বুঝা গেলো রাসুল সা. ইন্তিকাল
করেছেন, তবে এরপর উল্লেখিত হাদীসগুলো
দ্বারা আমরা বুঝবো নবীগণ কবরে জীবিত।
-
(এক) হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻓِﻲ ﻗُﺒُﻮﺭِﻫِﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥ .
‘ নবীগণ কবরে জীবিত, নামায আদায়
করেন’।
-মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৩৪২৫;
হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী, হাদীস
১-৪
-
হাদীসের মান:
ইমাম বাইহাকী রাহ. হাফেজ ইবনে হাজার
আসকালানী রাহ. আল্লামা জালালুদ্দীন
সুয়ূতী রাহ. এবং ইদানিংকালের কাজি
শাওকানী নাসীরুদ্দীন আলবানী সহ
অনেকেই হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
উল্লেখ্য যে, এ হাদীসকে কোনো মুহাদ্দিস
দুর্বল বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই।
হাদীসটির একজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে
ইমাম যাহাবী রাহ.-এর যে বক্তব্য রয়েছে
তার ভিত্তি ছিল ভুল ধারণার উপর। হাফেজ
ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ‘লিসানুল
মিযান’ গ্রন্থে বিষয়টি স্পষ্ট করে
দিয়েছেন। সুতরাং হাদীসটি
সর্বসম্মতিক্রমে সহীহ।
-
হাদীস থেকে স্পষ্ট হল যে, “নবীগণ তাঁদের
কবরে জীবিত। তাঁরা কবরে নামায আদায়
করেন”। যদিও কোন নামায ও কত রাকাত
পড়েন তা জানা যায় না, তবুও নামায আদায়
করা দুনিয়ার জীবনের সাথে সাদৃশ্যের
একটি উদাহরণ। পরবর্তী হাদীসে বিষয়টি
আরো পরিষ্কার করা হয়েছে।
।
(দুই) হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ﻣَﺮَﺭْﺕُ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﻮﺳَﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺃُﺳْﺮِﻱَ ﺑِﻲ، ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻜَﺜِﻴﺐِ ﺍﻟْﺄَﺣْﻤَﺮِ، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺋِﻢٌ ﻳُﺼَﻠِّﻲ
ﻓِﻲ ﻗَﺒْﺮِﻩِ .
‘ আমি মিরাজের রাতে (বাইতুল
মাকদিসের পাশে) লাল বালুর ঢিবির
কাছে মূসা আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম
করেছি। তখন তিনি তাঁর কবরে দাড়িয়ে
নামায আদায় করছিলেন’।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৪৭
হাদীস থেকে জানা গেল, ‘আল্লাহর কাছে’
নয় বরং মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর কবরে
নামায আদায় করছেন। রূহের জগতে নয় বরং
তিনি স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামায আদায়
করছেন। নবীজী কবরের অবস্থানটিও উল্লেখ
করে দিয়েছেন- লাল বালুর ঢিবির কাছে।
তাই এখানে সালাত বা নামাযের বিভিন্ন
ব্যাখ্যা দেয়ার আর কোনো সুযোগ থাকে
না’।
।
(তিন) হযরত আউস ইবনে আউস রা. বর্ণনা
করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ﺇِﻥَّ ﻣِﻦ ْﺃَﻓْﻀَﻞِ ﺃَﻳَّﺎﻣِﻜُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓِﻴﻪِ ﺧُﻠِﻖَ ﺁﺩَﻡُ، ﻭَﻓِﻴﻪِ ﻗُﺒِﺾَ، ﻭَﻓِﻴﻪِ
ﺍﻟﻨَّﻔْﺨَﺔُ، ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺼَّﻌْﻘَﺔُ، ﻓَﺄَﻛْﺜِﺮُﻭﺍ ﻋَﻠَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗَﻜُﻢْ
ﻣَﻌْﺮُﻭﺿَﺔٌ ﻋَﻠَﻲَّ " ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻳَﺎﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﻛَﻴْﻒ َﺗُﻌْﺮَﺽُ ﺻَﻠَﺎﺗُﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ
ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺭِﻣْﺖَ؟ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ : ﺑَﻠِﻴﺖَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : " ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﺟْﺴَﺎﺩَ
ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ".
