তাবলীগী নেসাব ফাযায়েলে আমালের উপর উত্থাপিত কয়েকটি অহেতুক প্রশ্নের জবাব

1.তাব্লিগের বয়ানে বলা হয় কোনো মুসলমান
ভাইয়ের দাওয়াতের জন্য তার ঘরের
সামনে কিছু সময় অবস্থান করা শব-এ-কদর
এর রাতে হাজর-এ-আসওয়াদ পাথরকে
সামনে নিয়ে এবাদত করার চেয়েও বেশি
দামি এ কথার কোন ভিত্তি আছে কি?

আল্লাহর রাস্তায় একটা আমল করলে ৪৯
কোটি গুন আমলের সওয়াব হয়’ এর দলিল কি?

আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল/এক বিকাল বের
হওয়া দুনিয়া এবং দুনিয়ার মাঝে যা আছে
এর চেয়েও উত্তম নেকি’ এটা কোন হাদীস?

আল্লাহর রাস্তায় ধুলাবালি গায়ে লাগলে
জাহান্নামের আগুন ত দুরের কথা
জাহান্নামের ধুয়াও স্পর্শ করবে না’।
এটার দলিল কি?

রাহবার,মুতাকাল্লিম আর মামুর ভাইদের
নিয়ে এক জামাত গাস্তে বের হয় আর এক
জামাত মাসজিদ এ অবস্থান করে,যেখানে
এক ভাই বয়ান করে,একজন জিকির এ থাকে
আর একজন এস্তেগবাল এ থাকে।
এইটা কি নবীজি অথবা তাঁর সাহাবীদের
মধ্যে প্রচলন ছিলো নাকি নতুন প্রচলন????

৩ দিন,৪০দিন আর ১২০ দিনের হাদিসের
দলিল কি???দাওয়াত দেওয়ার জন্য/ইমান
শিক্ষা করার জন্য কি দিন নিদিষ্ট করা
লাগে ???সাহাবিরা কি এইভাবে নির্দিষ্ট
কিছু দিনকে ঠিক করে আল্লাহর রাস্তায়
বের হয়েছিলেন নাকি যখনি সময় হয়েছিলো
তখনি আল্লাহর রাস্তায় হাজির
হয়েছিলেন???

তাবলীগী ভাইয়েরা কুরআন হাদীসের
আয়াত না বলে বয়ানে শুধু মুরুব্বীরা বলেন!
মুরুব্বীরা বলেন! একথা বলে কেন?
জবাব
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
প্রারম্ভিকা
আজকাল আমাদের সমাজের অধিকাংশ
মানুষ আলেম আর গায়রে আলেমের মাঝের
পার্থক্য জানে না। হাস্যকর ব্যাপার হল-দু’
একটি বাংলা বা ইংরেজী ভাষায়
হাদীসের কিতাব ও কুরআনের অনুবাদ পড়েই
এখন অনেকে আল্লামা সেজে যাচ্ছেন।
কিছু কিতাবের অনুবাদের রেফারেন্স মুখস্ত
করে একের পর রেফারেন্স দিতে পারলেই
আমাদের সমাজের সাধারণ লোকেরা বড়
আল্লামা বানিয়ে দিচ্ছে লোকটিকে।
লোকটির মাঝে আরবী বুঝার ক্ষমতা আছে
কি না? অনুবাদ ছাড়াই মূল কিতাব থেকে
মাসআলা বের করার যোগ্যতা আছে কি না?
কুরআনের আয়াতের শানে নুজুল, শব্দের
অলংকার, আরবী ব্যাকরণ, নাসেখ-মানসুখ,
শানে ওরুদ, তাফসীর ইত্যাদী সম্পর্কে
পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে কি না? ইত্যাদি
যাচাই করা ছাড়াই অনুবাদের
রেফারেন্সদাতাদের যে সমাজ আল্লামার
মর্যাদা দিতে শিখে। সে সমাজের
লোকেরা আলেমদের কাছে কেন যাবে?
আলেমদের কাছে না যাওয়ার কারণে।
যারা কুরআন সুন্নাহকে মূল কিতাব থেকে,
তার নাসেখ-মানসূখ, শানে ওরুদ ও শানে
নুজুল, তাফসীর ইত্যাদিসহ মাসায়েল বর্ণনা
করেন, ব্যাখ্যা দেন, তাদের কাছে যাওয়ার
প্রয়োজনীয়তা বোধ না করা আমাদের
সমাজে বিভ্রান্তির মূল কারণ।
নিজে নিজেই কিছু অনুবাদ পড়ে আল্লামা
সাজার প্রবণতা ইদানিংকালে বেড়ে
গেছে। কোন কিতাবের অনুবাদ পড়ে বুঝতে
না পারলে, বা কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে
নিজে নিজেই এর সামাধান খুঁজে। না
পেলে প্রচার করতে শুরু করে কিতাবটি ভুল।
শিরকে পূর্ণ। আদৌ কি বিষয়টি এমন কিনা?
কোন বিজ্ঞ আলেম থেকে তা জেনে নেবার
প্রয়োজনীয়তা বোধ না করায় গোমরাহ
হচ্ছে এ সমাজের অনেক নতুন প্রজন্ম।
অষুখ হলে বিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে না
গিয়ে নিজে নিজে চিকিৎসা করাকে কেউ
নিরাপদ না মনে করলেও,
বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ইঞ্জিনিয়ারের
কাছে না গিয়ে নিজে নিজেই নির্মাণ শুরু
করাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করলেও,
আজকের সমাজের মানুষেরা কুরআন
সুন্নাহের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে বিজ্ঞ
ব্যক্তিদের শরনাপন্ন হওয়া ছাড়া নিজে
নিজেই সব শিখে নেবার মত দুঃসাহস
দেখাচ্ছে। আর গোমরাহীর অতলে যাচ্ছে
তলিয়ে।
কোন কিতাবের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন
জাগলে এ বিষয়ে প্রাজ্ঞদের কাছে এর
জবাব জানতে চাইতে হবে। নিজে নিজে
সমাধান খুঁজে না পেলে বদনাম ছড়ানোটা
আহমকীর নিদর্শন। নিজের অজ্ঞতাকে
দলিল নেইয়ের উপর প্রমাণ পেশ করাটা
বোকামী ছাড়া আর কী হতে পারে?
ফাযায়েলে আমাল ও আকাবীরে দেওবন্দ
এবং হক্কানী ওলামাদের উপর উত্থাপিত
অভিযোগের অবস্থা তা’ই। কিছু অতি
পন্ডিত লোক কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির
তত্বাবধান ছাড়া নিজে নিজে কিতাবগুলো
পড়ে। তারপর প্রশ্ন জাগে। নিজে নিজেই
এর সমাধান খুঁজে। উত্তর না পেয়ে ছড়াতে
শুরু করে এ কিতাব ভুল। শিরকে পূর্ণ।
ডাক্তারী বই নিজে নিজে পড়ে কোথাও
প্রশ্ন জাগলে নিজে নিজে খুঁজে উত্তর না
পেয়ে যদি উক্ত পাঠক ডাক্তারী ঐ বইকে
ভুল সাব্যস্ত করে, তাহলে বিজ্ঞ
ডাক্তারদের কাছে যেমন বিষয়টি চরম
হাস্যকর হয়। তেমনি এ অতি পন্ডিত কুরআন
সুন্নাহের অনুবাদ পাঠকদের অভিযোগের
ধরণ দেখে হাসি পায় বিজ্ঞ আলেমদের।
ফাযায়েলে আমালের উপর উত্থাপিত এ
প্রশ্নটিও তেমনি। যেভাবে প্রশ্নটি করা
হয়েছে, মনে হচ্ছে প্রশ্নকারী বিশাল
হাদীস বিশারদ। কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে
বিরাট প্রাজ্ঞ লোক। নিম্নেই লক্ষ্য করে
দেখুন প্রশ্নগুলো কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে
কতটা অজ্ঞতা থাকলে করা হয়েছে।
১ এর উত্তর
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ :
‏( ﻣﻮﻗﻒ ﺳﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﻗﻴﺎﻡ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﺤﺠﺮ ﺍﻷﺳﻮﺩ
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল সাঃ
বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি বলেছেন-
আল্লাহর রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা
শবে কদরে হাজরে আসওয়াদের সামনে
ইবাদত করা হইতে উত্তম।
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬০৩
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৯৮১
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল
আফআল, হাদীস নং-১০৫৬০
জামেউল আহাদীস, হাদীস নং- ২৪৩৪৮
২ এর উত্তর
আল্লাহর রাস্তায় বের হলে অনেক সওয়াব
হবে। অনেক হাদীসে সংখ্যাও উল্লেখ করা
হয়েছে সওয়াবের। তবে নির্দিষ্ট করে ৪৯
কোটি বলাটা উচিত হবে না। তবে অগণীত
সওয়াব হয় আল্লাহর রাস্তায় বের হলে এটা
নিশ্চিত। নিম্নের ৩টি হাদীস থেকে তা
স্পষ্ট হয়।
ﻋﻦ ﺧﺮﻳﻢ ﺑﻦ ﻓﺎﺗﻚ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﺃﻧﻔﻖ
ﻧﻔﻘﺔ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺘﺒﺖ ﻟﻪ ﺑﺴﺒﻌﻤﺎﺋﺔ ﺿﻌﻒ
অনুবাদ-হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ
থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু
খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭ শত গুণ
হিসেবে লেখা হয়।
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬
মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস
নং-১৯৭৭০
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪
এবার দেখুন আল্লাহর রাস্তায় আমল করলে
খরচের থেকে কত বেশিগুণ সওয়াবের কথা
হাদীসে এসেছে-
ﻋَﻦْ ﺳَﻬْﻞِ ﺑْﻦِ ﻣُﻌَﺎﺫٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ- ‏« ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻭَﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﻭَﺍﻟﺬِّﻛْﺮَ ﺗُﻀَﺎﻋَﻒُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﻔَﻘَﺔِ ﻓِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺑِﺴَﺒْﻌِﻤِﺎﺋَﺔِ ﺿِﻌْﻒٍ
হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা
থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ
করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় নামায, রোযা,
এবং জিকিরের সওয়াব আল্লাহর রাস্তায়
খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ শত গুণ বৃদ্ধি করে
দেয়া হয়।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৫০০
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস
নং-১৮৩৫৫
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল
আফআল, হাদীস নং-১৮৯০৬
জামেউল আহাদীস নং-৬৪৮৮
অন্য হাদীসে এসেছে-
ﻋﻦ ﺳﻬﻞ ﺑﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺇﻥ
ﺍﻟﺬﻛﺮ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻀﻌﻒ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﻨﻔﻘﺔ ﺑﺴﺒﻊ ﻣﺎﺋﺔ ﺿﻌﻒ ﻗﺎﻝ
ﻳﺤﻴﻰ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﺑﺴﺒﻊ ﻣﺎﺋﺔ ﺃﻟﻒ ﺿﻌﻒ
হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা
থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ
করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে
স্মরণ করার সওয়াব আল্লাহর রাস্তায়
খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ শত গুণ বৃদ্ধি করে
দেয়া হয়।
অন্য বর্ণনায় এসেছে সাত লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে
দেয়া হয়।
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৬১৩
আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪০৫
মুসনাদুস সাহাবা ফি কুতুবিত তিসআ,
হাদীস নং-১৫১৮৬
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল
আফআল, হাদীস নং-১০৮৭৯
জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৬৮৫৮
৩ এর উত্তর
ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻏﺪﻭﺓ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻭ
ﺭﻭﺣﺔ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﻣﺎ ﻓﻴﻬﺎ
অনুবাদ-আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা
এক বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার ভিতর যা কিছু
আছে, তা থেকে উত্তম।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬১৯৯,
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৯৮৫,
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬৪৮,
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭৩৯৮,
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩২৭,
আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৮৬৬৭,
আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৫৮৩৫,
মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৭৩৫৪,
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৬০২,
মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৫৪৮,
মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-৪৬৬,
মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-২২৫,
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস
নং-১৯৮২০,
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস
নং-৯৫৪৩
৪ এর উত্তর
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ‏( ﻻ ﻳﺠﺘﻤﻊ ﻏﺒﺎﺭ
ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺩﺧﺎﻥ ﺟﻬﻨﻢ ﻓﻲ ﺟﻮﻑ ﻋﺒﺪ ﻣﺴﻠﻢ
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে
বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
আল্লাহর রাস্তার ধুলাবালি আর
জাহান্নামের ধোঁয়া কোন মুসলিমের পেটে
একত্র হতে পারে না।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৭৭৪
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৮২৮৯
আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-২৮১
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩২০
আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-১৯১১
সহীহ ইবেন হিব্বান, হাদীস নং-৩২৫১
মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭২২
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭৪৮০
মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-১০৯১
মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৩৫৬২
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস
নং-১৯৮৪৬
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৯৫২
৫ ও ৬ এর উত্তর
এ প্রশ্নটি একটি বোকামীসূলভ প্রশ্ন। দ্বীন
প্রচারের পদ্ধতি ও মূলনীতি সম্পর্কে
অজ্ঞতার পরিচয়বাহী এসব প্রশ্নাবলী।
তাবলীগের চিল্লা, তিন দিন, এক সাল।
গাস্ত ইত্যাদীর সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি যদি
বেদআত হয়। তাহলে মাদরাসার একাডেমিক
পদ্ধতি কেন বেদআত নয়? ক্লাসিক্যাল
পদ্ধতিতে কেন মাদরাসাগুলোতে একের পর
এক কিতাব পড়ানো হয়? এ পদ্ধতিতে কি
রাসূল সাঃ দ্বীন শিখিয়েছেন? ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়, আরবী বিশ্ববিদ্যাল,
জামিয়াগুলোর পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর
সনদ প্রদানও একটি বিদআত সাব্যস্ত হবে।
কারণ এমন পদ্ধতিতে রাসূল সাঃ কুরআন
হাদীস শিক্ষা দেন নি। এগুলোকে বেদআত
বলাটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? না
চূড়ান্ত পর্যায়ের আহমকীর নিদর্শন হবে
এরকম প্রশ্ন করা?
তাবলীগ জামাআত কোন নতুন দল বা
সংগঠনের নাম নয়, বরং নবী করীম সাঃ এর
তিরোধানের পূর্ব থেকেই বিদায় হজ্বের পর
থেকে ব্যাপক হারে সাহাবায়ে কিরাম
রাঃ এবং রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর পর থেকে
নিয়ে প্রত্যেক যুগেই কমবেশি সম্মিলিত ও
বিচ্ছ্ন্নিভাবে দাওয়াতের এ দায়িত্ব
পালিত হয়ে আসছিল।
হযরত ইলিয়াস রহঃ ব্যাপক আকারে ও
সংগঠিতরূপে সেটির পুনঃজাগরণের চেষ্টা
করেছেন মাত্র। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই
যেমন কর্মধারা ও সূচি থাকে, তিনিও
তেমনি এ জামাতের জন্য কিছু কর্মধারা
তৈরী করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য
প্রাথমিকভাবে অধিক উপকারী ও জরুরী
বিষয় চিন্তা করে। পূর্ণ শরীয়তকে সামনে
রেখে এর মাঝে কোন বিষয়গুলো প্রথমে
আমলে আনতে পারলে পূর্ণ শরীয়তের উপর
পাবন্দ হওয়া সহজ হয়ে যাবে তা চিন্তা
করে একটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন। এরই