‘ তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি হল
জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস
সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই
তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার
দেওয়া হবে, আর এ দিনেই সকল প্রাণী
মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা
আমার উপর বেশি করে ছালাত ও সালাম
পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে
পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন,
আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে
পেশ করা হবে, তখন যে আপনি (মাটির
সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত)
হয়ে যাবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ
তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহ
খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন’।
(অর্থাৎ কবরে নবীগণের দেহ দুনিয়ায়
জীবিত মানুষের মতই অক্ষত থাকে। এর
সাথে রূহের গভীর সম্পর্কও থাকে। ফলে
কবরে থেকেও সালাত ও সালাম পাওয়াতে
কোনো অসুবিধা হবে না।)
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৪৭; সহীহ ইবনে
খুযাইমা, ৩/১১৮ হাদীস ১৭৩৩; মুসতাদরাকে
হাকেম, ১/২৭৮, হাদীস ১০২৯; মুসনাদে
আহমাদ, হাদীস ১৬১৬২
-
হাদীসের মানঃ
ইমাম হাকেম নিশাপুরী রহ. ইমাম যাহাবী
রাহ. ইমাম নববী রাহ. হাফেজ ইবনে হাজার
আসকালানী রাহ. হাফেজ ইবনুল কায়্যিম
রাহ. হাফেজ ইবনে কাসীর রাহ.
বর্তমান সময়ের শায়খ শুআইব আরনাউত ড.
মুছতাফা আজমী শায়খ নাসীরুদ্দীন
আলবানী রাহ. শাওকানী রাহ. শায়েখ বিন
বায সহ অনেকে হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.
হাদীসটি দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং বলা যায় এ হাদীসটিও
মুহাদ্দিসীনে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে
সহীহ।
-
হাদীসের অর্থ ও মর্ম
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.
হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন,
ﻓﺄﺧﺒﺮ ﺃﻧﻪ ﻳﺴﻤﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﻨﺎ ﻟﻘﺮﻳﺐ ﻭﺃﻧﻪ ﻳﺒﻠﻐﻪ ﺫﻟﻚ ﻣﻨﺎ ﻟﺒﻌﻴﺪ .
এ হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন, তিনি
নিকটবর্তী ব্যক্তির কাছ থেকে সালাত ও
সালাম শুনেন, আর দূরবর্তী ব্যক্তিদের কাছ
থেকে সালাত ও সালাম তাঁর কাছে
পৌঁছে। -মাজমুউল ফাতাওয়া ২৬/১৪৭
সৌদী আরবের শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে
মুহাম্মদ ইবনে কাসেম আন-নাজদী রাহ.
(মৃত্যু. ১৩৯২) ইবনে তাইমিয়া রাহ-এর এ
বক্তব্যটিই সমর্থনপূর্বক উল্লেখ করেছেন। -
আর-রাউজুল মুরবি এর টীকা ৪/১৯৩
ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, উপরোক্ত
ব্যাখ্যাটি যথার্থ। কেননা, সাহাবায়ে
কেরাম মনে করলেন, যার কাছে সালাত ও
সালাম পেশ করা হবে তাঁকে তো স্বশরীরে
জীবিত থাকতে হবে। আর মৃত্যুর পর তো
সকলের ন্যায় নবীও মাটির সাথে মিশে
যাবেন। তাহলে কীভাবে তাঁর কাছে
সালাম পেশ করা হবে? উত্তরে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘নবীদের দেহ মাটির জন্য হারাম’। অর্থাৎ
আমি স্বশরীরেই জীবিত থাকব। কারণ যদি
নবীজীর উদ্দেশ্য হত রূহের জগতে রূহের
কাছে সালাম পেশ করা হবে, তাহলে তিনি
বলতেন, সালাম তো রূহের কাছে পাঠানো
হবে, দেহ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার
সাথে এর সম্পর্ক কী? তাছাড়া কবর থেকে
সালাত ও সালাম শুনতে পাওয়ার বিষয়টি
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত অন্য একটি
শক্তিশালী হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত যার
বিবরণ সামনে আসছে।
-
এ হাদীসটি ভিন্ন সনদে হযরত আবুদ-দারদা
রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে-
( ﻓﻨﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﻲ ﻳﺮﺯﻕ ) : “সুতরাং আল্লাহর নবী
জীবিত এবং রিযিক প্রাপ্ত”। -সুনানে
ইবনে মাযাহ, হাদীস ১৬৩৭
এ বর্ণনার সকল রাবী নির্ভরযোগ্য।(১৩)
হাফেজ বূছিরী (মিছবাহুয যুজাজায়) ইমাম
নববী (আল-আযকারে), হাফেজ মুন্যিরী
(আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবে), ইবনে
হাজার (তাহযীবুত তাহযীবে যায়েদ ইবনে
আইমান-এর আলোচনায়), মুল্লা আলী কারী
রাহ. (মিরকাতে) এবং শাওকানী রাহ.