অন্তর্ভূক্ত ৬ গুণ, ৩ দিন, এক চিল্লা, তিন
চিল্লা, গাস্ত, ইত্যাদী। যা কোনভাবেই
শরীয়তের গন্ডির বাহির থেকে নয়। সেই
সাথে শরয়ী কোন হুকুমকে অস্বিকার করে
নয়।
যেমন বর্তমান মাদরাসা শিক্ষা শরীয়তের
মাঝে নতুন কোন সংযোজন নয়, বরং
সাহাবায়ে কিরামের মাঝে আসহাবে
সুফফার যে জামাআত সার্বক্ষণিক দ্বীন
চর্চায় নিমগ্ন থাকতেন সেটাই ছিল সর্ব
প্রথম মাদরাসা। যদিও বর্তমান মাদরাসা
পদ্ধতি আর আসহাবে সুফফার মাদরাসার
মাঝে পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে।
মৌলিকত্বে কোন পার্থক্য নেই। সে সময়
কোন সিলেবাস ছিল না। ছিল না কোন
ক্লাসিক্যাল অবকাঠামো। ছিল না
সার্টিফিকেট দেওয়ার পদ্ধতি। ছিল না
বিধিবদ্ধ শিক্ষক ষ্টাফের কোন মূলনীতি।
কিন্তু পরবর্তীতে আম ফায়দার জন্য এবং
দ্বীন চর্চায় অধিক উপকার অর্জনের
নিমিত্তে একটি একাডেমিক পদ্ধতি
আবিস্কার করা হয়েছে। যে আবিস্কার
কোন বিদআত নয় মর্মে সকল ওলামায়ে
কিরাম একমত। তেমনি তাবলীগ
জামাআতের বর্তমান সাংগঠনিক ভিত্তি
হিসেবে কিছু মূলনীতি নির্ধারণও কোন
নতুন বিষয় নয়, বা বিদআত নয়। কারণ
মাদরাসা শিক্ষার বর্তমান পদ্ধতিকে
যেমন আমরা সওয়াবের কাজ মনে করি না,
কিন্তু ইলমী দ্বীন চর্চাকে জানি সওয়াবের
কাজ। তেমনি তাবলীগ জামাআতের
পদ্ধতিটা মূলত সওয়াবের কারণ নয়, বরং এর
দ্বারা যে কাজটি আঞ্জাম দেয়া হয় তথা
তাবলীগ সেটি হল সওয়াবের কাজ। এ
দু’টিতে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং
তাবলীগ জামাআতকে দ্বীন এর মাঝে নতুন
সংযোজন বলে বিদআত সাব্যস্ত করাটা
বিদআতের সংজ্ঞা ও দ্বীন সম্পর্কে চূড়ান্ত
পর্যায়ের অজ্ঞতার পরিচায়ক। কারণ
বিদআত বলা হয়
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ- ‏« ﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺪَﺙَ ﻓِﻰ ﺃَﻣْﺮِﻧَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﻬُﻮَ ﺭَﺩٌّ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল
সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমাদের দ্বীনের
মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিস্কার করে
যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যাজ্য।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬০৮, সহীহ
বুখারী, হাদিস নং-২৫৫০, সহীহ
মুসলিম-৪৫৮৯}
এই হাদিসে লক্ষ্য করুন কি কি শর্তে নব
আবিস্কৃত বস্তুকে পরিত্যাজ্য বলেছেন
নবীজী সাঃ।
১-সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম
প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন
বিষয় হতে হবে।
২-দ্বীনী বিষয় হতে হবে। সুতরাং দ্বীনী
বিষয় ছাড়া যত নতুন বিষয়ই আবিস্কারই
হোকনা কেন তা বিদআত নয়। যেমন
বৈজ্ঞানিক আবিস্কার। নতুন নতুন আসবাব
ইত্যাদী। এসব বিদআত নয়। কারণ এসব
দ্বীনী বিষয় নয়। বরং বৈষয়িক বিষয়।
৩-দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার হতে হবে।
দ্বীনের জন্য হলে সমস্যা নাই। কারণ
দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার মানে হল
এটা সওয়াবের কাজ। সুন্নাত, ওয়াজিব
ইত্যাদী। আর দ্বীনের জন্য হলে সেটা মূলত
সওয়াবের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজের
সহায়ক। যেমন মাদরাসা শিক্ষা
একাডেমিক পদ্ধতি নববী যুগে ছিলনা।
পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে। এই
একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন
আবিস্কার নয়, বরং দ্বীনী কাজের জন্য
সহায়ক হিসেবে আবিস্কার হয়েছে। অর্থাৎ
দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা
সওয়াবের কাজ। কিন্তু সিষ্টেমটা মূলত
সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক। তেমনি
তাবলীগের বর্তমান পদ্ধতিটি ইলিয়াস রহঃ
আবিস্কার করেছেন দ্বীন প্রচারের সহায়ক
হিসেবে। তথা দ্বীনের জন্য আবিস্কার।
দ্বীন মাঝে আবিস্কার নয়। তাই এটি
বিদআত হওয়ার কোন সুযোগই নেই।
যারা বলেন এ পদ্ধতি বিদআত, তারা মূলত
দ্বীন সম্পর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার পরিচয় দেন
এসব কথা বলে।
তাবলীগ জামাআতের কাজ যেহেতু রাসূল
সাঃ ও পরবর্তী সাহাবায়ে কিরামের
প্রচার করা দ্বীন প্রচারেরই একটি সুসংহত
রূপ মাত্র। তাই তাবলীগ জামাআতের
কাজের সাথে সেসব ফযীলত শামিল হবে
যা কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত দ্বীন প্রচারের
ফযীলত। যেমন দ্বীন শিক্ষার ফযীলত
প্রাপ্ত হবে বর্তমান একাডেমিক পদ্ধতিতে
পড়াশোনা করা মাদরাসা ছাত্ররা।
৭ নং এর উত্তর
তাবলীগী সাথি ভাইরা বয়ান বা দাওয়াত
দেওয়ার সময় সরাসরি কুরআন সুন্নাহের
সরাসরি উদ্ধৃতি না দিয়ে তারা মুরব্বীরা
বলেছেন বলাটা একটি প্রশংসনীয় পদ্ধতি।
এটাকে সমালোচনার প্লাটফর্ম
বানানোটাও বিদ্বেষমূলক করা হয়েছে।
কুরআন হাদীস খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। যে
ইচ্ছে সে, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে তা
বলাটা একদম অনুচিত। দু’ লাইন বাংলা
অনুবাদ পড়ে শাইখ সাজার কুশিক্ষা
তাবলীগে শিক্ষা দেয়া হয় না। কুরআন ও
হাদীস বর্ণনায় আদব ও সতর্কতার প্রতি
লক্ষ্য করেই এ পদ্ধতিতে কথা বলে থাকেন
তাবলীগী ভাইয়েরা।
আর এ পদ্ধতি সাহাবাদের থেকেই প্রাপ্ত।
এরকম অনেক সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন
যারা রাসূল সাঃ বলেছেন একথা সরাসরি
বলতে খুবই ভয় পেতেন। তাই এমনিতে
মাসআলা বলে দিতেন কিন্তু একথা রাসূল
সাঃ বলেছেন একথা সরাসরি বলতেন না।
আল্লাহর নবীর দিকে মিথ্যার নিসবত
হওয়ার ভয়ে। যেমন-
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﻟﻠﺰﺑﻴﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﻮﺍﻡ ﻣﺎ ﻟﻲ ﻻ ﺃﺳﻤﻌﻚ
ﺗﺤﺪﺙ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻛﻤﺎ ﺃﺳﻤﻊ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ
ﻭﻓﻼﻧﺎ ﻭﻓﻼﻧﺎ ؟ ﻗﺎﻝ ﺃﻣﺎ ﺇﻧﻲ ﻟﻢ ﺃﻓﺎﺭﻗﻪ ﻣﻨﺬ ﺃﺳﻠﻤﺖ . ﻭﻟﻜﻨﻲ ﺳﻤﻌﺖ ﻣﻨﻪ
ﻛﻠﻤﺔ . ﻳﻘﻮﻝ ‏( ﻣﻦ ﻛﺬﺏ ﻋﻠﻲ ﻣﺘﻌﻤﺪﺍ ﻓﻠﻴﺘﺒﻮﺃ ﻣﻘﻌﺪﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ )
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর রাঃ
তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি
হযরত জুবাইর বিন আওয়াম রাঃ কে একদা
জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনার কি হল?
আপনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ ও
অন্যান্যদের মত রাসূল সাঃ থেকে কোন
হাদীস কেন বর্ণনা করেন না? তখন তিনি
বললেন-শোন! আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর
রাসূল সাঃ থেকে পৃথক হইনি। [অর্থাৎ রাসূল
সাঃ থেকে আমি অনেক হাদীসই শুনেছি,
কিন্তু আমি বর্ণনা করিনা কারণ হল] কিন্তু
আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যে
ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছেকৃত মিথ্যার নিসবত
করবে সে তার বাসস্থান জাহান্নামকে
বানিয়ে নিবে। [এ ভয়ে আমি হাদীস বর্ণনা
করি না। ]
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৬
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৫৩
তো সাধারণ মানুষ সরাসরি কুরআন
হাদীসের কথা না বলে মুরুব্বীরা বলেছেন
বলাটা কি অধিক নিরাপদ বক্তব্য নয়?
এটাতো প্রশংসনীয় পদ্ধতি। এটাকে
সমালোচনা করার কি হল?
আল্লাহ তাআলা তাবলীগ জামাতের মত
মকবুল জামাতের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র
নস্যাৎ করে এর দ্বারা সকল মানুষের আরো
বেশি দ্বীনের খিদমাত আঞ্জাম দেওয়ার
তৌফিক দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সব ধরনের যাদু-টোনা ও বান কাটার সহজ আমল

ফাজায়েলে আমাল নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন

জুলকারনাইন