(নাইলুল আউতারে) ও শামসুল হক
আযীমাবাদী (আওনুল মা‘বুদে) এর সনদকে
জায়্যিদ তথা উত্তম বলেছেন। বিশেষত
হাদীসের মূল অংশটি পূর্বোক্ত আউস ইবনে
আউস বর্ণিত সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত।
আর শেষ অংশটি সূরা বাকারার ১৫৪ নম্বর
আয়াত ও সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ নম্বর
আয়াত দ্বারা সমর্থিত। তাই হাদীসের
প্রথম অংশের ন্যায় শেষ অংশটিও সহীহ।
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হল- নবীদের দেহ
কবরে দুনিয়ার জীবনের মতই সুসংরক্ষিত
রয়েছে। স্বশরীরে জীবিত অবস্থায়ই তাঁর
কাছে সালাত ও সালাম পেশ করা হয়।
তিনি নিকটবর্তী ব্যক্তির কাছ থেকে
সালাত ও সালাম শুনতে পান। এবং
শহীদদের মত তাঁরাও আল্লাহর পক্ষ থেকে
বিশেষ রিযিকপ্রাপ্ত হন।
-
(চার) হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲَّ ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ، ﻭَﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﻋَﻠَﻲّ َﻧَﺎﺋِﻴًﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﺃُﺑْﻠِﻐْﺘُﻪ .
“ যে আমার কবরের পাশে আমার উপর
সালাত পেশ করে আমি তা শুনি। এবং যে
দূরে থেকে আমার উপর দরূদ পড়ে তা আমার
কাছে পৌঁছানো হয়”।(১৪ )
(কিতাবুস সওয়াব, আবু হাইয়ান ইবনু আবিশ
শায়খ ইছফাহানী, ফাতহুল বারী ৬/৬০৫,
আল-কাওলুল বাদী পৃ. ১৬০)
-
যারা এ হাদীসকে শক্তিশালী বলেছেন-
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.
হাফেজ সাখাবী রাহ. আল্লামা সুয়ূতি
রাহ. ইবনু র্আরাক্ব আল-কিনানী, শাইখুল
ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. সম্ভবত এ
শক্তিশালী সূত্রটি পাননি। তাই অন্য
একটি দুর্বল সূত্র উল্লেখ করে বলেন :
হাদীসের এ সূত্রে দুর্বলতা সত্তেও
বর্ণনাটির বিষয়বস্তু প্রমাণিত। অন্যান্য
হাদীস দ্বারা এর সমর্থন পাওয়া যায়।
তাছাড়া এ হাদীসে উল্লিখিত সালাত ও
সালাম শুনতে পাওয়ার বিষয়টি হযরত আউস
ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত তৃতীয় নম্বরে
আলোচিত হাদীসটি দ্বারা সমর্থিত। আর
দূরে থেকে সালাত ও সালাম পৌঁছার
বিষয়টি অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা
সমর্থিত।
সুতরাং এ হাদীস থেকে বুঝা গেল- কবরের
পাশ থেকে সালাত ও সালাম পেশ করলে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তা সরাসরি শুনতে পান।
সরাসরি সালাম শোনার বিষয়টি যারা
স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন তাদের মধ্যে
রয়েছেন- শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রাহ. ও
তাঁর শিষ্যদ্বয় শায়খ ইবনুল কায়্যিম রাহ. ও
ইবনে আব্দুল হাদী রাহ.। উলামায়ে
নাজ্দের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ
ইবনে আব্দিল ওয়াহ্হাব, আব্দুর রহমান ইবনে
মুহাম্মদ ইবনে কাসেম, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল
লতীফ আলে শায়খ। গাইরে মুকাল্লিদ
আলেমদের মধ্যে নবাব সিদ্দীক হাসান,
আতাউল্লাহ হানীফ ও ইসমাঈল গায্নাবী
প্রমুখ। (মাকামে হায়াত, ড. খালেদ মাহমূদ
পৃ.৫৪৫-৫৫৭)
স্বাভাবিকভাবেই কারো মনে প্রশ্ন হতে
পারে, মাটির নিচ থেকে সালাম কী করে
শোনেন? এর উত্তরে দুটি কথা বলা যেতে
পারে। (এক) এটি র্বাযাখের কথা কর্তব্য।
হাদীসে সালাত ও সালাম শুনতে পাওয়ার
কথা এসেছে তাই তা বিশ্বাস করা। কিন্তু
কীভাবে শুনেন তা আল্লাহ তাআলাই
ভালো জানেন। (দুই) তবে এতটুকু যে, নবীজী
দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায়ও অনেক
সময় মাটির নিচে কবরে সংঘটিত আযাব
শুনতে পেয়েছেন। যা বিভিন্ন সহীহ
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তদ্রƒপ কবর থেকে
উপরের আওয়াজ শুনতে পান। কিন্তু
কীভাবে শুনেন বিষয়টি আমাদের উপলব্ধির
বাইরের। (মাকামে হায়াত পৃ.৫৩২-৫৩৩)
-
(পাঁচ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.
বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ﺇِﻥَّ ﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﻼﺋِﻜَﺔً ﺳَﻴَّﺎﺣِﻴﻦ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽ ِﻳُﺒَﻠِّﻐُﻮﻧِﻲ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺍﻟﺴَّﻼﻡَ .
“ আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত একদল
ফেরেশতা রয়েছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে
বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার
কাছে পৌঁছে দেন”। -সহীহ ইবনে হিব্বান,
হাদীস ৯১৪
যারা এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন:
ইমাম হাকেম ইমাম যাহাবী রাহ. হাফেজ
ইবনুল কায়্যিম রাহ. একে সহীহ বলেছেন।
শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটি
সহীহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। (সহীহ
ইবনে হিব্বানের টীকা ৩/১৯৫)
-
(ছয়) হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন-
ﻟَﺎﺗَﺠْﻌَﻠُﻮﺍ ﺑُﻴُﻮﺗَﻜُﻢْ ﻗُﺒُﻮﺭًﺍ، ﻭَﻟَﺎﺗَﺠْﻌَﻠُﻮﺍ ﻗَﺒْﺮِﻱ ﻋِﻴﺪًﺍ، ﻭَﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻲَّ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗَﻜُﻢْ
ﺗَﺒْﻠُﻐُﻨِﻲ ﺣَﻴْﺚُ ﻛُﻨْﺘُﻢ .
“ তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না।
আর আমার কবরে উৎসব করো না (বার্ষিক,
মাসিক সাপ্তাহিক কোনো আসরের
আয়োজন করো না)। আমার উপর সালাত
পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক
তোমাদের সালাত আমার কাছে পৌঁছবে।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২০৪২; শুআবুল
ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩৮৬৫
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.
বলেন, এর সনদ সহীহ। (ফাতহুল বারী ৬/৬০৬,
আরো দেখুন, মজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে
তাইমিয়া ২৬/১৪৭)
।
উপরিউক্ত ৫ ও ৬ নং হাদীস দুটি থেকে বুঝা
গেল, দূর থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের কাছে সালাত ও সালাম
পাঠালে তা নবীজীর কবরে পৌঁছে দেওয়া
হয়।
-
(সাত) হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন-
ﻣَﺎ ﻣِﻦ ﺃَﺣَﺪٍ ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻋَﻠَﻲَّ، ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺩَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻲّ ﺭُﻭﺣِﻲ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺭُﺩَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ .
" মৃত্যুর পর) যে কেউ আমাকে সালাম করবে,
সেই আমাকে এ অবস্থায় (জীবিত) পাবে
যে, আল্লাহ তাআলা আমার মধ্যে (এর
পূর্বেই) রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। (অর্থাৎ
মৃত্যুর পরই আমার রূহ আমার মধ্যে ফিরিয়ে
দিয়ে জীবিত করে দেবেন) যাতে আমি
তার সালামের জবাব দেই’। (সুনানে আবু
দাউদ হা.২০৪১)
-
যারা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন
ইমাম নববী ও ইমাম সাখাবী রাহ. বলেন,
হাদীসটি সহীহ। শায়খ নাসীরুদ্দীন
আলবানী রাহ.ও বর্ণনাটি তাঁর ‘আস-
সহীহায়’ উল্লেখ করেছেন। (সিলসিলাতুস
সহীহা, হাদীস ২২২৬)
-
হাদীসের অর্থ
হাদীসের অর্থ হল মৃত্যুর পরই আমার মধ্যে রূহ
ফিরিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাকে
জীবিত করবেন। আর এ জীবন কিয়ামত
পর্যন্ত স্থায়ী হবে। ফলে যে কেউ আমাকে
সালাম করলেই জীবিত পাবে। আমি তার
সালামের জবাব দেব।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায়- প্রথমত নবীজী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে
স্বশরীরে জীবিত। যে জীবনে দেহের মধ্যে
রূহ বিদ্যমান থাকে। এ জীবন কিয়ামত
পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। দ্বিতীয়ত ‘যে কেউ
তাঁকে সালাম দেয় তিনি উত্তর দেন’- কথা
থেকে বুঝা যায় তিনি সালাম সরাসরি
শুনেন এবং উত্তর দেন। তাছাড়া এ বিষয়টিও
সকলেরই জানা যে, দিন রাত সর্বাবস্থায়ই
কবরের নিকট থেকে ও দূর থেকে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর
সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে।
সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোন না কোনভাবে
সালাত ও সালাম পেশ করতে থাকে। আর
নবীজী এর উত্তর দিতে থাকেন। সুতরাং সব
সময় যেহেতু সালাত ও সালাম চলতেই থাকে
তাই এ হাদীসের বহ্যিক অর্থ ধরলেও বলতে
হবে নবীজী কবরে জীবিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন